ফেসবুকেও চলছে ভোট নিয়ে আলোচনা

প্রথম বার ইভিএম মেশিনের বোতাম টিপবেন ওরা। সেই নিয়েই কেউ আছেন একটু টেনশনে। কেউ ফুটছেন উত্তেজনায়। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় বা ফেসবুকের ওয়ালে জমে উঠেছে রাজনীতির আলোচনা। সব মিলিয়ে উত্তর ২৪ পরগনার গাড়ুলিয়া পুরসভার একঝাঁক নতুন ভোটার রাজনীতির আঁচে গা সেঁকতে শুরু করেছেন। প্রত্যেকেই জানিয়ে দিচ্ছেন, নিজেদের নাগরিকত্বের অধিকার কোনও ভাবেই তাঁরা নষ্ট করতে চান না তাঁরা।

Advertisement

মৌ ঘোষ

গাড়ুলিয়া শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৩১
Share:

উপরে বাঁ দিক থেকে এষা বসু, সত্যজিৎ সরকার, রিঙ্কু গুপ্ত, তিথি হাজরা ও জয়িতা চৌধুরী। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

প্রথম বার ইভিএম মেশিনের বোতাম টিপবেন ওরা। সেই নিয়েই কেউ আছেন একটু টেনশনে। কেউ ফুটছেন উত্তেজনায়। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় বা ফেসবুকের ওয়ালে জমে উঠেছে রাজনীতির আলোচনা। সব মিলিয়ে উত্তর ২৪ পরগনার গাড়ুলিয়া পুরসভার একঝাঁক নতুন ভোটার রাজনীতির আঁচে গা সেঁকতে শুরু করেছেন। প্রত্যেকেই জানিয়ে দিচ্ছেন, নিজেদের নাগরিকত্বের অধিকার কোনও ভাবেই তাঁরা নষ্ট করতে চান না তাঁরা।

Advertisement

ইংরেজি অনার্সের প্রথম বর্ষের ছাত্রী এষা বসু। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ওই তরুণী বলেন, ‘‘ভোটার কার্ড হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নাগরিকত্বের বোধ হচ্ছে। মনে হচ্ছে এখন আমিও অন্যদের মতো একজন।’’ ভোটের দিন সাদা চুড়িদার-কুর্তা পড়ে লাইনের প্রথমে দাঁড়িয়ে সবার আগে ভোট দিতে চান এষা। তার পরে বাড়ি ফিরে বন্ধুদের সঙ্গে সিনেমা দেখে দিনটি কাটানোর ইচ্ছে, জানালেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘এলাকায় একটি খেলার মাঠ আছে। কিন্তু তাঁর পরিকাঠামোর দিকে সে ভাবে নজর দেওয়া হয় না। ফলে ছেলেমেয়েদের মধ্যে খেলার প্রবণতা কমে যাচ্ছে।’’ তাঁর অনুযোগ, ‘‘আমি একবারও এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের মুখ দেখেনি। কোনও কাজেও তাঁকে পাশেও পাইনি। সে কারণে আমি চাই এ বার যেই জিতুন, এলাকার মানুষের সঙ্গে তিনি যেন জনসংযোগ করেন।’’

২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সত্যজিৎ সরকারও এ বার প্রথম ভোট দেবেন। কেমন লাগছে জানতে চাইলে এককথায় তিনি বলেন, ‘‘কত ক্ষণে ভোট দিতে পারব, সে জন্য সময় গুণছি। এত উত্তেজনা হচ্ছে যে, রাতে ভাল ভাবে ঘুমাতে পারছি। সারা ক্ষণ বন্ধুদের সঙ্গে রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করছি। বন্ধুরা সকলে মিলে ভোট দিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘এত দিন কিন্তু রাজনীতি নিয়ে সে ভাবে সচেতন ছিলাম না!’’ খুব ভাবনা চিন্তা করে ভোট দিতে চান তিনি। এলাকার পরিষেবা প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘রাস্তাঘাট সবই আছে। শুধু আলোটা আরও একটু বেশি হলে ভাল হয়।’’

Advertisement

বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী রিঙ্কু গুপ্ত আবার প্রথম ভোটের উত্তেজনার সঙ্গে ভয়ও পাচ্ছেন। কেননা, ভোটে ঝামেলা হয় শুনেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘ভোট দেওয়ার সময় যদি কোনও ঝামেলা হয়! প্রথম ভোট যদি দিতে না পারি। সে কারণে একটু টেনশনে আছি।’’ কি ভাবে ভোট দিতে হয়, বাবা-মায়ের কাছ থেকে তা জেনে নিয়েছেন রিঙ্কু। তিনি বলেন, ‘‘যে-ই জিতুন তাঁকে বলব এলাকায় মহিলাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার চেষ্টা করতে। এলাকায় যত্রতত্র নোংরা আবর্জনা পড়ে থাকে। সেগুলি তাড়াতাড়ি পরিষ্কার করার কথাও বলব।’’

কল্যাণী মহাবিদ্যালয়ের বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী জয়িতা চৌধুরী ছোটবেলা থেকে মা-বাবার হাত ধরে ভোটের বুথে গিয়েছেন। এ বার তিনি নিজেই ভোট দিতে যাবেন। তাঁর মা জানালেন, ভোট দেওয়ার আনন্দে রোজ এক বার করে নিজের ভোটার কার্ড দেখে আবার গুছিয়ে রাখছেন মেয়ে। কিন্তু ৩ নম্বর ওয়ার্ডের এই তরুণীর মনে ভোট দেওয়া নিয়ে সংশয়ও রয়েছে। জয়িতার কথায়, ‘‘এখানে ভোট ঠিকঠাক নাও হতে পারে বলে শুনেছি। এ জন্য একটু ভয় লাগছে। ঝামেলার জন্য যদি ভোটটা না দিতে পারি।’’ কেন ভোট দিতে উদগ্রীব তিনি? জয়িতার উত্তর, ‘‘এলাকায় রাস্তাঘাটের উন্নয়ন দরকার। কর্মসংস্থানের দরকার। এই সব দাবি পূরণ হবে, এই আশাতেই ভোট দেব।’’

২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তিথি হাজরা জানালেন, ছোটবেলায় তিনিও বাবা-মায়ের সঙ্গে ভোটকেন্দ্রে গিয়েছেন। বুথের লোকের মজা করে ছোট্ট হাতে কালিও লাগিয়ে দিয়েছিল। তাঁর কথায়, ‘‘বাবা-মায়ের সঙ্গে গিয়ে মনে কৌতুহল হত, চারিদিক ঢাকা একটা জায়গায় বড়রা কী করেন! সে জন্যই নিজে ওখানে গিয়ে বোতাম টেপার অপেক্ষায় ছিলাম। এত দিনে সেই সাধ পূর্ণ হতে চলেছে।’’ তিথি এখন তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। প্রার্থীদের কাছে তাঁর আবেদন, ‘‘যিনিই জিতুন, মেয়েদের নিরাপত্তার জন্য যেন আরও আরও আলো লাগানোর ব্যবস্থা করেন। রাস্তা সংস্কারও করা উচিত জরুরি ভিত্তিতে। বাড়ি বাড়ি ডাস্টবিন দেওয়া উচিত। তা হলে যত্রতত্র আবর্জনা পড়ে থাকবে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement