মিঠুন আইচ ও রিনিতা পাল। নিজস্ব চিত্র
মেয়ের বাপের বাড়ির লোক বিয়ে মানছেন না। নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন তাঁরা—এমনই দাবি তুলে পুলিশের দ্বারস্থ হলেন নব দম্পতি।
সোমবার সন্ধ্যায় হাবড়া থানায় এসে আইসি গৌতম মিত্রের কাছে গিয়ে তাঁরা তাঁদের নিরাপত্তা দেওয়ার অনুরোধ জানান। আইসি তাঁদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘‘আপনারা প্রাপ্তবয়স্ক। স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছেন। ভয়ের কিছু নেই। পুলিশ সব রকম ভাবে সাহায্য করবে।’’
থানায় এসেছিলেন তরুণীর বাবা- মা, আত্মীয়েরাও। পুলিশের সামনে দু’পক্ষের কথা হয়। তরুণী স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তিনি সাবালিকা। স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছেন। স্বামীর সঙ্গেই সংসার করবেন।
পুলিশকে নবদম্পতি অনুরোধ করেন, তাঁদের যেন পুলিশ নিরাপত্তায় বারাসতে ছেলের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। পুলিশ তাঁদের কথা মতো রাতে বারাসতে পৌঁছে দিয়েছে।
পুলিশের ভূমিকায় খুশি নব দম্পতি। তাঁরা জানিয়েছেন, কয়েক দিন নিরাপদ জায়গায় কাটিয়ে তারপরে বাড়ি ফিরবেন। বাড়ি ফিরতে কোনও অসুবিধা হলে পুলিশ তাঁদের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হাবড়ার পৃথিবা উন্নয়নপল্লি এলাকায় বাড়ি মিঠুন আইচ নামে এক যুবকের। পেশায় তিনি শিক্ষক। ওই এলাকাতেই বাড়ি কলেজ ছাত্রী রিনিতা পালের। রিনিতা ওই শিক্ষকের কাছে পড়তেন। বয়সের ফারাক প্রায় পনেরো দু’জনের সম্পর্ক বছর পাঁচেকের।
মিঠুনের স্ত্রী মারা গিয়েছেন। বয়সে বড়, এমন পাত্র নিয়ে আপত্তি ছিল তরুণীর বাপের বাড়ির লোকজনের। তারপরেও অবশ্য নভেম্বর মাসে রেজিস্ট্রি বিয়ে করেন মিঠুন-রিনিতা। ১৩ ফেব্রুয়ারি মন্দিরে গিয়ে সামাজিক মতেও মিঠুনকে বিয়ে করেন রিনিতা। কিন্তু তাঁদের আশঙ্কা ছিল, রিনিতার বাপের বাড়ির দিক থেকে আরও জোরাল প্রতিবাদ হতে পারে। যে কারণে বিয়ের পরে নবদম্পতি বাড়িতে না উঠে ছিলেন অন্যত্র।
১৩ ফেব্রুয়ারি বাড়ি থেকে মেয়ে চলে যাওয়ার পরে পরিবারের তরফে থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়েছিল। পুলিশ তরুণীর খোঁজে তল্লাশি শুরু করে। সোমবার সন্ধ্যায় নবদম্পতি নিজেরাই থানায় এসে উপস্থিত। নিরাপত্তার অভাবের কথা জানান পুলিশকে।
দু’বাড়ির সদস্যেরা থানায় আসেন খবর পেয়ে। পুলিশের তরফে এই পরিস্থিতিতে নিখোঁজ ডায়েরি ‘রির্টান’ করা হয়েছে।
রিনিতা বলেন, ‘‘আমরা দু’জনে দু’জনকে ভালবাসি। রেজিস্ট্রি ও সামাজিক মতে বিয়ে করেছি। বাপের বাড়ির লোকজন বিয়ে মেনে নিতে চাইছেন না। কিছু সমস্যা তৈরি হওয়ায় থানায় এসেছিলাম। পুলিশ আমাদের সাহায্য করেছে। আশা করছি, বাবা-মা বিয়ে মেনে নেবেন।’’ মিঠুন বলেন, ‘‘যাতে নির্ভয়ে বাড়ি ফিরতে পারি, সে জন্য পুলিশের সাহায্য চেয়েছিলাম।’’ তরুণীর শাশুড়ি শ্যামলি অবশ্য বৌমাকে দেখে খুশি। তাঁর কথায়, ‘‘বৌমাকে খুব পছন্দ হয়েছে। আশা করি যা সমস্যা আছে, মিটে যাবে।’’
তরুণীর বাপের বাড়ির লোকজন অবশ্য এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।