জয়গোবিন্দর সঙ্গে বাড়ির লোকজন। ছবি: সুজিত দুয়ারি
বছর তিরিশ আগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফেরেননি বিহারের বাসিন্দা জয়গোবিন্দ বিন্দ। তখন তিনি বছর তিরিশের যুবক। পরিবারের সদস্যেরা ধরে নিয়েছিলেন, বাড়ির ছেলে হয় তো সন্ন্যাস নিয়েছেন। মায়ের কাছে সে কথা এক সময়ে বলতেন তিনি। বেশ কয়েক বছর অপেক্ষার পরে এক সময়ে শ্রাদ্ধশান্তি করা হয় জয়গোবিন্দের।
বাড়ির ছেলের কথা এক রকম ভুলেই গিয়েছিল পরিবার। শনিবার হ্যাম রেডিয়ো ক্লাবের এক সদস্যের কাছ থেকে যখন তাঁরা শুনলেন জয়গোবিন্দ বেঁচে, তখন সে কথা বিশ্বাসও করেননি। জয়গোবিন্দের দাদা মুখরাম, বাবনদের মোবাইলে ছবি দেখানো হয়। কিছু অডিয়ো শোনানো হয়। হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও কল করা হয়। চিনতে পারলেও মন থেকে সংশয় দূর হচ্ছিল না আত্মীয়দের।
ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগবিশ্বাস জয়গোবিন্দকে নিতে অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে আসতে বলেন মুখরামদের। খানিকটা সন্দেহ মনে রেখেই মঙ্গলবার ভোরে জয়গোবিন্দের দুই দাদা এবং জামাইবাবু শিয়ালদহ পৌঁছন। সেখান থেকে অম্বরীশ তাঁদের নিয়ে যান অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে।
সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ ওয়ার্ডের মধ্যে ভাইয়ের মুখোমুখি হন মুখরাম- বাবনরা। মুখরাম ভাইকে ডাকনামে ডাকতেই দাদার মুখের দিকে তাকান জয়গোবিন্দ। ভাইকে চিনতে পেরে মুখরামের চোখে তখন জল। ভাইয়ের গায়ের চাদর সরিয়ে ডান পায়ের দিকে দেখেন মুখরাম। শৈশবে পোলিয়ো হয়েছিল ভাইয়ের। পা দেখে আর কোনও সংশয় থাকেনি দাদাদের। জয়গোবিন্দকে বুকে জড়িয়ে আনন্দে কেঁদে ওঠেন তাঁরা। জয়গোবিন্দর চোখেও তখন জল। পুরনো দিনের গালগল্প জুড়ে দেন তিন ভাই। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা করে দেওয়া অ্যাম্বুল্যান্সে চেপে রওনা দেন হাওড়া স্টেশনের দিকে।
অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালের সুপার সোমনাথ মণ্ডল বলেন, ‘‘জানুয়ারি মাসে অশোকনগর স্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে অসুস্থ অবস্থায় এলাকার বাসিন্দারা এক বৃদ্ধকে হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে যান। আমরা ওঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। ভাষা বুঝতে না পেরে হ্যাম রেডিয়োর সঙ্গে শনিবার যোগাযোগ করা হয়।’’ অম্বরীশ বলেন, ‘‘চারটি নাম বলছিলেন ওই বৃদ্ধ। উচ্চারণ ঠিকমতো বোঝা যাচ্ছিল না। ওঁর কথাবার্তা রেকর্ড করা হয়। জানা যায়, বাড়ি বিহারে। সেই মতো সেই রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ওখানে হ্যাম রেডিয়ো ক্লাবের সদস্যেরা জয়গোবিন্দের বাড়ির ঠিকানা খুঁজে পান।’’জানা গিয়েছে, তিন ভাইয়ের মধ্যে জয়গোবিন্দ ছোট। বাড়ি বিহারের শিবসাগর থানা এলাকায়। তিনি নিখোঁজ হওয়ার পর বাবা-মা মারা গিয়েছেন। জয়গোবিন্দ ভাল সারেঙ্গি বাজাতেন। অম্বরীশ বলেন, ‘‘হাসপাতালে জয়গোবিন্দ যে নামগুলি বলছিলেন, তাতে নিজের ছাড়াও দাদা ও বাবার নাম ছিল বলে আমরা পরে বুঝতে পারি।’’
যাওয়ার আগে মুখরাম কপালে হাত ঠেকিয়ে বলে গেলেন, ‘‘ঈশ্বরের কৃপায় ভাইকে ফিরে পেয়েছি। এখন থেকে আগলে রাখব।’’