গুলি-বোমায় খুন, আতঙ্কে জয়নগর

ভরা বাজারে বোমা-গুলিতে খুন হয়ে গিয়েছেন এক যুবক। তার আগে মহিলাদের উপরে অ্যাসিড-হামলা ঘটেছে। গত কয়েক মাসে পর পর এ ধরনের ঘটনায় জয়নগর-মজিলপুর পুর এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ক্রমেই উদ্বেগ বাড়ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।

Advertisement

দিলীপ নস্কর

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৪৮
Share:

পড়ে রয়েছে গুলির খোল। ইনসেটে গীতাদেবী। নিজস্ব চিত্র।

ভরা বাজারে বোমা-গুলিতে খুন হয়ে গিয়েছেন এক যুবক। তার আগে মহিলাদের উপরে অ্যাসিড-হামলা ঘটেছে। গত কয়েক মাসে পর পর এ ধরনের ঘটনায় জয়নগর-মজিলপুর পুর এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ক্রমেই উদ্বেগ বাড়ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। অনেকেরই অভিযোগ, পুলিশি নিষ্ক্রিয়তায় বেড়ে চলেছে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য।

Advertisement

মাস কয়েক আগে জয়নগরে মনীষা পৈলান ন‌ামে এক তরুণী কাজ সেরে ৬ নম্বর ওয়ার্ড হাসানপুরের বাড়িতে ফিরছিলেন। এক যুবক অ্যাসিড ছোড়ে তাঁকে। মূল অভিযুক্তকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি এখনও। মাসখানেক আগে পারিবারিক বিবাদকে কেন্দ্র করে জয়নগরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে এক মহিলার উপরে অ্যাসিড হামলা হয়।

কয়েক মাসের ব্যবধানে আতঙ্কিত ছিলেন এলাকায় বাসিন্দারা। মঙ্গলবার ভরসন্ধ্যায় পুর এলাকার দত্তবাজারে বোমা-গুলি মেরে খুন করা হয় খোকন মোল্লা নামে একজনকে। বোমার স্‌প্লিন্টার ঢুকে জখম হয়েছেন গীতা দাস নামে এক মহিলা। তাঁর ডান পায়ে হাঁটুর উপরে স্‌প্লিটার ঢুকে যায়। পরে চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচার করে তা বের করেছেন।

Advertisement

বুধবার দুপুরে এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, থমথমে পরিবেশ। বেশ কিছু দোকান বন্ধ। যে দোকানের সামনে বোমা-গুলি চলেছিল, সেখানে এখনও বোমা ফাটার দাগ স্পষ্ট। সকালে দোকানের সামনে ঝাঁট দেওয়ার সময়ে গুলির খোল, জালের কাঠি, ও পাথর মিলেছে।

কী হয়েছিল দত্তবাজারে? গীতাদেবী বলেন, ‘‘আমার দোকানে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে টিভিতে অনুষ্ঠান দেখছিলাম। ঘড়িতে তখন রাত ৮টা ২০ হবে। আচমকাই পর পর বোমা ফাটার শব্দ। ৫-৬টা বোমা পড়েছিল। ঘুরে দেখতে গিয়ে কী যেন একটা ঠিকরে এসে পায়ে লাগল।’’ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন গীতাদেবী। পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

ঘটনার আর এক প্রত্যক্ষদর্শী পাঁচু দাস জানালেন, প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলা এই মোড়ে অনেকেই আড্ডা মারতে আসে। গল্পগুজব চলে অনেক রাত পর্যন্ত। অতীতে কখনও এ ভাবে বোমা-গুলিতে খুনের ঘটনা ঘটেনি। স্বভাবতই আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, খোকন ওই এলাকারই বাসিন্দা। তার বিরুদ্ধে অসামাজিক কাজের অভিযোগ আছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে সে আড্ডা দিচ্ছিল কয়েকজনের সঙ্গে। সে সময়ে দু’টি মোটর বাইকে চার দুষ্কৃতী এসে আচমকাই বোমা-গুলি ছুড়তে থাকে খোকনকে লক্ষ্য করে। আশপাশের লোকজন পালাতে থাকেন। কেউ কেউ দ্রুত দোকানের ঝাঁপ বন্ধ করে দেন। কয়েক মিনিটের মধ্যে অপারেশন চালিয়ে বাইক নিয়ে চম্পট দেয় আততায়ীরা। লোকজন এগিয়ে এসে দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে খোকন। ঘটনাস্থলেই মারা যায় সে।

জয়নগর-মজিলপুর পুরসভা মূলত ঝুটঝামেলাহীন বলেই জানালেন বাসিন্দারা। কিন্তু ইদানীং বার বার এলাকা অশান্ত হচ্ছে বলেও তাঁদের অভিযোগ। দুশ্চিন্তায় আছেন পুরপ্রধান সুজিত সরখেলও। কংগ্রেসের এই নেতার কথায়, ‘‘সারা রাজ্যে শান্তি-শৃঙ্খলার অবনতির হাওয়া জয়নগরেও প্রভাব ফেলেছে। পুলিশের ব্যর্থতায় দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য চলছে।’’ তাঁর অভিযোগ, স্টেশন চত্বর, গঞ্জের বাজার-সহ নানা এলাকায় জুয়া-সাট্টা-মদের আসর বসছে। পুলিশের ভূমিকা দর্শকের। পুরসভার তরফে নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশের কাছে আবেদন করা হবে বলে জানান তিনি।

কংগ্রেসের পুরপ্রধানের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জয়নগর টাউন তৃণমূলের সভাপতি প্রবীরকুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘‘দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। তবে এ বিষয়ে আমরাও উদ্বিগ্ন। কয়েক দিনের মধ্যেই শান্তি-শৃঙ্খলা নিয়ে আলোচনায় বসা হবে।’’

পুলিশ জানিয়েছে, খুনের ঘটনায় এখন কেউ গ্রেফতার হয়নি। তল্লাশি চলছে। প্রাথমিক অনুমান, পুরনো শত্রুতার জেরেই খুন হয়েছে খোকন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement