হতাশ: স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের হুমকিতে পথ কুকুরদের নির্বীজকরণের কাজ বন্ধ করেছেন ওঁরা। ছবি: সুজিত দুয়ারি
পরিত্যক্ত একটি বাড়িতে শিবির করে পথ কুকুরদের নির্বীজকরণের কাজ করছিলেন একটি পশুপ্রেমী সংগঠনের সদস্যেরা। অভিযোগ, ওই শিবিরের ফলে এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে— এই অভিযোগ তুলে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ শিবিরে চড়াও হয়। সংগঠনের সদস্যদের তারা কাজ বন্ধের হুমকি দেয়। মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ। প্রহৃতদের মধ্যে কয়েকজন মহিলাও আছেন।
রবিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে। ‘অ্যানিম্যাল লার্ভার্স গ্রুপ অব অশোকনগর-হাবড়া’ নামে ওই সংগঠনের প্রতিনিধিরা অশোকনগর থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। পুলিশ জানায়, তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে সোমবার রাত থেকে শিবির বন্ধ করে দিয়েছেন সংগঠনের সদস্যেরা।
সংগঠনের সূত্রের খবর, তাঁরা অনেকদিন ধরেই পথ কুকুরদের নিয়ে কাজ করছেন। ১০ জুলাই সংগঠনের পক্ষ থেকে অশোকনগরের পথ কুকুরদের সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে একটি শিবির করা হয়। সেখানে বন দফতরের কর্তারা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অশোকনগর-কল্যাণগড়ের পুরপ্রধান প্রবোধ সরকার।
সংগঠনের সম্পাদক মৌ মণ্ডল বলেন, ‘‘ওই দিন আমরা ৫০টি পথ কুকুরকে টিকা দিয়েছিলাম, যাতে জলাতঙ্ক না ছড়ায়। পথ দুর্ঘটনা থেকে কুকুরদের রক্ষা করতে তাদের রেডিয়াম কলার পরানো হয়েছিল। ওই দিনই আমরা ঘোষণা করি, ১২ জুলাই থেকে কুকুরদের নির্বীজকরণ করতে শিবির করা হবে।’’
সংগঠন সূত্রে জানানো হয়েছে, একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে ১২ জুলাই থেকে ওই শিবির শুরু হয়। পরিকল্পনা ছিল, অন্তত ২০টি পথ কুকুরকে নির্বীজকরণ করা হবে। এই প্রক্রিয়ায় এক একটি কুকুরকে ৭-১০ দিন শিবিরে রাখার প্রয়োজন হয়। প্রথম কয়েক দিন স্বাভাবিক ভাবেই শিবির চলে। অভিযোগ, রবিবার সকালে আচমকাই কিছু স্থানীয় বাসিন্দা সেখানে চড়াও হয়। তাঁরা দাবি করেন, এক সঙ্গে বেশি সংখ্যায় কুকুর বাড়িতে থাকায় এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। কুকুরের দল চিৎকার করছে। শিবিরেও কোলাহল হচ্ছে। রাতে ঘুমতে পারছেন তাঁরা। অনেকে অভিযোগ তোলেন, শিবিরের আড়ালে অবৈধ কাজ হচ্ছে। তাই শিবির বন্ধ করে দিতে হবে।
সংগঠনের সম্পাদক বলেন, ‘‘কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা শিবিরে এসে হুমকি দেন। অনুমতিপত্র দেখতে চান। নোংরা ভাষায় কথাবার্তা বলতে থাকেন। প্রতিবাদ করলে আমাদের কয়েকজন সদস্যকে মারধর করা হয়। এক সদস্যের গলা টিপে দেওয়ালের সঙ্গে চেপে ধরা হয়।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, বাসিন্দারা হুমকি দিয়ে জানান, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শিবির বন্ধ করা না হলে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হবে।
মৌ বলেন, ‘‘এই ঘটনায় আমরা আতঙ্কিত। সোমবার রাত থেকে শিবির বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ১১টি কুকুরকে নির্বীজকরণ করা হয়েছিল। তাদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’’
এ দিকে, স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ শিবিরটি বন্ধ করতে পুলিশ, পুরসভা, পরিবেশ দফতরে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন। অশোকনগরের বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী বলেন, ‘‘যদি কাউকে মারধর করা হয়ে থাকে, তা অন্যায়। পুলিশ পদক্ষেপ করবে। বাসিন্দাদের বক্তব্যও শুনেছি। তাঁদের দাবি, দুর্গন্ধে তাঁদের সমস্যা হচ্ছে। সকলকে পুরপ্রধানের কাছে যেতে বলেছি।’’
এ বিষয়ে পুরপ্রধান প্রবোধ সরকার বলেন, ‘‘ওই সংগঠনের সদস্যেরা ভাল কাজ করছেন। দু’পক্ষই আমার কাছে এসেছিলেন। তাঁদের জানিয়েছি, দু’পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে সমস্যার সমাধান করা হবে। তবে শিবির বন্ধ হওয়া উচিত নয়।’’