বন্ধ: প্রধান (ইনসেটে) ধৃত, তালা পড়েছে পঞ্চায়েতে। নিজস্ব চিত্র।
মাছ ব্যবসায়ীকে মারধর ও আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করল তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধানকে। বুধবার সকালে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফলতার দেবীপুর পঞ্চায়েতের প্রধান সনাতন প্রামাণিককে হাঙরঘাটা হরিশপুর গ্রামের বাড়ি থেকে ধরে পুলিশ। বুধবার ডায়মন্ড হারবার আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃণমূলের ওই নেতার বিরুদ্ধে বেশ কিছুদিন ধরেই নানা দুষ্কর্মের অভিযোগ উঠছিল। মাসখানেক আগে স্থানীয় ইঞ্জিনিয়ার কুন্তল সাহা তাঁর নিজের জমিতে ফুল-ফলের বাগান করার জন্য মাটি ফেলছিলেন। অভিযোগ, তাঁর কাছ থেকে দু’লক্ষ টাকা তোলা চান সনাতন। টাকা দিতে অস্বীকার করায় সস্ত্রীক কুন্তলকে সনাতন ও তাঁর দলবল মারধর করে বলে অভিযোগ।
দিন কয়েক আগে এক মাছ ব্যবসায়ীকে মারধরের ঘটনায় নাম জড়ায় পেশায় মাছের আড়তের মালিক সনাতনের। পুলিশ জানায়, ওই ঘটনাতেই গ্রেফতার করা হয়েছে প্রধানকে।
সনাতন ধরা পড়ার পরেই তাঁর থেকে দূরত্ব বাড়াতে তৎপর স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। এক সময়ে ফলতা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গির খানের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন সনাতন। তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় থাকার ফলেই পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যেতেন বলে নানা মহলে গুঞ্জন। সনাতনের গ্রেফতারির খবর শুনে জাহাঙ্গিরের প্রতিক্রিয়া, ‘‘বেশ কয়েকদিন আগেই সনাতন পঞ্চায়েত প্রধান এবং অঞ্চল সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। বর্তমানে উনি দলের কেউ নন। আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক। তিনি কোনও অন্যায় বরদাস্ত করেন না। আইন আইনের পথে চলবে। আইনের ঊর্ধ্বে আমরা কেউ নই।’’
পঞ্চায়েত ও দলীয় সূত্রের খবর, পর পর দু’বার পঞ্চায়েতের প্রধান হয়েছেন সনাতন। সেই সঙ্গে দলের আঞ্চলিক সভাপতিও তিনি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিধানসভা ভোটের পরে সনাতনের নেতৃত্বে চড়কতলা, ভাতহেড়িয়া, কাটাড়িয়া মোড়ের কাছে একাধিক দোকানে ভাঙচুর, লুটপাট চলে। সনাতনের দাপটে ঘরছাড়া হন অনেকে। অভিযোগ, তাঁদের অনেকের থেকে পরে মোটা টাকা আদায় করে এলাকায় ফেরার ‘অনুমতি’ দেন সনাতন। এলাকার একটি প্লাইউডের কারখানাও সনাতন ও তাঁর বাহিনীর দৌরাত্ম্যে বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ।
এলাকায় যাঁর হাত ধরে এক সময়ে জমি শক্ত করেছিল তৃণমূল, সেই মিন্টু কুমার পাঁচবার জিতেছেন পঞ্চায়েত ভোটে। কয়েকবার উপপ্রধান ছিলেন। কিন্তু সনাতন প্রধান হওয়ার পর থেকে তিনি কোণঠাসা হতে থাকেন বলে দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে। পঞ্চায়েতেও ঢুকতেন না দীর্ঘদিন। সম্প্রতি দলের কিছু পদে আনা হয়েছে মিন্টুকে। তারপর থেকে পঞ্চায়েতে যাতায়াত শুরু করেছেন।
সনাতনের বিরুদ্ধে মিন্টুর অভিযোগ ভুরিভুরি। তিনি বলেন, ‘‘দিনের পর দিন ধরে এলাকায় দুর্নীতি ও তোলাবাজিতে জড়িত প্রধান। কোনও সদস্যকে আমল দেন না উনি।’’ তাঁর আফসোস, একদিন তাঁর হাত ধরেই রাজনীতিতে এসেছিলেন সনাতন!
প্রধান গ্রেফতারের ঘটনায় সন্তুষ্ট ইঞ্জিনিয়ার কুন্তল সাহা। তিনি বলেন, ‘‘মাননীয় সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশকে বলেছিলেন, নিরপেক্ষ ভাবে তদন্ত করতে হবে। সেই মতো ডায়মন্ড হারবার মহকুমা পুলিশ অফিসার মিতুনকুমার দে-র নেতৃত্বে প্রধানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁকেও ধন্যবাদ জানাই।’’ প্রধানের অত্যাচারে তিনি অনেকদিন বাড়িছাড়া বলে জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসন তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন বলেও জানান কুন্তল।
ডায়মন্ড হারবার সাংগঠনিক জেলার বিজেপির সহ সভাপতি সুফল ঘাটু বলেন, ‘‘পুলিশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করার জন্য ধন্যবাদ। পুলিশ এ ভাবে মেরুদণ্ড সোজা করে কাজ করুক।’’