ঘটনাস্থল: কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের রুইয়া এলাকার এই জায়গাতেই ঘটেছে দুর্ঘটনা। পরে সেখানে বেপরোয়া ভাবে রাস্তা রুখতে বসানো হয়েছে ব্যারিকেড। মঙ্গলবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
আচমকা বিকট জোরে একটা শব্দ শুনতে পেলাম। চমকে উঠে কাজকর্ম ফেলে কারখানার বাইরে বেরিয়ে দেখি, দূর থেকে লোকজন ছুটে আসছেন। আর আমার কয়েক হাত দূরেই কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারে সার্ভিস রোডে রক্তাক্ত অবস্থায় এ দিক-ও দিক পড়ে রয়েছে তিন জন স্কুলপড়ুয়া। তাদের মধ্যে একটি মেয়ের মাথা প্রায় পুরোটাই থেঁতলে গিয়েছে। আর একটি মেয়ে ও একটি ছেলে রক্তাক্ত অবস্থায় কাতরাচ্ছে। সেই সঙ্গেই দেখলাম, একটি লরি তীব্র গতিতে ব্যারাকপুরের দিকে চলে যাচ্ছে। তত ক্ষণে সামনের মোড় থেকেও লোকজন চলে এসেছেন ঘটনাস্থলে।
মঙ্গলবার দুপুরে ভেপার মোড়ে যে জায়গায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেখানেই এসে মিশেছে একটি উড়ালপুল। সেই কারণে ওই রাস্তা দিয়ে খুব দ্রুত গতিতে গাড়ি নামে। এ দিন দুপুরে গরম থাকায় রাস্তা ছিল জনবিরল। যে দু’-এক জন রাস্তার ধারে ছিলেন, তাঁরা জানালেন, চার জন পড়ুয়া একসঙ্গে এক্সপ্রেসওয়ে পেরোচ্ছিল। সেই সময়ে দ্রুত গতিতে লরিটিকে আসতে দেখে তাদের মধ্যে একটি মেয়ে রাস্তার মাঝেই দাঁড়িয়ে যায়। বাকি তিন জন ছুটে রাস্তা পেরোনোর চেষ্টা করে। কিন্তু উড়ালপুল থেকে প্রবল গতিতে নামা লরিটি নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে ধাক্কা মারে তাদের।
প্রতিদিন স্কুল ছুটির পরে সেন্ট জ়েভিয়ার্সের অনেক পড়ুয়াই এক্সপ্রেসওয়ে পেরিয়ে ভেপার মোড়ে আসে। সেখান থেকে কেউ ব্যারাকপুর, কেউ বা মুড়াগাছা যাওয়ার অটো ধরে। এ দিন ঘটনার পরেই খবর পেয়ে স্কুলের তরফে লোকজন ছুটে আসেন। সেই সময়ে সার্ভিস রোড ধরে ওই স্কুলেরই একটি বাস আসছিল। তাতেই ধরাধরি করে কোনও মতে তিন জনকে তুলে দেওয়া হয়। দেখে মনে হচ্ছিল, মাথা থেঁতলে যাওয়া মেয়েটি হয়তো আর বেঁচে নেই। বাকি দু’জনের অবস্থাও খুব খারাপ বলেই মনে হল। ওদের সেই সময়ে ব্যারাকপুরের গ্যালাক্সি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশ আসে।
আমার মতে, স্কুলপড়ুয়াদের এমন বিপজ্জনক ভাবে রাস্তা পারাপারের প্রবণতা বন্ধ করা দরকার। উড়ালপুলের নীচে তো আন্ডারপাস রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও স্কুলের অনেক ছেলেমেয়েই রাস্তা পারাপার করে বিপজ্জনক ভাবে। তাতেই আজ এত বড় বিপদ ঘটে গেল। চোখের সামনে ওই দৃশ্য এখনও ভুলতে পারছি না। লরির ধাক্কা লাগায় তিন জনই বেশ খানিকটা দূরে ছিটকে পড়েছিল। চার দিকে তখন শুধু রক্ত আর রক্ত।
এত বড় মাপের দুর্ঘটনা প্রথম ঘটল এখানে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েগুলোর এমন অবস্থা হল, ভাবতেও পারছি না। ঘটনার পরে পুলিশ এক্সপ্রেসওয়ে এবং সার্ভিস রোডের মাঝে বাঁশের ব্যারিকেড করে দিয়েছে। কিন্তু এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে, সেই প্রার্থনাই করি। স্কুল কর্তৃপক্ষেরও দেখা দরকার, যাতে পড়ুয়ারা সকলে আন্ডারপাস ব্যবহার করে।
(স্থানীয় গ্রিল কারখানার কর্মী)