প্রতীকী চিত্র
ভাটপাড়া-নৈহাটি সমবায় ব্যাঙ্কের তহবিল তছরুপ মামলায় পাকড়াও করা হল কৃষ্ণাজি সাউ নামে এক যুবককে। কৃষ্ণাজি ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহের ভাইপো সঞ্জিত (পাপ্পু) সিংহের সংস্থার ম্যানেজার। রবিবার রাতে টিটাগড় থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে সুশীলকুমার রানা নামে আর এক ব্যক্তিকেও। ওই সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে ঋণের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে সুশীলের বিরুদ্ধে। এই মামলায় সব মিলিয়ে ধৃতের সংখ্যা দাঁড়াল চার।
পুলিশ জানিয়েছে, পাপ্পুর একটি সংস্থার অংশীদারও কৃষ্ণাজি। তিনি নিজেও ওই সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে ৫৪ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে আর শোধ করেননি বলে অভিযোগ। পরে সেই ঋণের টাকা পাপ্পুর অ্যাকাউন্টে ঢুকে যায় বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। তদন্ত শুরুর পরে দেখা করার জন্য তাঁকে বারবার নোটিস পাঠিয়েছিল ব্যারাকপুর কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগ। কিন্তু দেখা করেননি কৃষ্ণাজি। বেশ কিছু দিন ধরে ফেরার ছিলেন বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দা কর্তারা। রবিবার তাঁকে ব্যারাকপুর এলাকায় দেখা যায়। টিটাগড় থানার পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। তৃণমূলে থাকাকালীন বিধায়কের পাশাপাশি ভাটপাড়ার পুরপ্রধান এবং ওই সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান ছিলেন অর্জুন। সম্প্রতি ভাটপাড়ার তৃণমূল নেতা সোমনাথ শ্যাম ব্যারাকপুর কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগে অভিযোগ করেন, পদের প্রভাব খাটিয়ে অর্জুন ব্যাঙ্কের কোটি কোটি টাকা তছরুপ করেছেন।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, জালিয়াতিতে শামিল করা হয়েছে কয়েকজন ঠিকাদারকে। তাঁদের মাধ্যমেই ঋণের নামে কোটি কোটি টাকা তছরুপ হয়েছে। ব্যাঙ্ক ঠিক করে ভাটপাড়া পুরসভার যে সব ঠিকাদার কাজের বরাত পাবেন, তাঁদের ঋণ দেওয়া হবে। শর্ত ছিল, যে কাজের ভিত্তিতে ঋণ, তার ওয়ার্ক অর্ডার জমা করতে হবে ব্যাঙ্কে। বিলের টাকা পুরসভা ওই ব্যাঙ্কের মাধ্যমেই মেটাবে।এক গোয়েন্দা-কর্তা জানান, তদন্তে দেখা গিয়েছে, নিয়ম না মেনে দফায় দফায় না দিয়ে ব্যাঙ্ক ঋণের সর্বোচ্চ সীমা ৫৪ লক্ষ টাকা একবারেই কয়েকজনকে দিয়ে দিয়েছে। সে জন্য যে ওয়ার্ক অর্ডার জমা দেওয়া হয়েছে, সেগুলি ভুয়ো। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে ভাটপাড়া কেভিন রোডের বাসিন্দা কৃষ্ণাজির নামে একটি কোম্পানি তৈরি করা হয়। তাঁর নামেও ভাটপাড়া পুরসভার ভুয়ো ওয়ার্ক অর্ডার তৈরি করা হয়। তাঁকে ৫৪ লক্ষ টাকা ঋণ দেওয়া হয়। সেই টাকা পাপ্পুর আর একটি সংস্থায় পাঠিয়ে দেন কৃষ্ণাজি। নিজের নামে নেওয়া ঋণও আর শোধ করেননি বলে অভিযোগ।
এক গোয়েন্দা কর্তা জানান, তদন্তে দেখা গিয়েছে, পাপ্পুর বিভিন্ন সংস্থার হিসেব-নিকেশ দেখতেন কৃষ্ণাজি। পাপ্পুর বিভিন্ন সংস্থার নামে ভুয়ো ওয়ার্ক অর্ডার তৈরি তিনিই করতেন। ওই সংস্থার নামে বিভিন্ন জাল নথি তৈরির দায়িত্ব পালন করতেন কৃষ্ণাজি। পাপ্পুর এমন কয়েকটি সংস্থার সন্ধান মিলেছে, যেগুলির অস্তিত্ব কেবলমাত্র কাগজে-কলমে। সেই সংস্থার নামেও কোটি-কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। সেই টাকার উৎস জানা যায়নি। ভাটপাড়া মুলাজোর এলাকার বাসিন্দা সুশীল ভাটপাড়া পুরসভার তালিকাভুক্ত ঠিকাদার। তাঁর নামে ভুয়ো ওয়ার্ক অর্ডার বের করে ৩০ লক্ষ টাকা ঋণ নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। সেই ঋণ শোধ করেননি সুশীল। পুলিশ তাঁকে জেরার জন্য ডাকলেও হাজিরা দেননি।