‘পরোপকার’ করতে গিয়েই ফেঁসে গিয়েছেন তিনি, এমনটাই দাবি করছেন ‘ভাঙড়ের রঞ্জন’, নুরউদ্দিন বৈদ্য।
শিক্ষকতার চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে কয়েকজনের কাছ থেকে তিনি ১ কোটিরও বেশি টাকা তুলেছেন বলে ইতিমধ্যে দাবি করেছেন নুরউদ্দিন। তাঁর দাবি, চেনা পরিচিতেরা এসে চাকরির জন্য তদ্বির করত বলেই তাঁদের উপকারের চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু এ জন্য দফায় দফায় কয়েকজনকে টাকা দিয়ে নিজে ফেঁসে গিয়েছেন। এখন জমিজমা বিক্রি করে আস্তে আস্তে সেই টাকা শোধ করছেন। এর আগে উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার বাসিন্দা ‘রঞ্জন সৎ’ও (পরে জানা যায়, আসল নাম চন্দন মণ্ডল) অনেককে টাকার বিনিময়ে স্কুলের চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। তিনিও টাকা নিয়ে চাকরি পাইয়ে দিতে পারলে অনেককে টাকা ফেরত দিতেন বলে জানা যায় পরে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড় ২ ব্লকের খয়েরপুর গ্রামে নুরের বাড়িটি চোখে পড়ার মতো। প্রাথমিক স্কুল শিক্ষকের এমন দোতলা ঝাঁ চকচকে বাড়ি এলাকায় দ্বিতীয়টি নেই, জানালেন গ্রামের মানুষ। তাঁরা জানাচ্ছেন, দশ বছর আগেও পৈতৃক একতলা ছোট বাড়িতে থাকতেন নুর। সে বাড়ির সামনেই নিজে পেল্লায় দোতলা পেল্লায় বাড়ি হাঁকিয়েছেন। হাজার পঁয়ত্রিশ টাকা মাইনে পেয়ে এত বাড়ি হয় কী করে, সে প্রশ্ন তুলছেন এলাকার অনেকেই। তবে ইদানীং নাকি পাওয়ানাদদের চাপে এলাকায় বিশেষ থাকেন না নুর। বারাসতে বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন বলে জানালেন পাড়া-পড়শিরা।
উত্তর ২৪ পরগনা রাজারহাট সার্কেলের মাছিভাঙা প্রাথমিক স্কুলে পড়ান নুরউদ্দিন। সংবাদপত্রে তাঁকে নিয়ে খবর বেরোনোর পর থেকে অবশ্য এলাকায় দেখা মিলছে না বলে জানালেন পড়শিরা। মোবাইলও বন্ধ। স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর আলম বলেন, ‘‘চাকরি পাওয়ার পরে বিশাল বাড়ি করেছেন নুরউদ্দিন। ইদানীং ঠাঁটবাটও বেড়েছিল। সে সব যে দুর্নীতির টাকায় চলছে, তা ভেবে অবাক হচ্ছি।’’
গ্রামে কারও সঙ্গে অবশ্য কোনও গন্ডগোল নেই নুরউদ্দিনের। শান্ত স্বভাবের মানুষটিকে এলাকার মানুষ ‘সজ্জন’ বলেই চেনেন। নানা সমাজসেবামূলক কাজকর্মে এগিয়ে আসেন। মানুষের বিপদ-আপদে ছুটে যান। স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেও জনপ্রিয়তা রয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের আবদার মেনে বহুবার মিড ডে মিলে নিজের পকেটের টাকায় মাংস-ভাত খাওয়ান খাইয়েছেন স্যার, জানালেন অনেকে। চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে টাকা নিয়েছেন বলে সংবাদমাধ্যমকে নিজেই জানিয়েছেন নুর। ভাঙড় ২ বিডিও কার্তিকচন্দ্র রায় বলেন, ‘‘ওই শিক্ষক সম্পর্কে জেলা থেকে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে। ওঁর বক্তব্য লিখিত ভাবে নেওয়া হবে এবং তা জেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’’