চুল কাটা হয়েছে ছাত্রীর। নিজস্ব চিত্র
স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীটি। দুপুর গড়িয়ে বিকেল তখনও নামেনি।
প্রায় সুনসান রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে আচমকা টান পড়ে চুলে। পিছন ফিরতেই থ হয়ে যায়। মেয়েটির দাবি, মুখ ঘুরিয়ে দেখে, চশমা পরা একটা লম্বা লোক দাঁড়িয়ে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পলকে কাঁচি দিয়ে বেণী থেকে চুল কেটে মুহূর্তে পাশের বাঁশ বাগানে উধাও সেই লোক।
মিনাখাঁর চক আহমেদপুর গ্রামে বাড়ি মেয়েটির। বৃহস্পতিবার ওই ঘটনার পর থেকে আতঙ্কে সে সিঁটিয়ে রয়েছে বলে জানালেন বা়ড়ির লোক। স্কুলে যেতে চাইছে না। শনিবার মেয়েটির বাবা মিনাখাঁ থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু চক আহমেদপুরই নয়, গত কয়েক দিনে একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে আবাদ মালঞ্চ-সহ আশেপাশের গ্রামে।
পরিস্থিতি মনে করিয়ে দিচ্ছে মাস কয়েক আগে এ রাজ্যের মুর্শিদাবাদ কিংবা পঞ্জাব-হরিয়ানা-কাশ্মীরের ‘বেণীসংহার’ কাণ্ড।
মুর্শিদাবাদের গ্রামটিতে ঘুমন্ত মহিলাদের চুল কেটে নিয়ে যাচ্ছিল কে বা কারা। যদিও সেই রহস্যের সমাধান হয়নি। তবে চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে এক মহিলার প্রাণ গিয়েছিল। একই ভাবে রহস্য উন্মোচিত হয়নি ভিনরাজ্যের ঘটনাগুলিরও। যদিও গুজব ছড়িয়েছিল দাবানলের মতো। নিছক সন্দেহের বশে গণপিটুনিতে আগরার কাছে মালা দেবী নামে এক দলিত মহিলার মৃত্যু হয়।
মিনাখাঁর ঘটনার সারবত্তা কতটা, সেই রহস্য এখনও ভেদ করতে পারেনি পুলিশ। তবে গুজব যে ছড়াতে শুরু করেছে, তা এলাকার বাসিন্দারাই স্বীকার করে নিচ্ছেন।
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, অনেক সময়ে বিভিন্ন কারণে এই ধরনের গুজব, আতঙ্ক ছড়ায়। কোনও কিছু থেকে নজর ঘোরাতে বা অব্যাহতি পেতে ভুক্তভোগী নিজেই এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে, এমন নজিরও আছে। আবার, অনেক সময়ে এ ধরনের ঘটনা স্রেফ গুজবে ভর করেই ‘গণ হিস্টিরিয়া’ হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায়।
এ রাজ্যে উদাহরণ বিস্তর। কখনও বাতি ভূত, কখনও ছেলেধরা, কখনও যৌনাঙ্গ ছোট হয়ে যাওয়া— একবার আতঙ্ক শুরু হলে তা ছড়িয়ে পড়তে সময় নেয় না। আশির দশকে ব্যান্ডেজ ভূতের ঘটনাও মনে পড়ে এ প্রসঙ্গে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে তা আতঙ্ক ছড়িয়ে না পড়ে, সে জন্য পুলিশকে উদ্যোগী হতে হবে।’’
চক আহমেদপুরের ছাত্রীটি বাড়ি ফিরে পুরো ঘটনা জানানোর পরে এলাকার বাসিন্দারা তন্নতন্ন করে তল্লাশি করেন মাঠেঘাটে। তবে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ছাত্রীটি যে স্কুলে পড়ে, সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন,‘‘স্কুলের এক ছাত্রী চুল কেটে নেওয়া হয়েছে বলে শুনেছি। তবে মাধ্যমিক পরীক্ষার কাজে ব্যস্ত থাকায় এখনও খোঁজ-খবর করতে পারিনি।’’