PR Thakur College

রাজনীতি নয়, এখানে রাজহাঁসদেরই জয়জয়কার

রাজহাঁসের জলকেলির মনোরম দৃশ্য থেকে চোখ সরিয়ে পিছনে তাকালেই চোখে পড়বে বিরাট তেতলা বিল্ডিং— পিআর ঠাকুর কলেজ।

Advertisement

অঞ্জন সাহা

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:০৪
Share:

কলেজ চত্বরের পুকুরে ঘুরছে রাজহাঁস। নিজস্ব চিত্র।

Advertisement

আয়, আয়, আয়...।

বিশাল পুকুরের এপার থেকে পরিচিত গলায় চিৎকার শুনে একশোটি রাজহাঁস চমকে ওঠে। ওপার থেকে গলা বেঁকিয়ে তাকায় দূরে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটার দিকে।

Advertisement

হাঁসেদের একটানা চিৎকার থেমে গিয়েছে। মুহূর্তের নিস্তব্ধতা। তারপর কী মনে করে প্রথমে একটি-দু’টি, তারপর রাজহাঁসের গোটা দলটাই পাড় থেকে নেমে পড়ে জলে। বিরাট পুকুরটাতে সাঁতার কাটতে কাটতে দ্রুত পৌঁছয় চেনা মানুষটার সামনে।

সকাল থেকেই মাঠের ধান কাটা হয়েছে। আগের জমানা আর নেই। এখন যন্ত্রচালিত ধান ঝাড়াই মেশিনেই শুকনো খড় থেকে আলাদা করে নেওয়া হয় ধান। এবার ফলন অবশ্য ভাল নয়। তবু যতটুকু পাওয়া গিয়েছে, তাতেই রাজহাঁসের দলের জন্য খাবারের আয়োজন। শীতের মরসুমে ডিমও পেড়েছে ওরা। সেই ডিম ফোটাতে বিচুলির ব্যবস্থাও হয়েছে। পুকুরের পাড়ে দাঁড়িয়ে সে সব কিছুর তদারকি করছেন মাঝবয়সি মানুষটা।

এসব দেখে হয়তো শীতের দুপুরে কোনও খামারবাড়ির ছবি মনে ভেসে আসতে পারে। তবে এটা কোনও গ্রামের দৃশ্য নয়। রাজহাঁসের জলকেলির মনোরম দৃশ্য থেকে চোখ সরিয়ে পিছনে তাকালেই চোখে পড়বে বিরাট তেতলা বিল্ডিং— পিআর ঠাকুর কলেজ। আর তার সামনে, কলেজের চৌহদ্দীর ভিতরেই বিরাট পুকুরে দুধসাদা রাজহাঁসদের সাঁতার যে কারওই চোখ টেনে নেবে।

কলেজের অধ্যক্ষ স্বপন সরকার এখানে সহকর্মীদের নিয়ে অদ্ভুত উন্মাদনায় মেতে রয়েছেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়ে এসে কলেজের অধ্যক্ষের চাকরি। এলাকাটা যেহেতু ঠাকুরনগর, তাই মতুয়া সমাজকে নিয়ে দলীয় রাজনীতির টানাপড়েন সব সময়েই থাকে। তবে কলেজের ভিতরে একেবারেই ভিন্ন চিত্র। রাজনীতির উত্তাপের নামগন্ধ নেই, একেবারেই শান্ত পরিবেশ। আপাতত এখানে রাজহাঁসদের দেখভালেই মন দিয়েছেন অধ্যক্ষ। আর তাঁকে সাহায্য করছেন কলেজেরই অনেক কর্মী, শিক্ষক।

স্বপনবাবু জানান, কয়েক বছর আগে, কলেজের বিরাট পুকুরের শোভা বৃদ্ধি পাবে ভেবে তিনটি মাত্র রাজহাঁস জোগাড় করে এনেছিলেন তিনি। সযত্নে লালনপালন করা হয়েছে সেগুলিকে। তারপর ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানো। এখন পুকুরের ধারে তৈরি ঘর থেকে ১১০টা রাজহাঁস জলকেলি শুরু করলে যে কারও চোখ টেনে নেয়। এই শীতে রাজহাঁসেরা ডিম পেড়েছে। সেগুলি ফোটানোর ব্যবস্থাও করা হয়েছে। কলেজের প্রিন্সিপাল হিসাব করেন, সব যদি ঠিক ভাবে এগোয়, তাহলে কয়েকমাসের মধ্যেই অন্তত দেড়শো রাজহাঁস পুকুরে চড়তে পারবে। সেই স্বু্প্ন দেখতে দেখতে কলেজের জমিতে পালং শাকের বীজ ছড়িয়ে দেন তাঁর সতীর্থরা। পুকুরের পাড়ে লাগানো কাঁঠাল গাছের বাড়বাড়ন্তের দিকে তাকিয়ে থাকেন অধ্যক্ষ।

এই কলেজেই বছর কয়েক ধরে চলছে হরিচাঁদ গুরুচাঁদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস। রাজ্য সরকারের অধীনে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এলাকার পড়ুয়ারা ছাড়াও আসছেন বাইরের অনেকে। গড়িয়া থেকে হরিচাঁদ গুরুচাঁদ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা ও গণজ্ঞাপন বিভাগে পড়তে আসেন সায়ন দাস। সায়ন বলেন, ‘‘কলকাতা থেকে প্রথমবার যখন ঠাকুরনগরের পিআর ঠাকুর কলেজে পৌঁছলাম, এখানকার বিশাল পুকুর আর তাতে রাজহাঁসের চলাচল শুরুতেই চোখ টেনে নিয়েছিল। অন্য কোনও কলেজে এমন দৃশ্য ভাবাই যায় না। সত্যি, এখানে এলে মন ভাল হয়ে যায়।’’ সায়নই শুধু নয়, এখানকার প্রতিটি পড়ুয়াই একবাক্যে মেনে নেন কথাটা।

মতুয়া সমাজের ভোটকে নিয়ে উত্তপ্ত রাজনীতির ছবি নয়, এ যেন এক অন্য ঠাকুরনগর। যেখানে রাজনীতিকে ছাপিয়ে রাজহাঁসদেরই জয়জয়কার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement