বেতনা নদীর উপর এমন স্থায়ী নির্মাণ ঘিরেও অভিযোগ উঠেছে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
পুলিশ ও ভূমি দফতরের নির্দেশে কিছুদিন বন্ধ ছিল। ফের বাগদার বেতনা (বেত্রাবতী) নদী দখল করে নির্মাণকাজের অভিযোগ উঠল। ক’দিন ধরে বাগদা বাজার সংলগ্ন হ্যারিসন রোড এলাকায় ওই নদীর জমি দখল করে বাঁশ-টিন দিয়ে বেশ কিছু দোকানঘর তৈরি করা হচ্ছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। তাঁদের ক্ষোভ, বারবার প্রকাশ্যে ওই নির্মাণকাজ চালানো হলেও প্রশাসন নির্বিকার।প্রায় একই রকম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাগদা থেকে নির্বাচিত জেলা পরিষদ সদস্য পরিতোষ সাহা। তিনি বলেন, ‘‘নদী দখল করে বেআইনি নির্মাণের খবর পাওয়ার পর পুলিশ প্রশাসন এবং ব্লক ভূমি দফতরকে একাধিকবার জানিয়েছিলাম। নিজে গিয়ে তো আর নির্মাণ ভাঙতে পারি না। পুলিশ প্রশাসন কী করছেজানি না।’’
ব্লক ভূমি দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত করে গোপন রিপোর্ট বিডিও-র কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিডিও সৌমেন্দু গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘ভূমি দফতরের তদন্ত-রিপোর্ট মহকুমাশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে। তিনিই পদক্ষেপ করবেন।’’
সংস্কারের অভাবে বেতনা দীর্ঘদিন মৃতপ্রায়। কচুরিপানায় ভরা। বাগদা বাজার সংলগ্ন এলাকায় ওই নদীর জমি দখল করে নির্মাণ নিয়ে স্থানীয়দের অভিযোগ পেয়ে গত ৩০ এপ্রিল সকালে পুলিশ গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। পুলিশ জানিয়েছিল, যাঁরা নির্মাণকাজ করছেন, তাঁদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে নথিপত্র নিয়ে দেখা করতে বলা হয়েছে। এর পরে ব্লক ভূমি দফতর থেকেও কর্মীরা গিয়ে নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
কিছুদিন কাজ বন্ধ থাকার পরে ফের শুরু হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। কয়েকজনের দাবি, শুধু অস্থায়ী নির্মাণই নয়, স্থায়ী নির্মাণও হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে ব্লক অফিসের দূরত্ব মেরেকেটে ৫০০ মিটার। প্রশাসনের নাকের ডগায় নদী জবরদখল হয়ে যাচ্ছে দেখেও কর্তাদের হুঁশ ফিরছে না বলে তাঁদের অভিযোগ।
যাঁরা ওই সব নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ, তাঁদের মধ্যে একজন বলেন, ‘‘বেতনা নদীর জমিতে প্রায় ৫০টি দোকান তৈরি হয়ে গিয়েছে। পুলিস ও ভূমি দফতরের নির্দেশমতো আমিও কাজ বন্ধ রেখেছিলাম। অন্যদের দেখাদেখি আবার শুরু করেছি। পুলিশ প্রশাসন মনে করলে ভেঙে দিতে পারে।’’
তবে, শুধু ওই বাজার এলাকাতেই নয়, ব্লকের নানা জায়গায় নদীকে রুদ্ধ করা হয়েছে। কোথাও মাটির বাঁধ দেওয়া হয়েছে, কোথাও নদীর জমি কেটে ছোট ছোট জলাশয় তৈরি করে মাছ চাষ করা হচ্ছে, এমনকি, নদীর মাটিও কাটা হচ্ছে বলে অভিযোগ।
একসময়ে বাগদা ব্লকের একাংশ এবং বাগদা বাজার এলাকার বর্ষার জল নিকাশির প্রধান মাধ্যম ছিল বেতনা। কিন্তু এখন নদী মৃতপ্রায় হওয়ায় জমা জল সেখানে প্রায় নামেই না। তার উপর নদী দখল হয়ে যাচ্ছে দেখে আপত্তি তুলেছেন গ্রামবাসীরা। তাঁরা জানান, কয়েক বছর আগেও নদী দখল করে বেআইনি নির্মাণের চেষ্টা হয়েছিল। তখন তাঁরা পুলিশ প্রশাসনের সাহায্য ওই কাজ বন্ধ করে দেন।
গ্রামবাসীদের আশঙ্কা, এ ভাবে বিনা বাধায় নদীর জমি দখল চলতে থাকলে এরপরে সংলগ্ন বাইপাস রাস্তাটিও দখল হয়ে যাবে। হাটের দিনগুলিতে বাগদা বাজারে যানজট তীব্র হবে।