পানিহাটিতে পানীয় জলের দাবিতে অনশনে বাসিন্দারা। —নিজস্ব চিত্র।
পানীয় জলের দাবিতে আগেও পর পর দু’দিন রাস্তা অবরোধ করেছিলেন বাসিন্দারা। ভোট বয়কটের হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন। তা-ও সমস্যা মেটেনি। অগত্যা লোকসভা ভোটের আবহে শনিবার জলের দাবিতে অনশনে বসলেন পানিহাটির বাসিন্দারা।
তবে, বাসিন্দাদের দাবিকে সমর্থন জানালেও পরস্পরবিরোধী কথা বলছেন স্থানীয় বিধায়ক ও পুরপ্রধান। তৃণমূলের বিধায়ক নির্মল ঘোষ বলছেন, ‘‘পুরপ্রধান অসুস্থ, এ বার আমাকেই হস্তক্ষেপ করতে হবে।’’ আর পুরপ্রধান মলয় রায়ের কথায়, ‘‘বিধায়ক সব জায়গায় আমার অসুস্থতার কথা বলছেন। কিন্তু ব্যর্থতা খুঁজে বার করতে পারছেন না।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘পুরসভার সামগ্রিক ব্যর্থতার দায় তো বিধায়কেরও। এ সব করে উনি দলকে বিড়ম্বনায় ফেলছেন।’’ এমন তরজায় স্বাভাবিক ভাবেই অস্বস্তিতে পড়েছেন স্থানীয় পুরপ্রতিনিধিরা। আর বিরোধীদের মন্তব্য, ‘‘সমস্যা মেটানোর নাম নেই। শুধু দোষারোপের পালা চলছে। সবই ক্ষমতা দখলের লড়াই।’’
পানিহাটির কয়েকটি ওয়ার্ডে দীর্ঘদিন ধরেই পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। গরমে অন্যান্য ওয়ার্ডের পাশাপাশি সেখানে এই সমস্যা আরও বেড়েছে। তার মধ্যে মারাত্মক অবস্থা ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের। সেখানকার সুনীত ব্যানার্জি রোড, মহম্মদ কালাচাঁদ রোড, পূর্বাঞ্চল, দ্বারিক ব্যানার্জি রোডের প্রায় ১০ হাজার বাসিন্দার সকলেরই অভিযোগ, শেষ কয়েক মাস ধরে বাড়িতে জল নেই। জল এলেও তা এতটাই সরু হয়ে পড়ছে যে, একটি বালতির অর্ধেকও ভর্তি হচ্ছে না। স্থানীয় বাসিন্দা বিপ্লব পাল বলেন, ‘‘জল কিনে কত দিন চালানো যায়! কেউ কিছু করছেন না। পাকাপাকি সুরাহা না হলে অনশন চলবে।’’
বাসিন্দাদের অভিযোগ, অবরোধের পরে দিন দুয়েক রাস্তার কয়েকটি কলে জল এলেও ফের অবস্থা যে কে সে-ই। পুরসভা থেকে এক-দু’টি জলের ট্যাঙ্ক পাঠানো হলেও দিনের পর দিন তা থেকে বালতি করে জল বাড়িতে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে দাবি স্থানীয়দের। এলাকারই বাসিন্দা, প্রাক্তন পুলিশ আধিকারিক, সত্তরোর্ধ্ব রঞ্জিত সরকার বালতি করে জল নিয়ে যেতে গিয়ে কোমরে চোট পেয়েছেন বলেও জানাচ্ছেন তাঁরা। অভিযোগ, গঙ্গা অ্যাকশন প্রকল্পে ভাল জল সরবরাহ করার জন্য বাড়িতে নতুন পাইপলাইন যুক্ত করতে বাসিন্দাদের থেকে কয়েক হাজার টাকা করে নেওয়া হলেও কোনও লাভ হয়নি। তাই এ বার বাসিন্দারা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে অনশন করতে শুরু করেছেন। তাঁদের দাবি, পুর কর্তৃপক্ষ বা বিধায়ককে এসে লিখিত ভাবে জানাতে হবে যে, কবে এই জলের সমস্যা মিটবে।
মলয় জানাচ্ছেন, সিপিএমের আমলে ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে যে পাম্প বসানো হয়েছিল, দু’বছর ধরে তা খারাপ হয়ে রয়েছে। বেশ কয়েক মাস আগে বোর্ড মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, ২৮, ২৯ ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে নতুন পাম্প বসানো হবে। তিনি বলেন, ‘‘জলের ইঞ্জিনিয়ার সব বিভাগের কাজ দেখেন। তাতেই এই বেহাল অবস্থা।’’ আর নির্মল বলছেন, ‘‘নতুন জল প্রকল্প হয়েছে, তাতে সর্বত্র জলের সমবণ্টন। একটু সময় লাগবে।’’