—প্রতীকী ছবি।
ত্রিকোণ প্রেমের জেরে প্রাক্তন প্রেমিকা ও তাঁর জেঠিমাকে খুন করেছিল সে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরের জোড়া খুনের ঘটনার তদন্তে নেমে মূল অভিযুক্ত সৌরভ মণ্ডলকে গ্রেফতার করার পরে এমনটাই জেনেছেন তদন্তকারীরা। রবিবার রাতে বিষ্ণুপুর থানা এলাকার জুলপিয়ায় এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ধরা হয় সৌরভকে। পুলিশের দাবি, দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদে খুনের কথা স্বীকার করেছে অভিযুক্ত।
গত শুক্রবার সন্ধ্যায় বিষ্ণুপুর থানার হাটখোলা গ্রামে বাড়ির পাশের পুকুর থেকে উদ্ধার হয় চুমকি নস্কর (১৯) নামে এক তরুণী এবং তাঁর জেঠিমা পূর্ণিমা নস্করের (৫৪) মৃতদেহ। এই ঘটনায় সৌরভের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন চুমকির বাবা প্রবীর নস্কর। ঘটনার পর থেকেই পলাতক ছিল সৌরভ।
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, সৌরভ ও চুমকি সহপাঠী ছিল। বছর চারেক আগে দু’জনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়। ইতিমধ্যে দু’বছর আগে পড়াশোনা ছেড়ে মুরগির মাংসের ব্যবসায় নামে সৌরভ। সম্প্রতি সৌরভ ও চুমকির বিয়েও ঠিক হয়েছিল। কিন্তু তারই মধ্যে আর এক তরুণীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ায় সৌরভ। যদিও সেই সম্পর্ক কয়েক মাসের বেশি টেকেনি। অন্য দিকে, চুমকির সঙ্গে অনুপ যাদব নামে স্থানীয় এক যুবকের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
তদন্তকারীদের দাবি, জেরায় অভিযুক্ত জানিয়েছে, নিজের প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ায় মাসখানেক আগে থেকে চুমকির সঙ্গে ফের মেলামেশা শুরু করে সে। সপ্তাহ তিনেক আগে চুমকিকে নিয়ে স্থানীয় একটি মেলায় গিয়েছিল সৌরভ। তখনই সে চুমকির মোবাইলে অনুপের ছবি দেখে। এর পর থেকেই ওই যুবককে খুন করার হুমকি দিতে শুরু করে সৌরভ। পুলিশকে অনুপ জানিয়েছেন, বেশ কয়েক বার তাঁর বাড়িতে চড়াও হয়ে তাঁকে মারধরও করেছিল ওই যুবক।
পুলিশ আরও জেনেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অনুপ ও চুমকিকে জুলপিয়ায় ডেকেছিল সৌরভ। কিন্তু তাঁরা যাননি। এর পরেই ওই সন্ধ্যায় প্রথমেঅনুপের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে গালিগালাজ করে সৌরভ। তার পরে চুমকির বাড়িতে এসে তাঁকে কিছুটা দূরে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে ওই তরুণীকে প্রথমে শ্বাসরোধ করে খুন করে সে। তার পরে ইট দিয়ে মাথায় একাধিক বার আঘাত করে মৃতদেহ পুকুরে ফেলে দেয়। এই ঘটনা চলাকালীন চুমকির গলারআওয়াজ পেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন তাঁর জেঠিমা পূর্ণিমা। প্রৌঢ়াকেও একই কৌশলে খুন করে সৌরভ।
তদন্তকারীদের দাবি, জেরায় সৌরভ জানিয়েছে, সে চুমকির সঙ্গে বচসার সময়ে তাঁর মোবাইলটি কেড়ে নিয়েছিল। চুমকি ও পূর্ণিমাকে খুন করার পরে ওই মোবাইল থেকেই অনুপকে ফোন করে। ওই যুবককে এই বলে হুমকি দেয় যে, এর পরে তাঁর পালা।
পুলিশ জেনেছে, দু’জনকে খুন করার পরে রক্তমাখা ইট নিয়ে অনুপের বাড়িতে হাজির হয়েছিল সৌরভ। কিন্তু আশপাশে লোকজন থাকায় অনুপের উপরে সে হামলা চালাতে পারেনি। এর পরেই বেপাত্তা হয়ে যায় অভিযুক্ত। তবে তার সঙ্গে চুমকির মোবাইলটি ছিল। সেই মোবাইলের টাওয়ার লোকেশনের সূত্রেই ধরা পড়ে সৌরভ।