জলে ডুবে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় গোটা বিশ্বে এগিয়ে সুন্দরবন। —ফাইল চিত্র।
জলে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে দেশ জুড়ে পদক্ষেপ করতে চলেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রক। বুধবার দফতরের দুই মন্ত্রী এসপি সিংহ বাঘেল এবং ভারতী প্রবীণ পাওয়ার এ কথা ঘোষণা করেন। বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে সমন্বয় রেখে এ ব্যাপারে প্রচার ও সচেতনতা চালানো হবে বলে জানানো হয়েছে। আশার আলো দেখছে সুন্দরবন এলাকায় জলে ডোবা প্রতিরোধে কাজ করা সংগঠনগুলি।
সুন্দরবন ও সংলগ্ন এলাকায় জলে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। সম্প্রতি এক সংগঠনের করা সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, সুন্দরবনের ১৯টি ব্লকে জলে ডুবে শিশুমৃত্যুর সংখ্যা গোটা বিশ্বের মধ্যে সর্বাধিক। এ ব্যাপারে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের দাবি উঠছিল দীর্ঘদিন ধরেই।
সুন্দরবন এলাকায় জলে ডোবা প্রতিরোধে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছে শিশু সুরক্ষা নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। অন্য সংগঠনের সঙ্গে মিলে তারা এলাকায় সমীক্ষা চালায়। তাতে দেখা যায়, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ১৩টি এবং উত্তর ২৪ পরগনার ৬টি ব্লক মিলিয়ে সুন্দরবনের ১৯টি ব্লকে জলে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। জলে ডুবে শিশু মৃত্যুর নিরিখে এই এলাকা গোটা পৃথিবীতে এগিয়ে বলে দাবি ওই সংগঠনের।
ওই সংগঠন সূত্রের খবর, ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৯
সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ১৯টি ব্লকে তথ্য সংগ্রহ চলে। তাতে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হচ্ছে চার বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের। পরিসংখ্যানে দাবি করা হয়েছে, প্রতি এক লক্ষ জনসংখ্যায় এই বয়সি ২৪৩ জন শিশুর জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে। এক লক্ষ জনসংখ্যায় পাঁচ থেকে নয় বছর বয়সি শিশু মারা গিয়েছে
প্রায় ৩৯ জন।
সংগঠনের দাবি, জলে ডুবে মৃত্যুর এই হার অত্যন্ত উদ্বেগজনক। গ্রামীণ এলাকায় প্রায়ই এই ঘটনা ঘটছে। অসতর্কতায় পুকুরে পড়ে যায় শিশু। কখনও স্নান করতে নেমেও তলিয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রেই মৃত অবস্থায় উদ্ধার হয়। জীবন্ত উদ্ধার হলেও শিশুকে জল থেকে তোলার পর কী করা উচিত, কী ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হবে সে ব্যাপারে ধারণা নেই অনেকেরই। তা ছাড়া জলে ডোবা ঘিরে নানা কুসংস্কারও ঘিরে রয়েছে। ফলে, অনেকেই ওঝা-গুনিনের শরণাপন্ন হন। এতে বিপদ বাড়ে। শিশু মৃত্যুর ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত হয় না অধিকাংশ ক্ষেত্রে। ফলে, এ ধরনের মৃত্যুর কোনও নথি থাকে না। সেই কারণে জলে ডুবে মৃত্যুর প্রকৃত পরিসংখ্যানও পাওয়া যায় না।
গত কয়েক বছরে জলে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে সুন্দরবন এলাকায় লাগাতার কাজ করেছে এই সংগঠন। বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি সংলগ্ন পুকুর ঘিরে দেওয়া, গ্রামের মানুষকে সচেতন করা, স্থানীয় বিভিন্ন পেশার লোকজনকে জলে ডোবার প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণ-সহ বিভিন্ন
কাজ হয়েছে। তার ফলও মিলেছে বলেই দাবি সংগঠনের। তবে,
সরকারি পদক্ষেপের দাবিও উঠছে দীর্ঘ দিন ধরে।
সংগঠনের তরফে সুজয় রায় বলেন, “এটা একটা ভয়ঙ্কর সমস্যা। সেটা যে সরকার বুঝেছে, এটাই বড় প্রাপ্তি। দেশ জুড়ে সামগ্রিক পদক্ষেপ করার কথা বলেছেন মন্ত্রী। এটা নিয়ে বাজেটে অর্থ বরাদ্দের কথাও বলা হয়েছে। আশা করি আগামী দিনে এর সুফল মিলবে।”