—প্রতীকী চিত্র।
দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে তৃণমূলের জেতা গোসাবা পঞ্চায়েতে এখনও প্রধান-উপপ্রধান নির্বাচন এবং বোর্ড গঠন হল না। কবে হবে, সেই উত্তরও মিলছে না। পরিষেবা পেতে সমস্যায় পড়ছেন সাধারণ মানুষ।
গত ৯ অগস্ট ওই পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন হওয়ার কথা ছিল। নির্দল প্রার্থী বিকাশ নস্করকে প্রধান করার সিদ্ধান্ত নিয়ে গোলমাল বাধে তৃণমূলের মধ্যে। কিছু জয়ী তৃণমূল সদস্য বিকাশকে প্রধান করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু দলের নির্দেশ, যাঁরা নির্দল হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দলের প্রতীকে দাঁড়ানো প্রার্থীকে হারিয়েছেন, তাঁদের সমর্থন করা যাবে না। এই জটিলতায় বন্ধ হয়ে যায় প্রধান ও উপপ্রধান নির্বাচন। নতুন করে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর বিজ্ঞপ্তি জারি না করা পর্যন্ত বোর্ড গঠন হবে না বলেই ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর।
ওই পঞ্চায়েতের ১৮টি আসনের মধ্যে তৃণমূল জিতেছে ১৩টিতে। ৪টি আসনে জিতেছে নির্দল, একটিতে বিজেপি। বোর্ড গঠনের দিন বিকাশ দাবি করেন, ‘‘আমি প্রথম থেকে তৃণমূল করি। কিছু বিজেপির লোককে তৃণমূলের টিকিট দেওয়া হয়েছিল বলে আমাকে নির্দল হিসেবে লড়তে হয়েছে। দলকে সব জানিয়েছি। দল যা সিদ্ধান্ত নেবে তাই হবে।’’
বিকাশ গত বারওই পঞ্চায়েতের প্রধান ছিলেন। অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতিও ছিলেন। কিন্তু ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের পর গোসাবার তৎকালীন বিধায়ক জয়ন্ত নস্কর দুর্নীতির অভিযোগে বিকাশকে ওই দুই পদ থেকে সরিয়ে দেন। সে সময়ে দলের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়লেও গত বিধানসভা উপ-নির্বাচনের সময় থেকেই ফের দলীয় মিটিং-মিছিলে তাঁকে উপস্থিতি দেখা যাচ্ছিল।
ব্লক তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, যেখানে দলীয় প্রার্থীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, সেখানে নির্দল প্রার্থীকে প্রধান করার কোনও যুক্তি নেই। দলীয় প্রার্থীকে হারিয়ে যাঁরা ভোটে জিতেছেন, তাঁদের কেন দল সমর্থন দেবে? নির্দলদের প্রধান-উপপ্রধান করা হলে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাবে।
অন্যদিকে, বিকাশের সমর্থনকারী তৃণমূলের এক পঞ্চায়েত সদস্য বলেন, ‘‘যাঁদের নির্দল বলা হচ্ছে, তাঁরা তৃণমূলেরই লোক।’’ গোসাবার বিধায়ক সুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘নির্দল প্রার্থীকে প্রধান করার কোনও নির্দেশ দলের তরফে নেই।’’
গোসাবা ব্লক তৃণমূলের আর এক নেতা তথা জেলা পরিষদের সদস্য অনিমেষ মণ্ডল বলেন, ‘‘ভোটের আগেই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে নির্দেশ মিলেছিল, দলের বিপক্ষে যাঁরা লড়বেন, তাঁদের বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নেবে। বিষয়টি দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে। দলের নির্দেশ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’
পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন না হওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন গ্রামবাসী। স্থানীয় বাসিন্দা হরিপদ মণ্ডল, নবারুণ সর্দারেরা বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতে শংসাপত্র আনতে গেলে পাওয়া যাচ্ছে না। ‘দুয়ারে সরকার’ শিবির শুরু হয়েছে। প্রধান-উপপ্রধান না থাকায় সেখানেও সমস্যা হচ্ছে।’’এলাকার বিজেপি নেতা বিকাশ সর্দার এবং এসইউসিআই নেতা চন্দন মাইতি বলেন, ‘‘তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলের জেরে সমস্যা হচ্ছে সাধারণ মানুষের। সরকারি প্রকল্পের সুবিধা থেকে শুরু করে প্রধানের শংসাপত্র-সহ সব কাজ আটকে রয়েছে।’’