বিক্ষোভ: স্কুলে। নিজস্ব চিত্র
পরীক্ষার্থীরা লেখার জন্য যে বোর্ড সঙ্গে রাখেন, তা স্বচ্ছ-প্লাস্টিকের না হলে পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলায় পুলিশ ও স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অভিভাবকদের বচসা, ধাক্কাধাক্কি বাধল। কান্নাকাটি পড়ে যায় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের মধ্যে। কারও কারও অভিভাবক শেষ মুহূর্তে বোর্ড কিনতে দোকানে ছোটেন। গোলমালের মাঝে পড়ে দুই পরীক্ষার্থী জ্ঞানও হারায়।
মঙ্গলবার, মাধ্যমিক পরীক্ষার শুরুর দিন বসিরহাট হাইস্কুলের সামনে এই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায়। প্রশাসনের ভূমিকায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন অভিভাবকেরা।
পুলিশ-প্রশাসন ও স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, বসিরহাট হাইস্কুলের কেন্দ্রে ৭টি স্কুলের ৫৫৭ জন পরীক্ষার্থীর সিট পড়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে হঠাৎ জানানো হয়, পরীক্ষা কেন্দ্রে ছবি আঁকা, লেখা বোর্ড চলবে না। স্বচ্ছ প্লাস্টিকের বোর্ড নিয়ে যাওয়া যাবে। পরীক্ষা শুরুর মুখে এ কথা শুনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন পরীক্ষার্থী এবং অভিভাবকেরা। বোর্ড জোগাড়ের জন্য অভিভাবকদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়।
এ দিকে, তাড়াহুড়োয় তিন অভিভাবক বাইক, সাইকেলের ধাক্কায় আহত হন। সঙ্গী না থাকায় কী ভাবে বোর্ড জোগাড় হবে, তা ভেবে কান্নায় ভেঙে পড়ে কয়েকজন পরীক্ষার্থী। তাদের মধ্যে দু’জন জ্ঞান হারায়।
শেষে পুলিশ গিয়ে বুঝিয়ে কোনও রকমে পরিস্থিতি সামাল দেয়। প্রধান শিক্ষক স্বপন রায় বলেন, ‘‘পর্ষদের নির্দেশ মতো পরীক্ষার্থীদের স্বচ্ছ বোর্ড আনার কথা বলা হলেও কোনও কোনও পরীক্ষার্থী তা করেনি। ফলে সমস্যা বাড়ে। ভুল বোঝাবুঝির জন্য কিছু অভিভাবক এবং পরীক্ষার্থীর ক্ষোভ থাকতে পারে। তবে যে যা বোর্ড এনেছিল, তা নিয়েই পরীক্ষা দিতে পারবে— এ কথা বলায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।’’ বুধবার পর্ষদের নিয়মাবলী পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে টাঙিয়ে দেওয়া হবে বলে
জানান তিনি। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বসিরহাট মহকুমা কনভেনর দেবদাস সরকার বলেন, ‘‘বোর্ড নিয়ে ঝামেলা হয় বলে শুনেছি। পর্ষদের নিয়ম আগে থেকে প্রতিটি স্কুলকে জানানো সত্ত্বেও এমন ঘটনা কাঙ্খিত নয়। ঘটনাটি পর্ষদকে জানানো হয়েছে।’’
পম্পা ঘোষ নামে এক অভিভাবক আবার বলেন, ‘‘সুযোগ বুঝে দোকানিরা ৪০ টাকার বোর্ড ১৪০ টাকায় বিক্রি করেছে।’’ অভিভাবকদের পক্ষে রিম্পা চক্রবর্তী, তপতী দাস, তৃপ্তি বন্দ্যোপাধ্যায়, ভানু চক্রবর্তী, তরিকুল সরকাররা বলেন, ‘‘ স্কুলের পাশে রাস্তায় পরীক্ষার সময়ে যান চলাচল বন্ধ করা হয়নি। কাছেই পুরসভা থাকা সত্ত্বেও পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। স্বচ্ছ বোর্ড না হলে পরীক্ষা দিতে পারবে না বলায় পরীক্ষার্থীরা অনেকে কান্নাকাটি শুরু করে। বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।’’ অভিভাবকদের বক্তব্য, জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা দিতে এসে এমন পরিস্থিতিতে পড়ে অনেক পড়ুয়াই দিশেহারা হয়ে পড়ে। প্রশাসনের দফতরগুলির মধ্যে কোনও সমন্বয় না থাকায় ফল ভুগতে হল পরীক্ষার্থীদের।’’ পানীয় জলের পরিষেবা নিয়ে তাঁকে কিছু বলা হয়নি বলে দাবি করেন পুরপ্রধান তপন সরকার।
বসিরহাট পুলিশ জেলার সুপার কঙ্করপ্রসাদ বাড়ুই বলেন, ‘‘পরীক্ষা যাতে সুষ্ঠু ভাবে হয়, সে জন্য সব পক্ষকে নিয়ে একাধিকবার মহকুমাশাসকের দফতরে বৈঠক হওয়ার কথা নয়। আর যাতে না হয়, সে জন্য সব রকম পদক্ষেপ করা হবে।’’