প্রশাসনিক বৈঠকে দুই জেলার জন্য বিশেষ নির্দেশ
Dengue

আটার গুঁড়ো ছড়ানো আর নয়, উত্তরে বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর

মশার দাপট রুখতে ব্লিচিং ছড়ানোর বদলে আটার গুঁড়ো ছড়ানোর অভিযোগ ওঠে দেগঙ্গার গ্রামে। কাক-পাখি সেই সাদা গুঁড়ো খুঁটে খাচ্ছিল দেখে বিষয়টি সামনে আসে।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র  

বনগাঁ শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:১৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

রাজ্য তখন কাঁপছে ডেঙ্গির আতঙ্কে। দেগঙ্গার গ্রামে মৃত্যুমিছিল। অনেক ক্ষেত্রেই প্রশাসন ডেঙ্গিতে মৃত্যু স্বীকার করছে না বলে বিরোধীদের লাগাতার অভিযোগে সরগরম রাজনীতি।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে মশার দাপট রুখতে ব্লিচিং ছড়ানোর বদলে আটার গুঁড়ো ছড়ানোর অভিযোগ ওঠে দেগঙ্গার গ্রামে। কাক-পাখি সেই সাদা গুঁড়ো খুঁটে খাচ্ছিল দেখে বিষয়টি সামনে আসে।

সেই ঘটনায় কারও শাস্তি হয়েছিল কিনা খেয়াল করতে পারছেন না প্রশাসনের কর্তারা। তবে বুধবার প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি নিজেই উল্লেখ করে আটা ছড়ানোর মতো ঘটনা নিয়ে উত্তর ২৪ জেলা প্রশাসনকে সতর্ক করেছেন।

Advertisement

রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পরে জেলা প্রশাসনের কর্তারা মুখে কুলুপ এঁটেছেন। তবে প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জেলাশাসক শারদকুমার দ্বিবেদীকে বলেন, গাইঘাটা, বনগাঁ, বাগদায় ডেঙ্গি হয়। আটা ছড়ানো হয়। বিষয়টি যেন জেলাশাসক দেখে নেন, সে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।

এ বিষয়ে জেলাশাসক পরে বলেন, ‘‘কয়েক বছর আগে আটা ছড়ানোর একটি ঘটনা ঘটেছিল। এখন জেলার কোথাও আটা ছড়ানো হচ্ছে না। আমরা সতর্ক আছি। তবে নির্দেশ যখন এসেছে, আমরা বিষয়টি যাতে না ঘটে, তা নিশ্চিত করব।’’

অগস্ট মাসে মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী রাজ্যের ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক করেছিলেন। জেলাশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, মশাবাহিত ওই রোগের মোকাবিলায় সাতদিনের মধ্যে জমা জল, জমে থাকা আবর্জনা সাফ করতে হবে। এ বার মুখ্যমন্ত্রী ডেঙ্গি নিয়ে জেলা প্রশাসনকে সতর্ক করলেন।

উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন সূত্রে অবশ্য জানানো হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর সতর্ক বার্তার আগে থেকেই জেলায় ডেঙ্গি রুখতে পদক্ষেপ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের তরফে সার্ভে করা হচ্ছে নিয়মিত। সেই মতো পদক্ষেপ করা হচ্ছে। ব্লক এলাকায় অনেক আগে থেকে বাড়ি বাড়ি সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। জুলাই মাস থেকে পুর এলাকাতেও ওই কাজ শুরু হয়েছে। ভেক্টর কন্ট্রোল টিম কাজ করছে। ব্লক ও পুরসভায় বায়ো লার্ভিসাইড এবং গাপ্পি মাছ সরবরাহ করা হয়েছে। জেলাশাসক বলেন, ‘‘ডেঙ্গি নিয়ে আমাদের নজরদারি আছে ব্লক ও পুরসভা এলাকায়। প্রতি সপ্তাহে আমরা রিভিউ মিটিং করছি। অফিসারেরা এলাকায় ঘোরাঘুরি করছেন। আমরা সজাগ আছি।’’

প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, জেলায় কোথায় কোথায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে, তা চিহ্নিত করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা জমা জল সরানো, মশার লাভা শণাক্তকরণ ও তা নষ্ট করার কাজ করছেন। নিকাশি নালা সাফাইয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা জমা জল সরানো, মশার লার্ভা শণাক্তকরণ ও তা নষ্ট করার কাজ করছেন। নিকাশি নালা পরিষ্কারে জোর দেওয়া হয়েছে।

প্রশাসন সূত্রের খবর, ডেঙ্গি মশার লার্ভা মারতে জেলায় বায়ো লার্ভিসাইডের ব্যবহার শুরু হয়েছে। বায়ো লার্ভিসাইড এক ধরনের রাসায়নিক, যার ব্যবহারে মশার লার্ভা মারা যায়। জলের ক্ষতি হয় না। ২০১৭ সালে জেলায় ডেঙ্গি ভয়াবহ আকার নিয়েছিল। বিশেষ করে দেগঙ্গা, হাবড়া এবং অশোকনগরে ডেঙ্গির প্রকোপ ছিল বেশি। অনেক মানুষ মারাও যান। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ২০২০ সালে জেলায় ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৮৩৩ জন। ২০১৯ সালে সংখ্যাটা ছিল ২০,১৯৯ জন। এ বার অবশ্য তুলনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশ কম। গত বছরের তুলনায় ডেঙ্গি পরীক্ষার সংখ্যা দ্বিগুণ করা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, বনগাঁ, বাগদা, গাইঘাটায় এ বার ডেঙ্গি তেমন ছড়ায়নি। মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর— ওই তিনটি এলাকায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৯ জন। গাইঘাটায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৭ জন। বনগাঁ ব্লকে ৭ জন। বনগাঁ পুরসভায় ২ জন এবং বাগদায় ৩ জন।

গাইঘাটার বিএমওএইচ সুজন গায়েন বলেন, ‘‘কোনও ডেঙ্গি আক্রান্তের খোঁজ মিললে স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্তের বাড়ির ৫০ মিটারের মধ্যে আর কারও জ্বর আছে কি না, তা সমীক্ষা করছেন। পঞ্চায়েত কর্মীরা ৫০ মিটারের মধ্যে জমা জল থাকলে এবং মশার লার্ভা ধ্বংস করে দিচ্ছেন।’’ বনগাঁর বিএমওএইচ মৃগাঙ্ক সাহা রায় বলেন, ‘‘আশা ও আইসিডিএস কর্মীদের সঙ্গে পঞ্চায়েত কর্মীদের এক সঙ্গে বাড়ি বাড়ি সমীক্ষা করতে পাঠানো হচ্ছে। বাড়ির ছোটদের মশার লার্ভা চেনানো হচ্ছে। যাতে তারা এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে পারে।’’ প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও জেলার নানা প্রান্তে কোথাও গোপনে, কোথাও প্রকাশ্যে প্লাস্টিকের ব্যবহার চলছে। অভিযোগ, মুখে নালা সাফাইয়ের কথা বলা হলেও বিভিন্ন পুর এলাকায় তা সাফ হয়নি। অভিযোগ, মশা মারার কাজেও গতি আসেনি। তবে গাপ্পি মাছ ছাড়া হয়েছে কোথাও কোথাও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement