বন্দি: দম্পতি। নিজস্ব চিত্র
ধারের টাকা শোধ না করায় এক পরিবারের তিন সদস্যকে তাঁদের বাড়িতেই তালা বন্ধ করে রাখলেন এক পাওনাদার। বারো ঘণ্টা পরে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তালা ভেঙে তাঁদের উদ্ধার করে। শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে গাইঘাটা থানার আংরাইল এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, কোনও পক্ষই রবিবার দুপুর পর্যন্ত পুলিশে অভিযোগ করেনি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আংরাইল এলাকার বাসিন্দা অজয় মিত্র পেশায় রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে। তাঁর দুই ছেলে-মেয়ে। মেয়ে বিবাহিত। ছেলেমেয়ের পড়াশোনা ও মেয়ের বিয়ের জন্য অনেকের কাছ থেকেই অজয়কে সব মিলিয়ে প্রায় কয়েক লক্ষ টাকা ধার করেছিলেন। অভিযোগ, দীর্ঘ দিন হয়ে গেলেও অজয় টাকা শোধ করছিলেন না। এ দিকে, নিজের বাড়িতে পাকা ছাদ করেছেন।
অজয়ের পরিবারের দাবি, শনিবার রাত ৯টা নাগাদ স্থানীয় এক পাওনাদার অঞ্জন দাস অজয়ের বাড়ির কোলাপসিবল গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন। সারারাত তাঁরা তালাবন্ধ থাকেন। রবিবার সকালে অন্য পাওনাদারেরাও অজয়ের বাড়িতে চড়াও হন। খবর পেয়ে পুলিশ সকাল ৯টা নাগাদ এসে তালা ভেঙে সকলকে উদ্ধার করে সুটিয়া পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। অজয় বলেন, ‘‘বারো ঘণ্টা না খেয়ে থাকতে হয়েছে। জলও ছিল না।’’
মলিনা ঘোষ নামে এক বৃদ্ধা বলেন, ‘‘স্বামী মারা গিয়েছেন। ছেলেরা দেখে না। একাই থাকি। কয়েক হাজার টাকা অজয়ের কাছে রাখতে দিয়েছিলাম। সে আর ফেরত দিচ্ছে না। এ দিকে টাকার অভাবে না খেয়ে থাকতে হচ্ছে আমাকে।’’ বাসন্তী দত্ত নামে আর এক মহিলা বলেন, ‘‘অজয় সকলের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা ধার নিয়েছিল। দু’বছর হয়ে গেল কাউকে টাকা ফেরত দিচ্ছে না। কেবলই ঘোরাচ্ছে।’’ স্থানীয় মুদি দোকানিও অজয়ের কাছে কয়েক হাজার টাকা পান। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রায় জনাকুড়ি লোকের কাছ থেকে অজয় টাকা ধার নিয়েছেন। টাকার পরিমাণ ৪ লক্ষের মতো।
কেন অজয় টাকা দিচ্ছেন না?
অজয়ের কথায়, ‘‘সামান্য কাজ করি। দিনে ৩০০ টাকা পাই। সব দিন কাজও থাকে না। সংসারের কত খরচ! ছেলের পড়াশোনাতেই কত টাকা বেরিয়ে যায়। হাতে কিছুই থাকে না!’’ অজয়ের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি জমি বিক্রি করে কয়েক জনকে টাকা শোধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অজয়। ওই কথা কোনও ভাবে পাওনাদারদের কানে চলে যায়। তারপরেই এই ঘটনা।