নোয়াপাড়ার উপনির্বাচনে ‘একা কুম্ভ’ গার্গী

‘দিদি, ওরা আমাকে ঢুকতে দিচ্ছে না’

জোর গলায় যখন জানানো হল, তাঁর সামনেই তো স্লিপ ছাড়াই ভোট  দেওয়ার অভিযোগ উঠছে! তখন ওই ব্যক্তির জবাব, “হ্যাঁ, সমস্ত অভিযোগ আমি উপরমহলে জানিয়েছি।

Advertisement

সুপ্রকাশ মণ্ডল

নোয়াপাড়া শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:২৯
Share:

চলছে ভোট। মায়ের অপেক্ষায় শিশু। নিজস্ব চিত্র

ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ১টা। খবর এল পলতা লকগেটের নির্বাচন কেন্দ্রে বাবনপুর, বীরনগরের ভোটারদের বহিরাগতরা ঢুকতে দিচ্ছে না। তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে ছুটলেন বাম প্রার্থী গার্গী চট্টোপাধ্যায়। তাঁকে দেখে বুথের বাইরে ছুটে এলেন এক মহিলা। জানালেন, তাঁর স্বামী রমেশ বিশ্বাস সিপিএমের পোলিং এজেন্ট। বহিরাগতরা তাঁকে হুমকি দিচ্ছে।

Advertisement

গার্গী বুথে ঢুকতেই রমেশের ‘আর্তনাদ’, “স্লিপ ছাড়াই ভোট দেওয়া হচ্ছে। দিদি, আমাকে বুথ থেকে বের দেওয়া হয়েছে।” ‘ক্ষুব্ধ’ গার্গীকে দেখে এ বার যিনি ছুটে এলেন, তিনি নিজের পরিচয় দিলেন মাইক্রো অবজার্ভার বলে। সব শুনে তাঁর অবশ্য বক্তব্য— ‘‘কই, কোথাও তো কিছু হয়নি!”

জোর গলায় যখন জানানো হল, তাঁর সামনেই তো স্লিপ ছাড়াই ভোট দেওয়ার অভিযোগ উঠছে! তখন ওই ব্যক্তির জবাব, “হ্যাঁ, সমস্ত অভিযোগ আমি উপরমহলে জানিয়েছি। নির্দেশ এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Advertisement

সোমবার এমন বিশৃঙ্খলার ছবিই দেখা গেল নোয়াপাড়া বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন ঘিরে। এ দিন সকালের দিকে বুথে বুথে ভোটারদের লাইন থাকলেও বেলা বাড়তেই ভিড় কমতে শুরু করে। বেলা গড়াতে না গড়াতে অভিযোগের বন্যা বইয়ে দিয়েছেন সিপিএম, বিজেপি এবং কংগ্রেসের প্রার্থীরা।

দুপুর ২টো নাগাদ দলবল নিয়ে ব্যারাকপুর এসডিও অফিসে হাজির হন কংগ্রেস প্রার্থী গৌতম বসু এবং বিজেপি প্রার্থী সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। মহকুমা শাসক পীযূষ গোস্বামীর কাছে অভিযোগ করেন, ‘‘আমাদের তো ভোটই করতে দেওয়া হল না। কোথাও এজেন্টদের বসতে দেওয়া হয়নি। ভোটারদের বুথের ধারে কাছেও যেতে দেওয়া হচ্ছে না। সব বুথেই পুনর্নিবাচন চাই।’’

বহিরাগতদের দাপাদাপির প্রতিবাদে এদিন দুপুরে বারাসতে চাঁপাডালির মোড়ে কিছুক্ষণ অবরোধ করে বামেরা। সাংবাদিক সম্মেলনে সিপিএমে’র উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক গৌতম দেব বলেন, ‘‘বোমা-গুলির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারিনি। আমরা পুনর্নির্বাচন চাই।’’ তৃণমূল বিধায়ক অর্জুন সিংহ অবশ্য বলছেন, “কোনও এলাকায় বাইরের লোক আসেনি।”

এ সব কিছুর মধ্যেও এ দিনের ব্যতিক্রমী চরিত্র ছিলেন সিপিএম প্রার্থী গার্গী চট্টোপাধ্যায়। ঢাল তলোয়ারহীন হয়েও ময়দান ছাড়েননি তিনি। সাধ্যমতো বুথে বুথে গিয়ে কর্মীদের মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন শেষ পর্যন্ত। এদিন গার্গী বলেন, ‘‘কালও রাত ৩টে পর্যন্ত রাস্তায় ছিলাম। ভোর ৪টে নাগাদ ভাত খেয়েছি। কিন্তু লাভ হল কই? সব ভোট তো লুঠ করে নিল!’’

‘শান্তি’র এমন ভোটের নীরব চরিত্রও আছে। এক জন নয়, দু’জন। একজন বেলার দিকে গিয়ে ভোট দিয়ে গেলেন। তৃণমূল প্রার্থীকে শুভেচ্ছাও জানালেন। তিনি মঞ্জু বসু। এক বারের বিধায়ক এবং এই আসনের গত ভোটের পরাজিত তৃণমূল প্রার্থী। আর দ্বিতীয় জন মুকুল রায়। তাঁর কথা অবশ্য এ দিন বিজেপি শিবিরেও শোনা যায়নি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement