fair price shop

সস্তার আলু কিনতে ভোর থেকে লাইন

ইতিমধ্যে আলুর চাহিদা পূরণ করতে জেলা কৃষি দফতরের পক্ষ থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় এফপিসি, জেলার নিয়ন্ত্রণ বাজার সমিতির মাধ্যমে কাকদ্বীপ, ডায়মন্ড হারবার, ক্যানিং, বাসন্তী, ভাঙড়, জয়নগর, মথুরাপুর সহ বিভিন্ন এলাকায় ৭০টি সরকারি সহায়ক মূল্য আলু বিক্রির কাউন্টার খোলা হয়েছে।

Advertisement

সামসুল হুদা

ভাঙড় শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২০ ০৩:২০
Share:

ভাঙড়ের পোলেরহাটে কৃষিজ বিপণন দফতরের স্টলের সামনে আলু কিনতে ভোর থেকে মানুষের ভিড়। নিজস্ব চিত্র।

ভোর সাড়ে ৪টের সময়ে লাইন দিয়ে সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ দীর্ঘ লাইন ঠেলে ৫ কেজি আলু কিনতে পারলেন পোলেরহাটের টোনা গ্রামের রহিমা বিবি। তাঁরই মতো বাড়িতে হেঁশেলের কাজ ফেলে রেখে আলু কিনতে লাইন দিচ্ছেন রুনা বিবি, চন্দনা মণ্ডল, জোহরা বিবিরা। বাড়ির পুরুষরাও আসছেন। পোলেরহাট আনাজ বাজারে কৃষিজ বিপণন দফতরের উদ্যোগে সরকারি ২৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করা হচ্ছে। সকাল ৭-১০টা পর্যন্ত সরকারি স্টল থেকে আলু কেনার ভিড় চোখে পড়ার মতো।

Advertisement

গত কয়েক দিন ধরে ভাঙড়ের বিভিন্ন বাজারে আলুর আকাল দেখা দিয়েছে। কিছু কিছু দোকানে আলু থাকলেও তা ৪৫-৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ক্যানিং, বাসন্তী সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে আলু চাহিদার তুলনায় জোগান কম। শীত পড়লেও এখনও জেলার সমস্ত বাজারে সে ভাবে নতুন আলু ওঠেনি। ক্যানিং বাজারে নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকা কেজি দরে। রহিমা বিবি, চন্দনা মণ্ডলরা বলেন, ‘‘আমরা খুবই গরিব। বাজার থেকে অত দাম দিয়ে আলু কেনা সম্ভব নয়। তাই আলো ফোটার আগে থেকে আলু কেনার জন্য লাইন দিয়েছি।’’

সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাঁকুড়াতে অভিযোগ করেছিলেন, ‘‘সাধারণ মানুষ যে আলুসিদ্ধ ভাত খাবে, তার জো নেই।’’ কেন্দ্র মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নিচ্ছে। তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন, আলু মজুত করা যাবে না। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সমস্ত স্টোর ফাঁকা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারপরেও অভিযোগ উঠছে, এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা আলুর কৃত্রিম অভাব তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছেন। সরকারি নির্দেশের পরেও প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় যে যার মতো করে চড়া দামে আলু বিক্রি করছেন।

Advertisement

এ বিষয়ে ভাঙড় ২ বিডিও কার্তিকচন্দ্র রায় বলেন, ‘‘আমরা ব্লক এলাকায় একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছি। খুব শীঘ্রই ব্লক এলাকার বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালানো হবে।’’

জেলা কৃষি বিপণন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাজারে যে আলু, পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে তা হিমঘরের মজুত করা। সেখান থেকে যে সমস্ত আলু, পেঁয়াজ খোলা বাজারে আসছে, তা কেউ মজুত করছে কিনা তা দেখার জন্য প্রশাসনিক ভাবে নজরদারি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে আলুর চাহিদা পূরণ করতে জেলা কৃষি দফতরের পক্ষ থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় এফপিসি, জেলার নিয়ন্ত্রণ বাজার সমিতির মাধ্যমে কাকদ্বীপ, ডায়মন্ড হারবার, ক্যানিং, বাসন্তী, ভাঙড়, জয়নগর, মথুরাপুর সহ বিভিন্ন এলাকায় ৭০টি সরকারি সহায়ক মূল্য আলু বিক্রির কাউন্টার খোলা হয়েছে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কৃষিজ বিপণন দফতরের আধিকারিক তমাল দাস বলেন, ‘‘এটা সত্যি যে বাজারে আলুর দাম অনেকটাই বেশি। অন্যান্য বার এই সময়ে আলুর এত দাম থাকে না। সরকারি ভাবে সমস্ত স্টোর খালি করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্টোর থেকে আলু খোলাবাজারে চলে এলে দাম অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে আমরা জেলার বিভিন্ন প্রান্তে দফতরের পক্ষ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রির ব্যবস্থা করেছি।’’ তিনি জানান, কালোবাজারি রুখতে প্রশাসনিক ভাবে টাস্কফোর্স গঠন করে নজরদারি চালানো হচ্ছে।

ভাঙড় ভেজিটেবিল প্রডিউসার কোম্পানির চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার খান বলেন, ‘‘আলু কেবল শীতের মরশুমে চাষ হয়। সারা বছরই আমরা হিমঘরের মজুত আলু খাই। তা ছাড়া, এই মুহূর্তে বাইরের রাজ্য থেকে আলু আমদানি করা যাচ্ছে না। চাহিদার তুলনায় জোগান কম হওয়ায় আলু, পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। তিনি আরও জানান, সরকারি সহায়ক মূল্যে আলু মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে কলকাতা সহ জেলায় ১১৭টি সুফল বাংলার স্টলের মাধ্যমে আলু বিক্রি করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা ভাঙড়ের বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় সরকারি মূল্যে আলু বিক্রির ব্যবস্থা করেছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement