Flood in Kakdwip

দুর্যোগ আসে যায়, থামে না ‘ঘুরে দাঁড়ানোর’ লড়াই

নামখানার বুধাখালি গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধ শেখ আবু তালেব প্রাকৃতিক দুর্যোগে তিন তিন বার ভিটেমাটি হারিয়েছেন। বর্তমানে বুধাখালির রাজনগর শ্রীনাথগ্রামের নদীবাঁধে ত্রিপলের ঝুপড়ি বানিয়ে কোনও রকমে বসবাস করছেন।

Advertisement

সমরেশ মণ্ডল

কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২৪ ০৯:১২
Share:

সর্বস্ব হারিয়ে ঝুপড়িতে বসবাস শেখ পরিবারের। —নিজস্ব চিত্র।

প্রকৃতির রোষে বার বার উদ্বাস্তু হওয়াই যেন ভবিতব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে নামখানার আবু তালেব, কাকদ্বীপের গোপাল দাস, ঘোড়ামারার সুচিত্রা হালদারদের। বার বার ঘর হারানোর যন্ত্রণা থেকে কি আদৌ কোনও দিন মুক্তি মিলবে, আরও একটা ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কার মুখে দাঁড়িয়ে এই প্রশ্নই তুলছেন তাঁরা।

Advertisement

নামখানার বুধাখালি গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধ শেখ আবু তালেব প্রাকৃতিক দুর্যোগে তিন তিন বার ভিটেমাটি হারিয়েছেন। বর্তমানে বুধাখালির রাজনগর শ্রীনাথগ্রামের নদীবাঁধে ত্রিপলের ঝুপড়ি বানিয়ে কোনও রকমে বসবাস করছেন। বছর বিরাশির আবু জানান, পঁচিশ আগে মুড়িগঙ্গার তীরে তাঁদের টালির চাল দেওয়া চার চালা মাটির বাড়ি ছিল। প্রাকৃতিক দুর্যোগে সেই বাড়ি নদীগর্ভে চলে যায়। এরপরে নদীবাঁধ থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে সরে এসে আরও একটি ঘর তৈরি করেন। কিন্তু আমপানে সেই ঘরও ভাঙে। পরে ধারদেনা করে ফের বাড়ি বানিয়েছিলেন। ইয়াসের সময়ে সেই বাড়িও গিলে খায় মুড়িগঙ্গা নদী। তারপরে আর বাড়ি তৈরি করতে পারেননি তাঁরা। আয়লা বাঁধের উপরে কোনও রকমে ত্রিপল টাঙিয়ে বসবাস করেন।

তালেবের কথায়, “ঝড়বৃষ্টির রাতে পরিবারের কেউ ঘুমোতে পারে না। খাটের উপরে বসে কোনও রকম জেগে কাটাতে হয়। সরকারের দিকে পরিবারের সকলে তাকিয়ে রয়েছে। সরকারই গড়ে দিতে পারে স্থায়ী ঠিকানা। শুনছি, আবারও দুর্যোগ আসছে। ঝড় হবে। জানি না, মাথা গোঁজার এই ঠাঁইটুকু থাকবে কিনা!’’

Advertisement

একই পরিস্থিতি কাকদ্বীপের শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা গোপাল দাসের। প্রাকৃতিক দুর্যোগে বার বার ঘরবাড়ি হারিয়ে বর্তমানে ত্রিপলের ছাউনি ও দরমার বেড়া দেওয়া ঘরে স্ত্রী, দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে দিন কাটান বছর পঁয়ত্রিশের মৎস্যজীবী। গোপাল বলেন, “ঝড়বৃষ্টি হলে বাড়িতে জল ঢোকে। দুর্যোগের সময়ে ভয়ে ভয়ে থাকি। আমি অসুস্থ, স্ত্রীরও শরীর ভাল নয়। তবুও সংসার চালানোর জন্য নদীপথে মাছ ধরার কাজে যেতে হয়। বাড়িতে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। বার বার ঝড়ে ঘর বাড়ি ভেঙে যায়। ধীরে ধীরে ধার দেনা করে কোনও রকমে এই ব্যবস্থাটুকু করেছি। আবার ভেঙে গেলে যাব কোথায়? প্রশাসন যদি কিছু সাহায্য করে, তা হলে মাথা গোজার ঠাঁই পাই।”

ঘোড়ামারা দ্বীপের হাটখোলা গ্রামের বাসিন্দা বছর আটচল্লিশের সুচিত্রা হালদার জানালেন, দুর্যোগে ভিটেমাটি হারানোর যন্ত্রণা এখন কেমন যেন সয়ে গিয়েছে। তাই দ্বীপের কেউই আর ঝড়ের খবরে আতঙ্কিত হন না। সুচিত্রা জানালেন, আমপানে তাঁদের মাটির ঘর তছনছ হয়ে গিয়েছিল। রাস্তার ধারে ছিটেবেড়া দেওয়া আস্তানা বানিয়েছিলেন। ইয়াসের সময়ে জলস্ফীতির জেরে সেটিও হারিয়েছেন। সুচিত্রার স্বামী পাঁচুগোপাল মৎস্যজীবী। সংসারের অনটন মেটাতে মাঝে মধ্যে ভিন্‌ রাজ্যে পাড়ি দিতে হয় ছেলেকে। তাতে যে আর্থিক সুরাহা হয়েছে, এমন নয়। অভাবের সংসারে বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এখন নদীবাঁধের উপরে ঘর করে কোনও মতে দিন কাটে। তিনি বলেন, “আগে দুর্যোগের কথা শুনলেই আতঙ্ক হত। এখন জানি, ঝড়ের আগে ঘর ছাড়তে হবে। দুশ্চিন্তা করে লাভ নেই। বাড়ি ফিরে দেখব, ঘর ভেঙেছে বা জমি চলে গিয়েছে নদীর তলায়। দুর্যোগ আসে-যায়, কিন্তু আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই থামে না!”

সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিম হাজরার কথায়, “সুন্দরবন এলাকায় যাঁরা বার বার দুর্যোগে ঘরবাড়ি হারিয়ে অসহায় জীবনযাপন করছেন, তাঁদের জন্য রাজ্য সরকার রয়েছে। প্রশাসনের আধিকারিকেরা এলাকায় গিয়ে বিষয়গুলি খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। কোনও গরিব অসহায় মানুষ সরকারি সাহায্য বা আবাস যোজনা থেকে বঞ্চিত হবেন না।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement