Royal Bengal Tiger

Sunderbans Female guide: সুন্দরবন ঘুরিয়ে দেখাবেন মহিলা গাইডেরাও

গত ১৪ ও ১৫ সেপ্টেম্বর সুন্দরবনের বালি দ্বীপে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ঘরে দু’দিনের গাইড প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

Advertisement

প্রসেনজিৎ সাহা 

দক্ষিন ২৪ পরগনা শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৭:২০
Share:

ফাইল চিত্র।

দীর্ঘদিন ধরে সুন্দরবনের মহিলাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের দাবি উঠেছে। ইতিমধ্যেই বন দফতর মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করে তাঁদের মৌমাছি পালনের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজের ব্যবস্থা করেছে। এ বার তাঁদের নতুন কর্মসংস্থানের পথ খুলে দিল সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প। পুরুষদের পাশাপাশি গাইডের কাজে নিযুক্ত করা হচ্ছে মহিলাদের। সুন্দরবন ভ্রমণে আসা পর্যটকদের জঙ্গল ও তার জীববৈচিত্র সম্পর্কে খুঁটিনাটি তথ্য দেবেন এই মহিলা গাইডরা।

Advertisement

প্রাথমিক ভাবে চারজন মহিলাকে পরীক্ষামূলক ভাবে গাইডের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। গত ১৪ ও ১৫ সেপ্টেম্বর সুন্দরবনের বালি দ্বীপে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ঘরে দু’দিনের গাইড প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেই ৫৯ জন পুরুষ গাইডের সঙ্গে প্রশিক্ষণ নেন সাতজেলিয়ার মধুমিতা মণ্ডল, বিজয়নগরের সুমনা মণ্ডল, দয়াপুরের বীথিকা রায় ও ভাস্বতী কামিলা সরকার।

প্রশিক্ষণ শিবিরে উপস্থিত ছিলেন সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফিল্ড ডিরেক্টর তাপস দাস, ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর জোন্স জাস্টিন, অ্যাসিস্ট্যান্ট ফিল্ড ডিরেক্টর সৌমেন মণ্ডল-সহ অনেকে।

Advertisement

স্বেচ্ছাসেব সংগঠনটির পক্ষে অনিল মিস্ত্রি বলেন, ‘‘সুন্দরবনের মেয়েরা সুযোগ পেলে নিজেদের নিশ্চয়ই প্রমাণ করতে পারবেন। আমরা এই পদক্ষেপ নিয়ে খুবই আশাবাদী।’’

বন দফতর সূত্রের খবর, সুন্দরবনের পর্যটনের ইতিহাসে এই প্রথম মহিলারা ট্যুরিস্ট গাইড হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেলেন। এই চার মহিলার কারও বাবা-মা পরিযায়ী শ্রমিক, কারও স্বামী কর্মহীন। আর্থিক অনটন ওঁদের নিত্যসঙ্গী। তবে কমবেশি শিক্ষাগত যোগ্যতা রয়েছে সকলেরই।

১ অক্টোবর থেকে সুন্দরবন পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে। এই পর্যটন মরসুমেই পুরুষ গাইডদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মহিলা গাইডেরা কাজে নেমে পড়বেন।

ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফিল্ড ডিরেক্টর বলেন, ‘‘সুন্দরবনের মহিলাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের কথা মাথায় রেখে পরীক্ষামূলক ভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ওঁদের মহিলা পর্যটকদের গ্রুপে গাইড হিসেবে নিযুক্ত করার কথা ভাবা হয়েছে।’’ অ্যাসিস্ট্যান্ট ফিল্ড ডিরেক্টর বলেন, ‘‘দেশের প্রায় সমস্ত পর্যটন কেন্দ্রে পুরুষ গাইডদের পাশাপাশি মহিলারাও কাজ করছেন। সুন্দরবনের ক্ষেত্রেও এ বার সেই পদক্ষেপ করা হল।’’

গোসাবার বিজয়নগরের বাসিন্দা সুমনার বাবা-মা দু’জনেই পরিযায়ী শ্রমিক। সুমনা বিএ তৃতীয় বর্ষের পড়া শেষ করেছেন। গাইড হিসেবে কর্মজীবন শুরুর সুযোগ পেয়ে যথেষ্ট উৎসাহিত তিনি। তিনি বলেন, ‘‘আমি সুন্দরবনের ভূমিকন্যা। এখানকার নোনা জল, সোঁদা মাটিকে রন্ধ্রে রন্ধ্রে চিনি। আশা করি এ কাজে সফল হব।’’

সুমনার মতো নতুন কাজ শুরু করতে উৎসাহী মধুমিতাও। তিনি বলেন, ‘‘আমি স্নাতক। বর্তমানে কিছু ছেলেমেয়েকে পড়াই। স্বামী, ছোট সন্তান ও শ্বশুর-শাশুড়িকে নিয়ে সংসার। লকডাউনে স্বামী কাজ হারিয়েছেন। গাইড হিসেবে কাজ করে কিছু বাড়তি আয় হলে সংসারে সুরাহা হবে।’’

প্রায় একই সুর শোনা গেল ভাস্বতী ও বীথিকার কথাতেও।

তবে এখনও বন দফতরের তরফে গাইডদের জন্য আলাদা করে কোনও বেতন নেই।

যে সমস্ত পর্যটকদের দল সুন্দরবনে বেড়াতে আসেন, তাঁদের দল পিছু একজন গাইড নেওয়া বাধ্যতামূলক। ভারতীয় পর্যটকদের গাইড পিছু ৬০০ টাকা এবং বিদেশি পর্যটকদের গাইড পিছু ১২০০ টাকা দিতে হয়।

এই টাকাই মূলত গাইডদের রোজগার। সুন্দরবন ভ্রমণে সারা বছর পর্যটকদের আনাগোনা লেগে থাকলেও শীতের মরসুমে প্রচুর পর্যটক আসেন। সেই সময় গাইডদেরও রোজগার বাড়ে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement