উত্তর ২৪ পরগনা

নতুন মুখের সারি সিপিএমের

অধিকাংশ আসনে নতুন প্রার্থী আনবে বামেরা, এটা প্রত্যাশিতই ছিল। সেই মতোই উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পেয়েছে একগুচ্ছ নতুন মুখ। সকলে হয় তো রাজনীতিতে নবীন নন। তবে বিধানসভা ভোটের ময়দানে আনকোরা। অনেকে অবশ্য বামঘেঁষা হলেও সরাসরি রাজনীতির মিটিং-মিছিলে হাঁটেননি কখনও।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৬ ০১:৫৯
Share:

বাঁ দিক থেকে, রমেন ধীমান ও গার্গী। নিজস্ব চিত্র।

অধিকাংশ আসনে নতুন প্রার্থী আনবে বামেরা, এটা প্রত্যাশিতই ছিল। সেই মতোই উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পেয়েছে একগুচ্ছ নতুন মুখ। সকলে হয় তো রাজনীতিতে নবীন নন। তবে বিধানসভা ভোটের ময়দানে আনকোরা। অনেকে অবশ্য বামঘেঁষা হলেও সরাসরি রাজনীতির মিটিং-মিছিলে হাঁটেননি কখনও। তবু এ রকম স্বচ্ছ্ব ভাবমূর্তির প্রার্থীতেই এ বার জোর দিয়েছে বামেরা।

Advertisement

বনগাঁ দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্র থেকে এ বার সিপিএমের প্রার্থী হলেন রমেন আঢ্য। বছর একষট্টির রমেনবাবু এলাকায় পরিচিত মুখ। ১৯৭২ সাল থেকে সিপিএমের দলীয় সদস্য। অতীতে পঞ্চায়েত স্তরে তিনবার ভোটে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু বিধানসভা ভোটে এই প্রথম। গাইঘাটার থানার মণ্ডলপাড়া এলাকার কালীতলা গ্রামে তাঁর বাড়ি। অতীতে ভোটে জিতে তিনি স্থানীয় চাঁদপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৯৩-৯৮ পর্যন্ত ছিলেন গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। তবে জেলা পরিষদের আসনে একবার দাঁড়িয়ে হেরেছেন। বর্তমানে দলের বনগাঁ–গাইঘাটা জোনাল কমিটির সদস্য রমেনবাবু অতীতে প্রায় চোদ্দ বছর দলের গাইঘাটা পৃর্ব লোকাল কমিটির সম্পাদকের দায়িত্বও সামলেচ্ছেন।

বাবা বনচারী আঢ্য ছিলেন ও পার বাংলার যশোর এলাকার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। রমেনবাবুর জন্ম অবশ্য কালীতলা গ্রামেই। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে এমএ করেছেন। বনগাঁ শহরের সব থেকে ঐতিহ্যশালী স্কুল, বনগাঁ হাইস্কুলে তিনি ১৯৮৩ সাল থেকে ২০১৪ পর্যন্ত শিক্ষকতা করেছেন। সে সময়ে ছাত্রদের মধ্যেও জনপ্রিয়তা ছিল।

Advertisement

বনগাঁ ব্লকের ৬টি ও গাইঘাটা ব্লকের ৬টি পঞ্চায়েত নিয়ে বনগাঁ দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্র। লড়াইটা যে কঠিন, তা মানছেন দলের কর্মীরাও।

কী বলছেন রমেনবাবু?

মঙ্গলবার সকালে নিজের বাড়িতে বসে বললেন, ‘‘গত পাঁচ বছরে এলাকার উন্নয়ন যা হয়েছে, তা সবই স্থানীয় ঠাকুরনগর কেন্দ্রীক। বিধায়ক, সাংসদ, মন্ত্রী— সকলেই ঠাকুরনগর এলাকার উন্নয়নের চেষ্টা করেছেন। বাকি এলাকায় নজর ছিল তুলনায় কম। তা ছাড়া, স্থানীয় চাঁদপাড়া এলাকার থেকে প্রস্তাবিত কলেজটি ঠাকুরনগরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ায় মানুষের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। না জেতার কারণ নেই।’’

ইতিহাসের শিক্ষক ধীমান সরকার এ বার স্বরূপনগরে সিপিএমের প্রার্থী। বয়সে তরুণ ধীমানবাবুর বাড়ি কৈজুড়ি পঞ্চায়েতের সীমান্তবর্তী ভাদুড়িয়া গ্রামে। রাজনীতির বড় আসরে এই প্রথম লড়াইয়ে নেমেছেন পেশায় শিক্ষক বছর ছত্রিশের যুবক। ইতিহাসে এমএ এবং সাংবাদিকতা নিয়েও পড়াশোনা করেছেন।

দলের সিদ্ধান্তে অভিভূত ধীমানবাবুর কথায়, ‘‘দীর্ঘ বছর ধরে আমাদের পরিবার বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। দাদু সিপিএম করতেন। আমি সিপিএমের যুব এবং শিক্ষক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত।’’

গত পঞ্চায়েত সমিতির আসনে লড়তে নেমে তৃণমূলের কাছে সামান্য কিছু ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন ধীমানবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘কখনও ভাবিনি, রাজ্য নেতৃত্বের পক্ষে স্বরূপনগরের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ আসনে আমাকে প্রার্থী করা হবে। খুব ভাল লাগছে।’’

হলুদ সালোয়ার কামিজ, ওড়নাটা কোমরে জড়িয়ে ফসকা গেরোর গিঁট বাঁধা। বাজখাঁই গলায় কমরেডদের হাঁক দিয়ে তিনি বললেন, ‘‘লাল রঙটা দে।’’ প্রচারে বেরিয়ে কাস্তে হাতুড়ি তারায় প্রথম তুলির টান খোদ প্রার্থীর হাতেই। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের নৈহাটিতে বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের নতুন মুখ এ বার গার্গী চট্টোপাধ্যায়।

প্রচারের শুরুতেই গার্গীদেবীর অভিযোগ ছিল, ‘‘দেওয়াল নিয়ে তৃণমূল যে রকম কাড়াকাড়ি করছে, তাতে একটা রাজনৈতিক দল, নাকি প্রাইমারি স্কুলে বাচ্চার বেঞ্চ দখলের লড়াই— বোঝা মুশকিল হয়। আমরা সংখ্যালঘু এখন। তাই মেরেধরে তাড়িয়ে দেয়।’’ তাই প্রচার শুরুতে যেখানে সেখানে নয় দীর্ঘদিনের তৃণমূল কর্মী অসীম দত্তর বাড়ির দেওয়ালেই সিপিএমের প্রতীক আঁকা হয়েছে। অসীমবাবু মিতভাষী। বললেন, ‘‘নতুন মুখ। দেওয়ালে দেখাচ্ছেন। আপত্তি কিসে!’’

বামফ্রন্টের দুর্ভেদ্য শিবির নৈহাটি এখন তৃণমূলের দখলে। পুরসভা, পঞ্চায়েত মিলিয়ে তা-ও প্রায় ২ লক্ষ ভোটার। গত বিধানসভায় বামফ্রন্টের প্রার্থী রঞ্জিত কুন্ডুকে তৃণমূলের পার্থ ভৌমিক হারিয়েছিলেন ২৮হাজার ভোটে। লড়াই হয়েছিল সেয়ানে সেয়ানে। রঞ্জিতবাবু নৈহাটির বিধায়ক ছিলেন, চটকলগুলো বামপন্থী শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। বাম আমলের শেষের দিকে মন্ত্রীও হয়েছিলেন পরিবহণ দফতরে। সব মিলিয়ে দোর্দণ্ডপ্রতাপ যাকে বলে। কিন্তু পার্থবাবুর জয়ের পরে নৈহাটিতে সিপিএমের শক্তি একেবারেই ক্ষীণ হয়ে যায়। ডাকসাইটে নেতা দেবু ঘোষের পরিবার ও অনুগামী থেকে আর এক সিপিএম নেতা অঞ্জন দাশগুপ্ত সকলকেই পার্থবাবুর সঙ্গী হতে দেখে সিপিএমের নিচুতলার কর্মীরাও দিশাহারা হয়ে যান। সব মিলিয়ে গত পাঁচ বছরে নৈহাটিতে সিপিএমের সংগঠন কার্যত শূন্যতে পরিণত হয়েছে।

সেখানেই এ বার নতুন মুখ গার্গী চট্টোপাধ্যায়। হাই প্রোফাইল কেউ নন, সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য গার্গী আদতে লড়াকু নেত্রী। নৈহাটির ডান-বাম সব দিক সামলে রাখা পার্থবাবুর সঙ্গে টক্কর দেওয়ার জন্য বহিরাগত হাই প্রোফাইল প্রার্থীর থেকে ওই অঞ্চলে রাজনীতির টানাপোড়েন বোঝা এবং শাসক দলের সব রকম চাপ সামলানোর মতো নেতা বা নেত্রীকেই যাতে নৈহাটি বিধানসভার প্রার্থী করা হয়— সে জন্য জেলা বামফ্রন্টের পক্ষ থেকেও আর্জি ছিল।

নৈহাটি ঋষি বঙ্কিম কলেজের ইংরেজি স্নাতকের ছাত্রী হলেও গার্গী শ্যামনগরের বাসিন্দা। চাকরি-বাকরি করেননি। কারখানার কুলি-মজুরদের নিয়েই আন্দোলনে গার্গীকে দেখা গিয়েছে এই শিল্পাঞ্চলে। ব্রিগেডও ভরিয়েছেন এঁদের নিয়েই। তবে এসএফআইয়ের নেত্রী হিসাবে এক সময়ে নৈহাটিতে বেশ নামডাক হয়েছিল। পরবর্তীতে চটকল ও অন্য কারখানার দুর্দশা নিয়ে মিছিল, মিটিং, কুলি লাইনে, শ্রমিক মহল্লায় বৈঠক, কমিউনিজমের ব্যাখ্যা, শ্রমিকদের কাছে দলের ভাবমূর্তি তুলে ধরা— এ ভাবেই রাজনৈতিক জীবনে ঢোকা। এক কথায়, এই মুহূর্তে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে বামমনস্ক তরুণ প্রজন্মের কাছে গার্গীই নেত্রী। সিপিএম এই সংবেদনশীলতাকেই এ বারের নির্বাচনে কাজে লাগাতে চাইছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement