পুণ্যস্নান: কামনা সাগর উপচে পড়ল ভক্তদের ভিড়ে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
জনস্রোতে ভাসছে ঠাকুরনগর।
পুলিশ-প্রশাসনের হিসেব অনুয়ায়ী, মঙ্গলবার মতুয়া ধর্ম মহামেলা উপলক্ষে পুণ্যস্নান সারতে মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে এসেছিলেন, প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ। যদিও অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি তথা বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের দাবি, বুধবার দুপুর পর্যন্ত ঠাকুরবাড়িতে এসেছেন প্রায় ২৫ লক্ষ পুণ্যার্থী। বুধবার সন্ধ্যাতেও দেখা গেল, ঠাকুরবাড়িতে যাওয়ার ঢল অব্যাহত মতুয়া ভক্তদের। মতুয়া মহাসঙ্ঘের কর্মকর্তারা মনে করছেন, এ বার মেলায় প্রায় ৪৫-৫০ লক্ষ মানুষ আসবেন। মেলা চলবে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত।
অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘ সূত্রে জানানো হয়েছে, ঠাকুরবাড়িতে ‘কামনা সাগরে’ পুণ্যস্নানে তিথি শেষ হয়েছে বুধবার দুপুর দেড়টার সময়ে। তারপরেও ভক্তেরা আসছেন, ‘কামনা সাগরে’ স্নান সারতে। বুধবার বিকেলে এসে পৌঁছনো কয়েকজন মতুয়া ভক্ত জানালেন, পুণ্যতিথিতে স্নান করতে পারলে ভাল লাগাত। তবে আসতে দেরি হয়ে গেল। এ দিন ‘কামনা সাগরে’ স্নান করতে ভক্তদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে ভিড়ের কারণে।
দীর্ঘদিন পরে ঠাকুরবাড়ির দু’টি পরিবার মহামেলার আয়োজন করেছে। যে কারণে মেলা শুরুর আগেই অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের কর্মকর্তারা আশা করেছিলেন, এ বার মেলায় রেকর্ড ভিড় হবে। মতুয়া ভক্তেরা জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে দু’বছর আসতে পারেননি। সে কারণে এ বার মেলায় আসার তাগিদ ছিল বেশি। তা ছাড়া, দুই পরিবারের ঐক্যের বার্তায় খুশি হয়েছেন ভক্তেরা। সাম্প্রতিক অতীতে অনেকেই দু’টি পরিবারের আকচাআকচি মন থেকে মেনে নিতে পারেননি। অনেকে মেলায় আসা বন্ধও করে দিয়েছিলেন।
সঞ্জয় গোঁসাই নামে এক ভক্তের কথায়, ‘‘আমরা এ বার ৫০ জনের দল নিয়ে মেলায় এসেছি। গত কয়েক বছর মেলায় আসতে মন চাইত না। ঠাকুর পরিবারের সদস্যেরা কেন নিজেদের মধ্যে মেলার আয়োজন নিয়ে বিবাদ করবেন? এ বার ঐক্যের বার্তা পেয়েছি বলেই এসেছি।’’
বুধবার মেলায় দেখা গেল, মতুয়া ভক্তরা অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের দুই সঙ্ঘাধিপতি মমতা ঠাকুর এবং শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে দেখা করে প্রণাম করছেন। আগে যে কোনও এক জনকে ভক্তেরা প্রণাম করতেন। তাঁরা খাওয়া-দাওয়াও করতেন যে কোনও একদিকে। আড়াআড়ি বিভাজনের ছবিটা স্পষ্ট ছিল।
মেলা ঘিরে ব্যবসা-বাণিজ্যও ভাল হচ্ছে বলে জানাসেন অনেকে। এক দোকানির কথায়, ‘‘এ বার ছোট-বড় মিলিয়ে সাতশোটি ডাঙ্কা এনেছিলাম। সবই প্রায় বিক্রির মুখে। বছরের এই সময়টার জন্য অপেক্ষা করে থাকি। সারা বছরের মূল আয় এখান থেকেই করি। দু’বছর মেলা না হওয়ায় আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলাম।’’