ফাইল চিত্র।
২০০৯ সালে আয়লা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গিয়েছিল সুন্দরবনের উপকূলবর্তী এলাকার মাটির বাঁধগুলি কতটা ঠুনকো। সে বার দুই ২৪ পরগনা মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার নদীবাঁধ ভেঙেছিল। এরপরেই কংক্রিটের বাঁধের দাবি জোরদার হয়। কিন্তু প্রশাসনের ব্যর্থতায় সেই বাঁধ আর তৈরি হয়নি। গত বছর আমপানে আবার বাঁধ ভেঙে ভাসে গ্রামের পর গ্রাম। আমপানের একবছর পরেও সুন্দরবনের বাঁধ-চিত্রে বিশেষ কোনও পরিবর্তন আসেনি। বহু জায়গায় সেই জোড়াতালি দেওয়া মাটির বাঁধই ভরসা এখনও। বড় ঝড় এলে আবার ভাসতে হবে, ধরেই রেখেছেন উপকূলের মানুষজন।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবা, কুলতলি, পাথরপ্রতিমা, নামখানা, সাগর, কাকদ্বীপ ব্লকের বহু বাঁধ ঝড়ে ভেঙে যায়। সেই সময়ে মাটির বাঁধে মাটি ফেলেই মেরামত করে দেয় সেচ দফতর। তবে পাকাপাকি বাঁধ হয়নি প্রায় কোথাও। গত এক বছরে অমাবস্যা-পূর্ণিমার কটালেই অনেক জায়গায় সেই বাঁধ ভেঙে জল ঢুকেছে গ্রামে। ভারী বৃষ্টি হলেও অনেক জায়গায় বাঁধ ভেঙে গ্রাম ভাসতে পারে বলে আশঙ্কা গ্রামবাসীদের।
নামখানার মৌসুনি পঞ্চায়েত-সহ কয়েকটি জায়গায় আমপানের ভাঙা বাঁধের মেরামতটুকুও হয়নি। ভরা কটালে নোনা জল ঢুকে এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, সাগর, পাথরপ্রতিমার কয়েকটি জায়গায় কংক্রিটের বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে।
বাঁধ ভেঙে ক্ষতি হয় উত্তর ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকাতেও। পরে মেরামত করা হয় সেই বাঁধ। অধিকাংশ জায়গাতেই জল বাড়লে যে কোনও সময়ে বাঁধ ভাঙতে পারে বলে আশঙ্কা গ্রামবাসীদের। স্থানীয় সূত্রের খবর, হাসনাবাদ, হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি, মিনাখাঁর বিভিন্ন এলাকায় রায়মঙ্গল, ইছামতী, বেতনি, বিদ্যাধরী নদীর বাঁধ দুর্বল হয়ে আছে। কোথাও কোথাও নদী বাঁধের উপরে পলিথিন চাপিয়ে ভাঙন সামাল দেওয়া হয়েছে। সন্দেশখালি ১ ব্লকের ন্যাজাট ১ পঞ্চায়েত এলাকায় প্রায় ১.৮ কিলোমিটার নদী বাঁধ অবশ্য কংক্রিটের হচ্ছে। উপকূল এলাকার বহু মানুষ জানেন, পুরোপুরি কংক্রিটের বাঁধ তৈরি না হলে বানভাসির এই ছবি বদলাবে না। অভিযোগ, তবু হেলদোল নেই প্রশাসনের। এর মধ্যেই নতুন করে ঘূর্ণিঝড়ের ভ্রূকুটি দেখা দিয়েছে। সুন্দরবনের মানুষ বলছেন, বাঁধের যা পরিস্থিতি, তাতে আয়লা বা আমপানের মতো ঝড় হলে সব কিছু ভেসে যাবে। রাজ্যের প্রাক্তন সেচমন্ত্রী সুভাষ নস্কর বলেন, “আয়লার পরে কংক্রটির বাঁধের জন্য কেন্দ্র টাকা মঞ্জুর করেছিল। কিন্তু সরকার ঠিক মতো কাজ না করায় টাকা ফেরত চলে গিয়েছে। ফলে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকায় বাঁধের অবস্থা খারাপ। বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটলে সুন্দরবনকে বাঁচানো কঠিন হবে।’’