এই হাসপাতাল নিয়েই বহু আশা গোবরডাঙার মানুষের। নিজস্ব চিত্র।
শহরবাসীর দাবি ছিল, কোভিড হাসপাতালের পরিকাঠামো ধরে রেখে সাধারণ রোগীদের ভর্তির ব্যবস্থা করে হাসপাতাল চালু করুক স্বাস্থ্য দফতর।
কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হল কয়েকটি অক্সিজেন কন্সেনট্রেটর-সহ আরও কিছু চিকিৎসা সরঞ্জাম। স্বাস্থ্য দফতরের এই ভূমিকায় হতাশ গোবরডাঙার বাসিন্দারা। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, তা হলে কি হাসপাতাল চালু করার স্বদিচ্ছা নেই সরকারের?
দিন কয়েক আগে গোবরডাঙার নব নির্বাচিত পুরপ্রধান শঙ্কর দত্ত রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে চিঠি দিয়ে আবেদন করেছিলেন, গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালটিকে স্টেট জেনারেল হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করে চিকিৎসা পরিষেবা চালু করা হোক। শঙ্কর বুধবার বলেন, ‘‘আমরা আশাবাদী, স্বাস্থ্য দফতর দ্রুত হাসপাতালটি চালু করবে। চিকিৎসা সরঞ্জাম আনা হয়েছিল করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য। কোভিড হাসপাতাল বন্ধ হয়েছে। তাই সরঞ্জাম সরে গিয়েছে। এর সঙ্গে হাসপাতাল চালুর সম্পর্ক নেই।’’
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপসকুমার রায় বলেন, ‘‘গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে অক্সিজেন কন্সেনট্রেটর নিয়ে গিয়ে অন্য যে সব হাসপাতালে প্রয়োজন, সেখানে দেওয়া হয়েছে। কারণ, গোরবডাঙায় কোভিড হাসপাতালটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’’ হাসপাতালটি সাধারণ হাসপাতাল হিসেবে চালুর বিষয়ে তাপস বলেন, ‘‘এ বিষয়ে কোনও সরকারি নির্দেশ আমাদের কাছে আসেনি।’’
করোনা পরিস্থিতিতে গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালটিকে কোভিড হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করেছিল স্বাস্থ্য দফতর। করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছিল। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় স্বাস্থ্য দফতর ২৩ মার্চ থেকে গোরবডাঙায় কোভিড হাসপাতাল বন্ধ করে দিয়েছে। এরপরেই গোবরডাঙার বাসিন্দারা দাবি তোলেন, হাসপাতালটিকে সাধারণ হাসপাতাল হিসেবে চালু করা হোক। রোগী ভর্তির ব্যবস্থা করা হোক।
গোবরডাঙা পৌর উন্নয়ন পরিষদের সহ সভাপতি পবিত্র মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালটিকে কোভিড হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলার সরকারি সিদ্ধান্তে আমরা খুশি হয়েছিলাম। আমরা আশা করেছিলাম, কোভিড পরবর্তী সময়ে এখানে সাধারণ রোগী ভর্তির ব্যবস্থা হবে। সাধারণ রোগীদের চিকিৎসার জন্য পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল চালু হবে। তা তো হলই না, এখন দেখা গেল কোভিডের সময়ে আনা অক্সিজেন কন্সেনট্রেটর, এসি মেশিন, অটোক্লেপ মেশিন, কম্পিউটার, ওয়াশিং মেশিন সব নিয়ে যাওয়া হল। আমরা খুবই হতাশ।’’
হাসপাতালটি জেলাপরিষদ পরিচালিত। জেলাপরিষদের জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ জ্যোতি চক্রবর্তী বলেন, ‘‘হাসপাতাল চালানোর মতো পরিকাঠামো আমাদের নেই। আমরা অনেক দিন আগেই রেজ্যুলিউশন করে স্বাস্থ্য দফতরকে জানিয়ে দিয়েছি, স্বাস্থ্য দফতর হাসপাতালটির দায়িত্ব নিক। আমরা আশাবাদী, স্বাস্থ্য দফতর দ্রুত হাসপাতালটি চালু করবে।’’
কোভিড হাসপাতাল ঘোষণার পরে গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালের ঝোপ-জঙ্গল সাফ করা হয়েছিল। নতুন শয্যা আনা হয়েছিল। নতুন করে পানীয় জল ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। দরজা-জানলা তৈরি করা হয়েছে। নতুন রং করা হয়েছে। বাইরে থেকে হাসপাতালের পরিবেশ ঝাঁ চকচকে হয়ে উঠেছে।
২০১৪ সালের নভেম্বর মাস থেকে গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালে রোগী ভর্তি বন্ধ হয়ে যায়। বহির্বিভাগে চিকিৎসক সপ্তাহে কয়েক দিন কয়েক ঘণ্টার জন্য রোগী দেখেন। হাসপাতাল থেকে কার্যত কোনও পরিষেবা পাচ্ছিলেন না বাসিন্দারা। পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালের দাবিতে দলমত নির্বিশেষে এলাকার মানুষ এক সময়ে আন্দোলন করেছেন। যদিও সেই দাবি এখনও পূরণ হয়নি।