home tutors

শিক্ষা দফতরের বিজ্ঞপ্তিতে আশাবাদী গৃহশিক্ষকেরা 

হস্পতিবার উত্তর ২৪ পরগনা স্কুলশিক্ষা দফতর বিজ্ঞপ্তি জারি করে নির্দেশ দিয়েছে, গৃহশিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত নন বলে এ বার মুচলেকা দিতে হবে সরকারপোষিত স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বনগাঁ শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২০ ০৫:২৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

স্কুল শিক্ষকদের গৃহশিক্ষকতা বন্ধ করতে দু’বছর ধরে লাগাতার আন্দোলন করে আসছেন উত্তর ২৪ পরগনার গৃহশিক্ষকেরা। মিছিল-মিটিং, বিক্ষোভ কর্মসূচি সবই হয়েছে। জেলার স্কুলে স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষকদের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছিলেন তাঁরা। প্রধান শিক্ষকদের কাছে আবেদন করেছিলেন, স্কুলের যে সব শিক্ষক গৃহশিক্ষকতা করছেন, প্রধান শিক্ষকেরা যেন তা বন্ধ করতে পদক্ষেপ করেন। প্রধান শিক্ষকদের কাছে স্কুলশিক্ষক যাঁরা গৃহশিক্ষকতা করছেন, তাঁদের নামের তালিকা পর্যন্ত তুলে দেওয়া হয়। দেওয়া হয় স্মারকলিপি। জেলাশাসক, স্কুলশিক্ষা দফতরের কাছেও বার বার এ নিয়ে দাবি জানানো হয়েছে। স্কুলশিক্ষকদের গৃহশিক্ষকতা করানোর ভিডিয়ো তুলে শিক্ষা দফতরে তাঁরা জমা করেছেন।

Advertisement

অভিযোগ, এরপরেও স্কুলশিক্ষকের একাংশ এখনও গৃহশিক্ষকতা করে যাচ্ছেন। তবে কিছুটা গোপনীয়তা বজায় রেখে। বৃহস্পতিবার উত্তর ২৪ পরগনা স্কুলশিক্ষা দফতর বিজ্ঞপ্তি জারি করে নির্দেশ দিয়েছে, গৃহশিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত নন বলে এ বার মুচলেকা দিতে হবে সরকারপোষিত স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। এর অন্যথা হলে সরকারি নিয়মে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও নির্দেশিকায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষা দফতরের বিজ্ঞপ্তিতে আশার আলো দেখছেন জেলার গৃহশিক্ষকেরা। গৃহশিক্ষক কল্যাণ সমিতির রাজ্য কমিটির সদস্য শুভ্র দাস বলেন, ‘‘শিক্ষা দফতরের নির্দেশে আশাবাদী। তবে স্কুলশিক্ষকেরা গৃহশিক্ষকতা করতে পারবেন না, এমন সরকারি নির্দেশিকা আগেও ছিল। তার মধ্যে কিছু স্কুলশিক্ষক রমরমিয়ে গৃহশিক্ষকতা করে আসছেন। আশা করব, এ বার স্কুলশিক্ষা দফতর গৃহশিক্ষকতায় যুক্ত স্কুলশিক্ষকদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করবেন।’’

Advertisement

শুভ্রর দাবি, তাঁদের লাগাতার আন্দোলনের জেরেই উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় অনেক স্কুলশিক্ষক গৃহশিক্ষকতা ছেড়েছেন। তবে সম্পূর্ণ বন্ধ হয়নি। বিশেষ করে বিজ্ঞান বিভাগের স্কুলশিক্ষকদের একাংশ এখনও গোপনে গৃহশিক্ষকতা চালিয়ে যাচ্ছেন। বনগাঁর গৃহশিক্ষক দীপক মহন্ত বলেন, ‘‘এ বারের নির্দেশিকা যেন সরকারি লাল ফিতের গেরোয় আটকে না থাকে।’’

স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনা শিক্ষা জেলার মধ্যে ৭২৫টি সরকারপোষিত স্কুল আছে। এ ছাড়াও, কিছু মাদ্রাসা রয়েছে। জেলার ভারপ্রাপ্ত স্কুল পরিদর্শক দিব্যেন্দু পাল বলেন, ‘‘স্কুলশিক্ষকদের মুচলেকা দেওয়ার নির্দেশ প্রধান শিক্ষকদের কাছে ইতিমধ্যেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। নভেম্বর মাসের মধ্যে প্রধান শিক্ষক সহশিক্ষক-শিক্ষিকাদের থেকে মুচলেকা নিয়ে দফতরে জমা করতে করবেন। এরপরেও কেউ গৃহশিক্ষকতা করলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’

বনগাঁর এক স্কুলশিক্ষক গোপনে এখনও গৃহশিক্ষকতা করছেন। এক অভিভাবকের কথায়, ‘‘ওই শিক্ষক আমাকে ফোন করে বলছেন, ছেলেকে তাঁর বাড়িতে আবারও পড়াতে পাঠাতে। এঁদের বোধোদয় কবে যে হবে!’’ এক স্কুলশিক্ষক অভিভাবকদের মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়ে মাসিক বেতন দাবি করেছেন বলে জানা গেল। লকডাউনেও তিনি অনলাইনে পড়িয়েছেন। স্কুল শিক্ষকদের অনেকেরই বক্তব্য, তাঁরা বিনা বেতনে ছাত্রদের পড়ান। ফলে সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করছেন না। খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেল, ওই সব স্কুলশিক্ষকেরা অনেকে গোপনে অভিভাবকের কাছ থেকে বেতন নেন। এখন অনেকেই অনলাইনে পড়াচ্ছেন বলে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসছে না।

দিব্যেন্দু বলেন, ‘‘স্কুলশিক্ষকদের গৃহশিক্ষকতার বিষয়টি স্কুল খুললে আরও স্পষ্ট ভাবে বোঝা যাবে। আমরা স্কুলশিক্ষকদের পড়ানোর ভিডিয়ো-অডিয়ো সংগ্রহ করছি। সেই মতো পদক্ষেপও করা হচ্ছে।’’

প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকারা ইতিমধ্যেই সহশিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছ থেকে মুচলেকা নিতে শুরু করেছেন। অনেক স্কুল আগেই মুচলেকা নিয়েছে। বনগাঁ কুমুদিনী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ইন্দ্রাণী উকিল বলেন, ‘‘স্কুলের ৫৬ জন শিক্ষিকার কাছ থেকে অনেক আগেই মুচলেকা নিয়ে রেখেছি। যাঁদের মনে হয়েছে গৃহশিক্ষকতা করতে পারেন, তাঁদের সাদা কাগজে নয়, স্ট্যাম্প পেপারের উপরে লিখিয়ে নিয়েছি।’’ তিনি জানান, এক শিক্ষিকা মুচলেকা দেওয়ার পরেও গৃহশিক্ষকতা করছিলেন। সেই ভিডিয়ো সংগ্রহ করে স্কুলে তাঁকেই দেখিয়ে সাবধান করা হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement