একগুচ্ছ ম্যাগাজিন। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
লিটল ম্যাগাজিন বা ছোট সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশের মূল খোরাক হল ইচ্ছেশক্তি আর খানিকটা পাগলামিও বটে। সেই সঙ্গে সাহিত্যের প্রতি অগাধ ভালবাসা তো আছেই। প্রতি বছর দুর্গাপুজোয় সময়ে সে সবের ভরসাতেই বনগাঁর বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে শতাধিক সাহিত্য পত্রিকা। এ বারের পুজোতেও সেই ঐতিহ্যের ব্যতিক্রম হয়নি।
বনগাঁর বিভিন্ন পত্রিকার প্রকাশকদের দাবি, রাজ্যে একমাত্র বনগাঁতেই পুজোর সময়ে এত বিপুল পত্রিকা প্রকাশিত হয়। এ বার বনগাঁ শহর এবং মহকুমার প্রত্যন্ত এলাকাগুলি থেকে প্রকাশিত হয়েছে কয়েকশো লিটল ম্যাগাজিন। তাদের মধ্যে কয়েকটির প্রচ্ছদ চোখে পড়ার মতো। অতীতে ভাল মানের পত্রিকা প্রকাশিত হলেও প্রচ্ছদের দিকে তেমন নজর দেওয়া হতো না। তবে কয়েক বছর ধরে প্রচ্ছদের বিষয়ে যত্নবান হয়েছেন উদ্যোক্তারা। এ বার শুধু লিটল ম্যাগাজিন নয়, কয়েকটি পুজো কমিটির স্মরণিকাতেও (সুভেনিয়্যর) বিজ্ঞাপনের সঙ্গেই জায়গা করে নিয়েছে সাহিত্যকীর্তি। কয়েকটি ক্ষেত্রে লেখকদের পুজোর অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় এক সাহিত্যিকের কথায়, ‘‘এখানে ইছামতী নদী স্রোত হারিয়ে মৃতপ্রায় হলেও সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশের স্রোত স্বমহিমায় প্রবহমান।’’
এ বার পুরনো পত্রিকা তো বটেই, তার সঙ্গেই প্রকাশিত হয়েছে ‘সাহিত্যপত্র’, ‘বর্ণলেখা’, ‘শুঁয়োপোকা’র মতো নতুন কয়েকটি পত্রিকা। এ ছাড়া, প্রতি বছরের মতোই ভাল কাজ করেছে, ‘কবিতা আশ্রম’, ‘অন্বেষা’, ‘রোপণ’, ‘বনলতা’, ‘তারুণ্য’, ‘খোলা চোখ’, ‘মুখ’, ‘আমাদের লোকালয়’, ‘সময়ের মুখ’। এ ছাড়াও চলতি বছরে পুজো সংখ্যার বিচারে ‘দৈনন্দিন’, ‘অনুপম’ ‘সাথী’, ‘বিবেকের আলোকে’, ‘নর্বাক’, ‘এখন চলতে চলতে’, ‘আমি জেগে আছি’, ‘কাশফুল’, ‘উজাগর’, ‘পার্থিব’, ‘এখন অক্ষর বৃত্ত’, ‘প্রতিবিম্ব’, ‘ঋ’, ‘শাপলা’র মতো কয়েকটি পত্রিকার নাম করতেই হয়। তবে পরিচিত পত্রিকাগুলির মধ্যে ‘শিষ’ পত্রিকা এ বার প্রকাশিত হয়নি।
এ বার বনগাঁ থেকে প্রকাশিত কয়েকটি সাহিত্য পত্রিকা নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন। যেমন ‘আমাদের লোকালয়’ পত্রিকাটির এ বারের বিষয় হল, লোকালয়ের ইতিহাস। সেখানে স্থানীয় ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। পত্রিকাটির সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, ‘‘নিজের মাটির জন্য গর্বিত হতে গেলে নিজের ইতিহাস জানা জরুরি।’’ ‘কবিতা আশ্রম’ পত্রিকাটি সাজানো হয়েছে কবিতা, গুচ্ছ কবিতা, প্রবন্ধ, গদ্য, কাব্যনাট্য দিয়ে। ‘খোলা চোখ’ পত্রিকার প্রচ্ছদ নজর কেড়েছে। রয়েছে বিশ্বনাথ মৈত্রের উপন্যাস ‘বেত্রবতীর বুক’। এ ছাড়া, অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও বাংলার রঞ্জি ক্রিকেটার অভিমুন্য ঈশ্বরণের সাক্ষাৎকার। ‘সময়ের মুখ’ পত্রিকাটি সাজানো হয়েছে ৫০টি অনুগল্প দিয়ে। ‘পার্থিব’ পত্রিকার বিষয়, দীর্ঘ কবিতা। ‘বনতলা’ পত্রিকাটি সাজানো হয়েছে ১৩৫টি কবিতা দিয়ে। তার মধ্যে রয়েছে অনুবাদ কবিতা। নজর কেড়েছে ৩০৮ পাতার ‘তারুণ্য’ পত্রিকা। মছলন্দপুর থেকে প্রকাশিত ১২৮ পাতার ‘অনুপম সাথী’ পত্রিকার কয়েকটি গল্প ও কবিতা মন ছুঁয়ে যায়।
‘রোপণ’ পত্রিকা এ বার ২৫ বছরে পড়ল। সেই উপলক্ষে তারা গত ২৪ বছরের সেরা সংখ্যাগুলির সংকলন প্রকাশ করেছে। সেখানে অন্নদাশঙ্কর রায়, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর মতো কবি-সাহিত্যিকদের লেখা রয়েছে। ‘অন্বেষা’ পত্রিকাটি এ বার ২৪ বছরে পড়ল। তারাও এ বার পুরনো সংখ্যাগুলি থেকে সেরা লেখা বেছে সংকলন বের করেছে। ৩৬০ পাতার পত্রিকায় রয়েছে পবিত্র সরকার, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের মতো লেখকদের লেখা।
সৃজনশীলতাই বনগাঁর প্রাণ। এ বারের শারদোৎসবে আরও এক বার প্রমাণিত হল সে কথা।