Ichamati River

Ichamati River: গতিহারা ইছামতীকে বাঁচাতে পরিকল্পনার আশ্বাস মন্ত্রী পার্থের

বুধবারই দফতরের পূর্ণমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন পার্থ। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ইছামতীকে চেনেন-জানেন।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র  

বনগাঁ শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০২২ ০৭:০৪
Share:

অবরুদ্ধ: কচুরিপানায় ঢেকেছে ইছামতীর বহু অংশ। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

স্রোতস্বিনী ইছামতী নাব্যতা হারিয়ে বহুদিন ধরেই মৃতপ্রায়। পলি জমে নদী গতিপথ হারিয়েছে। এ বার গতিহারা ইছামতীকে বাঁচাতে পরিকল্পনা করা হবে বলে আশ্বাস দিলেন রাজ্যের সেচ ও জলপথ দফতরের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক।

Advertisement

বুধবারই দফতরের পূর্ণমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন পার্থ। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ইছামতীকে চেনেন-জানেন। নদীর সমস্যা সম্পর্কেও অবগত। মন্ত্রী বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘ইছামতী নদীর সমস্যা বড় সমস্যা। সেটি নিশ্চিত ভাবেই মাথায় থাকবে।’’ মন্ত্রীর কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে ও অভিভাবকত্বে যাতে নদীর সমস্যার সুরাহা হয়, সে জন্য নিশ্চিত ভাবেই পরিকল্পনা করা হবে।’’ মন্ত্রী জানান, ইছামতী নদী নিয়ে দফতরের পক্ষ থেকে আগে কী কাজ করা হয়েছে, এখন কী পরিকল্পনা আছে— সে সব বুঝে নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ করবেন।

বিক্ষিপ্ত ভাবে কেন্দ্র ও রাজ্যের তরফে ২০০৫ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ইছামতী থেকে পলি তোলা হলেও নদীর হাল ফেরেনি। গাইঘাটার কালাঞ্চি সেতু থেকে স্বরূপনগরের তেঁতুলিয়া সেতু পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার নদীপথ থেকে ড্রেজিং করে পলি তোলা হয়েছিল। স্বরূপনগরের টিপি থেকে কাবিলপুর পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার পথে পলি তোলা হয়। গাইঘাটার বর্ণবেড়িয়া থেকে কালাঞ্চি সেতু পর্যন্ত ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী সীমান্তে ২০.৪১ কিলোমিটার পথে পলি তোলা হয়েছিল। এ ছাড়া, কালাঞ্চি থেকে টিপি পর্যন্ত (যমুনা ও ইছামতীর মিলনস্থল) ১৫ কিলোমিটার অংশে পলি তোলা হয়েছে। বসিরহাট মহকুমার বারঘড়িয়া থেকে কাবিলপুর প্রায় ১২ কিলোমিটার নদী অংশে পলি তোলা হয়েছে। বনগাঁ শহরের আপনজন মাঠ এলাকায় ৬০০ মিটার অংশে পলি তোলা হয়েছে।

Advertisement

বনগাঁ শহরে মতিগঞ্জ এলাকায় নদীপাড়ের বাসিন্দা বৃদ্ধা সন্ধ্যা চৌধুরী বলেন, ‘‘১৯৬৫ সাল থেকে এখানে আছি। ইছামতী ছিল খরস্রোতা। দৈনন্দিন কাজে আমরা নদীর জল ব্যবহার করতাম। কাচের মতো স্বচ্ছ জল ফুটিয়ে পানীয় হিসেবেও ব্যবহার করতাম। তবে দীর্ঘদিন ধরে নদীর জমি বেআইনি ভাবে জবরদখল হয়ে গিয়েছে। ফলে নদীর আজ এই অবস্থা। আমরা চাই, নদীর পূর্ণাঙ্গ সংস্কার হোক। নতুন মন্ত্রী নিশ্চয়ই পদক্ষেপ করবেন।’’

দিন কয়েক আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বনগাঁ-বাগদা এবং সংলগ্ন এলাকা নিয়ে নতুন একটি জেলার ঘোষণা করেছেন। নাম দেওয়া হয়েছে, ইছামতী। বনগাঁর মানুষের অনেকেরই দাবি, যে নদীর নামে জেলা তৈরি হতে চলেছে, সেই নদীকে বাঁচাতে পদক্ষেপ করুক সরকার।

খাতায়-কলমে নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের পাবাখালি এলাকায় চূর্ণী ও মাথাভাঙা নদীর সংযোগস্থলে মাথাভাঙা নদী থেকে ইছামতীর সৃষ্টি। যদিও নদীর এখন কার্যত কোনও উৎসমুখ নেই। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পাবাখালি থেকে ফতেপুর পর্যন্ত ইছামতীর প্রায় প্রায় সাড়ে ১৯ কিলোমিটার পথ বছরের বেশিরভাগ সময় জলশূন্য থাকে।

নদীপাড়ের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সেচমন্ত্রীর কাছে আবেদন, নদীর ওই এলাকায় ড্রেজিং করা হোক। বাংলাদেশের কুষ্ঠিয়ার মুন্সিগঞ্জের পদ্মা থেকে মাথাভাঙার সৃষ্টি। মাথা ভাঙাতেও এখন স্রোত নেই। উৎসমুখে ইছামতীর এই অবস্থা হল কী ভাবে?

স্থানীয় ইতিহাস ঘেঁটে ও প্রবীণ মানুষদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ব্রিটিশ আমলে পাবাখালিতে ইছামতী নদীর উপরে একটি রেলব্রিজ তৈরি হয়েছিল। রেল দুর্ঘটনায় ব্রিজটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৯১০ সাল নাগাদ রেলব্রিজের সংস্কার কাজ করার সময়ে বড় বড় বোল্ডার ফেলা হয়েছিল। যা আর তোলা হয়নি। জলের চাপ সামলাতে দেওয়া হয়েছিল গার্ডওয়াল। ফলে ধীরে ধীরে নদীবক্ষে পলি জমতে থাকে। পরবর্তী সময়ে বাম আমলে নদীর জমি পাট্টা হিসেবে বিলি করা হয়। সব মিলিয়ে নদী ওই এলাকায় জলশূন্য হয়ে পড়েছে।

বসিরহাটের হাসনাবাদে ইছামতী দু’ভাগে বিভক্ত হয়েছে। কালিন্দী ও ডাঁসা নামে দু’টি নদীতে বিভক্ত হয়ে বঙ্গোপসাগর ও রায়মঙ্গলে মিশেছে। ইছামতী নদীর মোট দূরত্ব ২১০ কিলোমিটার। নদীর পূর্ণাঙ্গ সংস্কার হলে শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিই নয়, জলপথে পরিবহণ সম্ভব বলেও মনে করেন অনেকে। সেই সঙ্গে জীবন-জীবিকারও মানোন্নয়ন ঘটবে বলে অনেকের আশা। সেই সঙ্গে নদীপাড়ের মানুষের ভোগান্তি কমবে অতিবৃষ্টিতে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement