ভিড়কে সঙ্গী করেই যাতায়াত। মঙ্গলবার ব্যারাকপুরে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা যত কাছে, বাসে ভিড় তত বেশি। উল্টো ছবি দূরের জেলায়। ঘোষণা মতো বাস চলছে সেখানে। কিন্তু যাত্রীদের ভিড় তেমন নেই। মোট কথা, চিঁড়েচ্যাপ্টা ভিড়টা কলকাতাগামী বাসেই চোখে পড়ছে। লোকাল ট্রেন বন্ধ থাকায় বাসে ভিড় কমানো যাচ্ছে না। ভিড় এড়াতে ছোট গাড়ির ব্যবস্থা করেছেন অনেকে।
স্থানীয় এলাকার যে সব চাকুরে আগে বাস বা অটোয় যাতায়াত করতেন, ছোঁয়াচ বাঁচাতে তাঁরা সাইকেল বা মোটরবাইকে ভরসা রাখছেন। তবে স্থানীয় এলাকায় সব অফিস খোলায় কয়েক দিন আগের ছবিটা কিছুটা বদলেছে। বাসগুলি একেবারে যাত্রীহীন অবস্থায় চলছে না।
লোকাল ট্রেনই ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল এলাকার জীবনরেখা। নৈহাটি, কাঁচরাপাড়া, শ্যামনগর, কাঁকিনাড়া ইছাপুর থেকে কয়েক লক্ষাধিক যাত্রী ফি-রোজ কলকাতা যাতায়াত করেন। অফিস খুললেও ট্রেন নেই। প্রয়োজনের তুলনায় বাসও কম। নৈহাটি থেকে কয়েকটি সরকারি বাস চললেও তাতে চিঁড়েচ্যাপ্টা ভিড় হচ্ছে। বেশি বাস মিলবে বলে অনেকে অটো-টোটো করে সেখানে ব্যারাকপুরে আসছেন। হাজার হাজার যাত্রীর ভিড়ে মঙ্গলবারও অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে চিড়িয়ামোড়। বাসে হুড়োহুড়ি করে উঠতে গিয়ে জখমও হন জনা কয়েক যাত্রী।
হাবড়ার তরুণী পলি দে-র কর্মস্থল বড়বাজার। দেড় ঘণ্টা অপেক্ষার পরে বাসে উঠলেন। বললেন, “বাস চালু হওয়ায় চাকরিটা বাঁচাতে পারছি। এইটুকুই সুবিধা হয়েছে। ট্রেন না থাকায় অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে আমার মতো কলকাতার যাত্রীদের।” বনগাঁ মহকুমার মধ্যে চলাচল করা বাসে ভিড় চোখে পড়ছে না। প্রায় সব যাত্রীই মাস্ক পড়ছেন। তবে বাস থেকে ওঠা-নামার সময়ে হুড়োহুড়ি কমানো যাচ্ছে না। বারাসত পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গে বাসগুলিতে ভিড় বেড়ে যাচ্ছে। কিছু কিছু অটো অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলছে বলে অভিযোগ।অটোয় বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলে যাত্রীদের অভিযোগ। এক অটো চালক জানালেন, তিনজন যাত্রী নিলে জ্বালানির দাম উঠছে না। হাবড়া, অশোকনগর এলাকায় বাসে যাত্রী কম থাকলেও বাইরে থেকে ফেরার সময় অতিরিক্ত যাত্রী থাকছে। বনগাঁ মহকুমার মধ্যে মানুষ বাইক-সাইকেল নিয়ে কর্মস্থলে যাতায়াত করছেন। ২০-২৫ কিলোমিটার পথও মানুষ সাইকেলে যাতায়াত করছেন। অনেক সরকারি কর্মচারী আবার অফিসে এসে তিন-চার দিন থেকে যাচ্ছেন। বসিরহাট থেকে কয়েক হাজার মানুষ রোজ ট্রেনে কলকাতায় যাতায়াত করতেন। বাসের সংখ্যা কম, আবার সময়ও লাগে অনেক বেশি। ফলে যাঁদের নিয়মিত অফিস করতে হচ্ছে, তাঁরা কয়েকজন মিলে ছোট গাড়ি ভাড়া করে যাতায়াত করছেন। খরচ বেশি হলেও সময়মতো দফতরে পৌঁছনো যাচ্ছে। বসিরহাটের দীপেন পাল জানান, রোজ অফিস করতে হচ্ছে না বলে তাঁর মতো অনেকেই মোটরবাইকে যাতায়াত করছেন। বাদুড়িয়া, টাকি, হাসনাবাদ, স্বরূপনগরের মত কাছাকাছি এলাকায় যাঁদের কর্মস্থল, তাঁরা সাইকেল কিংবা অটোয় যাতায়াত করছেন। হাসনাবাদ থেকে রাজাবাজার রুটে আটটি বাসের মধ্যে আপাতত দু’টি চলছে। সরকারি ভাবে না বাড়লেও এই বাসগুলিতে যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ।
ট্রেন বন্ধ থাকায় ফলে বাস ও অটোর ভিড়ে লাগাম দেওয়া যাচ্ছে না। সেই সুযোগে বাড়তি ভাড়া হাঁকছে সেগুলি। বাসে গড়ে পাঁচ টাকা ভাড়া বাড়লেও অটোতে দ্বিগুণ বা তারও বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। উপায় না থাকায় যাত্রীরা তা দিতে বাধ্য হচ্ছেন। বাস-অটোয় দূরত্ব বিধিও শিকেয় উঠেছে। মঙ্গলবারও গদখালি, ঝড়খালি, ক্যানিং থেকে বারুইপুর-সহ অন্যান্য রুটের বেসরকারি বাস চালু হয়নি। ডায়মন্ড হারবার থেকে কলকাতা, কাকদ্বীপ, নামখানা, পাথরপ্রতিমার সরকারি বাস চলছে। কলকাতাগামী বাসে যথেষ্ট ভিড় হচ্ছে। তবে বেলার দিকে বাস মিলছে না। স্থানীয় বাসেও যাত্রী হচ্ছে না।