স্বামী-স্ত্রীর গোলমাল মেটাতে দর ৫ হাজার

মহিলা জানান, ঝামেলা মিটিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শুরুতেই বলা হয়, হাজার পাঁচেক টাকা লাগবে। সেই টাকা দিয়েওছিলেন মহিলা। কিন্তু ঝামেলা তো মেটেইনি, উল্টে দফায় দফায় আরও হাজার হাজার টাকা বেরিয়ে যায় তাঁর।

Advertisement

দিলীপ নস্কর

ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৩৮
Share:

ধৃতেরা: ডায়মন্ড হারবারে— নিজস্ব চিত্র

স্বামী-স্ত্রীর কোন্দল মিটয়ে দেওয়ার নামে গুনতে হবে ৫ হাজার টাকা!

Advertisement

কথা হচ্ছিল সরিষাহাটের রামনগরের এক মহিলার সঙ্গে। বললেন, ‘‘স্বামীর সঙ্গে বনিবনা হচ্ছিল না। ভেবেছিলাম, কাছেই মহিলা সমিতি আছে। ওদের একবার সমস্যাটা বলে দেখি।’’ মহিলা জানান, ঝামেলা মিটিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শুরুতেই বলা হয়, হাজার পাঁচেক টাকা লাগবে। সেই টাকা দিয়েওছিলেন মহিলা। কিন্তু ঝামেলা তো মেটেইনি, উল্টে দফায় দফায় আরও হাজার হাজার টাকা বেরিয়ে যায় তাঁর।

পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাননি কেন?

Advertisement

মহিলার যুক্তি, ‘‘ওদের কথাবার্তা শুনে মনে হয়েছিল অনেক ক্ষমতা। পুলিশ-প্রশাসনকে পকেটে পুরে রেখেছে। তাই আর ঝঞ্ঝাটে পড়তে চাইনি।’’ তাঁর সামনেই আরও অনেকের থেকে পারিবারিক বিবাদ মিটিয়ে দেওয়ার নাম করে মহিলা সমিতির সদস্যেরা টাকা চেয়েছিল বলে জানালেন মহিলা।

আরও পড়ুন: হেলমেট ছাড়া তেল, বিপাকে পাম্প

সরিষাহাটের ‘সরোজিনী মহিলা সমিতির’ ৮ সদস্যকে বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অভিযোগ, পারিবারিক বিবাদ মেটাতে গেলে এক মহিলার কাছে ৫০ হাজার টাকা চাওয়া হয়। গয়না বেচে কিছু টাকা দিয়ে সে দিন সমিতির সদস্যদের হাত থেকে নিস্তার পেয়েছিলেন মহিলা। তারপরেও বাকি টাকা চেয়ে চাপ দেওয়া হচ্ছিল।

শুক্রবার ধৃতদের ডায়মন্ড হারবার আদালতে তোলা হলে সালাউদ্দিন দপ্তরি ও বিদিশা বিন্দুকে ৩ দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক। বাকিদের চোদ্দো দিন জেলহাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তদন্তে নেমে ওই সমিতির নানা কুকীর্তির কথা জানতে পারছে পুলিশ। কিন্তু এত দিন কেউ মুখ খোলেননি কেন? স্থানীয় একটি ক্লাবের সদস্যের কথায়, ‘‘সকলেই সব জানে। কিন্তু ওরা মহিলা বলেই কেউ ঘাঁটানোর সাহস পেত না। উল্টে কী না কী কেসে ফাঁসিয়ে দেবে!’’

এই সুযোগটা নিয়েই দিন দিন বাড়বাড়ন্ত হচ্ছিল সমিতির।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সরিষাহাটে বহু বছরের পুরনো সরকারি অনুমোদিত একটি মহিলা সমিতি রয়েছে। বছর তিনেক আগে ওই মহিলা সমিতির বেশ কয়েকজন সদস্য বেরিয়ে এসে ‘সরোজিনী মহিলা সমিতি’ গঠন করেন। ১৯১৫-১৬ সালে তা সরকারি অনুমোদন পায়। সরিষাহাট মোড়ের কাছে একটি দোতলা বাড়ির ভাড়া ঘরে অফিস চালু হয়। সূত্রের খবর, সমিতির মূল পান্ডা সালাউদ্দিন দপ্তরি ও বিদিশা বিন্দু।

পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে এটিএম কার্ড জালিয়াতি, ভুয়ো টিপ সই দিয়ে টাকা তোলা-সংক্রান্ত কিছু অভিযোগ উঠেছে নানা সময়ে। এ ছাড়া, কাজের প্রলোভন দেখিয়ে মহিলাদের দেহ ব্যবসায় নামানোর চেষ্টার অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। সমস্ত অভিযোগ লিখিত ভাবে না হলেও তদন্তে নেমে নানা সূত্রে তা নজরে আসছে পুলিশের।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেল, কেউ পারিবারিক বিবাদ মেটাতে সমিতির শরণাপন্ন হলে টাকা চাওয়া হত। এমনকী, নানা অছিলায় ভোটার কার্ড, ব্যাঙ্কের পাস বই, এটিএম কার্ড, আধার কার্ড হাতিয়ে নেওয়া হত। তা ব্যবহার করে চলত কারচুপি। অফিসটি আপাতত সিল করেছে পুলিশ। বাসিন্দারা অনেকে জানিয়েছেন, তল্লাশি হলে বহু লোকের পরিচয়পত্র মিলতে পারে সেখান থেকে। রামনগরের ওই মহিলা বলেন, ‘‘আমাকে দেহব্যবসায় নামার প্রস্তাবও দিয়েছিল সমিতির লোকজন।’’

সমিতির অফিস থেকে একশো মিটারের মধ্যে সরিষা পঞ্চায়েত অফিস। তাঁরা কি কিছুই জানতেন না? নাকি জেনেশুনেও দুর্নীতির আখড়া হয়ে ওঠা সমিতিকে চলতে দেওয়ায় মদত ছিল তাঁদের? মদত দেওয়ার প্রশ্ন নেই, জানাচ্ছেন উপপ্রধান নিমাই হালদার। তিনি বলেন, ‘‘কিছু কিছু কথা আমাদের কানে এসেছিল ঠিকই। কিন্তু কেউ লিখিত অভিযোগ না দেওয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement