চোখের সামনে একে একে দেহ রেখেছে ওরা। কেন, জানে না কেউ। আর তা নিয়েই দুশ্চিন্তা স্থানীয় মানুষের। আরও কেউ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে না তো!
হাবড়া থানার কুমড়া পঞ্চায়েতের রুদ্রপুর থেকে মাকালতলা যাওয়ার রাস্তার বাঘাডাঙা মোড় এলাকায় রাস্তার দু’পাশ দিয়ে শতাধিক শিরীষ গাছ। বাঘাডাঙা মোড় থেকে মাকালতলা যাওয়ার রাস্তার শুরুতেই লাইন দিয়ে রাস্তার দু’ধারে ২১টি গাছের অকাল মৃত্যু ঘটেছে গত কয়েক মাসে। প্রাকৃতিক কারণেই যদি তাদের মৃত্যু হয়ে থাকে, তা হলে বাকিগুলি সুস্থ কী করে, উঠছে প্রশ্ন। তা হলে কি কেউ বিষ দিয়ে গাছ মেরেছে— সেই সন্দেহও ঘুরপাক খায় প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের মনে।
গাছের ছাল উঠে পাতা ঝরে শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে শিরীষ গাছগুলি। স্থানীয় এক চাষি জুলফিকার মণ্ডলের মতে, প্রায় পঞ্চাশ বছর বয়স এই গাছগুলির। কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য মাঝে মাঝে ছায়ায় এসে বসতেন অনেকে। পোকার আক্রমণে গাছ মারা গিয়েছে বলে মনে করেন তিনি। সাকিবুল গাজি নামে এক ব্যক্তি আবার বলেন, ‘‘পোকা লেগে এক সঙ্গে এত গাছের মৃত্যু হতে পারে না। কেউ নির্ঘাৎ জেনেশুনে ক্ষতি করেছে।’’
বৃক্ষপ্রেমী বঙ্কিম চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘কেউ বা কারা নিজেদের স্বার্থে গাছে বিষ দিয়ে হত্যা করেছে। ঘটনার সঠিক বিচার চাই।’’ গাছের অকালমৃত্যু প্রসঙ্গে উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের ছাত্র আলোক মণ্ডল জানান, এই এলাকায় জলের তেমন অসুবিধা নেই। গাছের মৃত্যুর পিছনে প্রাকৃতিক কোনও কারণ যদি থাকত, তা হলে বাকি গাছেরও তো ক্ষতি হত। কিন্ত এখানে দেখা গেল, পর পর ওই ২১টি গাছ ছাড়া বাকি সব গাছ সতেজ আছে। তিনি বলেন, ‘‘গাছের গোড়ায় খুঁড়ে বিষ প্রয়োগ করে অনেক সময়ে গাছকে ধীরে ধীরে মেরে ফেলা হয়। তখন গাছ শুকিয়ে যায়, ছাল উঠে যায়, পাতাও ঝরে পড়ে। এ ক্ষেত্রেও এমন কিছু হতে পারে।’’
কুমড়া পঞ্চায়েতের প্রধান পুষ্প বিশ্বাস বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের সদস্যের মাধ্যমে শুনেছিলাম যে গাছগুলিকে কেউ বিষপ্রয়োগ করে মেরে ফেলেছে। তদন্তের জন্য বনমন্ত্রীকে জানাব।’’ সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে, কোন উদ্দেশ্যে গাছ মারা হল? সে প্রশ্নের সদুত্তর নেই। তবে স্থানীয় অনেকের অনুমান, কাঠ বিক্রিই লক্ষ্য। কিছুদিন পরে হয় তো দেখা যাবে, গাছগুলি কেটে চড়া দামে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।
উত্তর ২৪ পরগনার মুখ্য বনাধিকারী রাজু সরকার জানিয়েছেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।