প্রীতম সাহা
বাড়ি থেকে বলে বেরিয়েছিলেন, ‘‘এই আসছি।’’ ঘণ্টাখানেকের মধ্যে খবর আসে, সেই ছেলেই বাইক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে।
হাসপাতালে ছেলের দেহ সনাক্ত করার সময়ে সদ্য সন্তানহারা বাবা ঠিক করেন, উনিশ বছরের তরতাজা ছেলেটার স্মৃতিটুকু অন্তত ধরে রাখতে হবে যে কোনও উপায়ে। মৃত ছেলের চক্ষুদানের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন বাবা। সেই মতো পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হয় দ্রুত।
মঙ্গলবার সকালে দুর্ঘটনাটি ঘটে বসিরহাটের সোনপুকুরের কাছে টাকি রোডে। প্রীতম সাহা (১৯) নামে ওই তরুণ মোটর বাইকে চালাচ্ছিলেন। ট্রাকের ধাক্কায় জখম হন তিনি। বসিরহাট জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। ট্রাক চালককে আটক করেছে পুলিশ।
উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করছিলেন প্রীতম। বসিরহাটের ছোট জিরাকপুরে বাড়ি তাঁদের। বাবা প্রদীপকুমার সাহা বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার ঠিকাকর্মী। এক মেয়ে অনুরাধা ছোট।
বসিরহাট থানা চত্বরে দাঁড়িয়ে প্রদীপবাবু এ দিন বলেন, ‘‘বন্ধুর বাড়ি যাবে বলে ভোরবেলা বেরোল। বলে গেল, একটু পরেই ফিরবে। তারপরে শুনি এই ঘটনা। ভাবলাম, ছেলেটাকে তো বাঁচাতে পারলাম না, ওর স্মৃতিকে যদি কোনও ভাবে ধরে রাখা যায়।’’ মা যমুনাদেবীরও আপত্তি ছিল না মৃত ছেলের চক্ষুদানের প্রস্তাবে।
এত বড় বিপদের মুহূর্তে প্রদীপবাবুর মনে এসেছিল আর এক সন্তানহারা বাবার কথা। চন্দ্রশেখর রায়। বসিরহাটেরই মানুষ। তাঁর সতেরো বছরের ছেলে স্বর্ণেন্দু কয়েক মাস আগে মোটর বাইক দুর্ঘটনায় মারা যায়। ছেলের মৃত্যুর পরে চন্দ্রশেখরবাবু সিদ্ধান্ত নেন দেহদানের। সেই মতো স্বর্ণেন্দুর দেহ দান করা হয় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
সেই স্বর্ণেন্দুকে নিয়ে তার বন্ধুরা একটি ছোট দৈর্ঘ্যের ছবি বানিয়েছে। বসিরহাটেরই একটি প্রেক্ষাগৃহে সেই ছবি গত দেড় সপ্তাহ ধরে দেখানো হচ্ছে। সে সব কথা কী মনে এসেছিল? প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘নাম-ধাম মনে না থাকলেও ঘটনাটা মনে ছিল। আমারও মনে হয়, ছেলের চোখ দু’টো অন্তত দান করলে কেমন হয়। দ্রুত সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি।’’
যোগাযোগ করা হয় স্থানীয় সেবায়ন চক্ষু সংগ্রহকেন্দ্রের সঙ্গে। সেখানকার চিকিৎসকেরা প্রীতমের চোখ দু’টি কলকাতার মেডিক্যাল কলেজে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
স্বর্ণেন্দুর আজ, বুধবার থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার কথা ছিল। তার বাবা চন্দ্রশেখরবাব, মা সুজাতা রায়রা বলেন, ‘‘সন্তান হারানোর ব্যথা সব বাবা-মায়ের কাছেই এক রকম। আমরা প্রীতমের বাবা-মায়ের প্রতি সমব্যথী। ওঁরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’’ চন্দ্রশেখরবাবুর কথায়, ‘‘আমাদের ছেলেদের অঙ্গ যাঁদের শরীরে প্রতিস্থাপিত হয়েছে, তাঁদের সঙ্গে প্রশাসন যদি নিয়মিত যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দেয়,তা হলে ভাল।’’