নতুন মুখ ও মহিলা প্রার্থী বাড়ানোর কৌশলেই বাজিমাতের আশা বামেদের

পুরভোটের বৈতরণী পেরোতে এ বার কলকাতা মডেলের উপরেই ভরসা রাখছেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা বামফ্রন্ট নেতৃত্ব। ২৩টি পুরসভায় বামেদের প্রার্থিতালিকায় এ বার অর্ধেকের বেশি মহিলা প্রার্থী। অর্ধেকের বেশি প্রার্থীর বয়স ৪৫ বছরের কম।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৫ ০০:২৪
Share:

পুরভোটের বৈতরণী পেরোতে এ বার কলকাতা মডেলের উপরেই ভরসা রাখছেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা বামফ্রন্ট নেতৃত্ব। ২৩টি পুরসভায় বামেদের প্রার্থিতালিকায় এ বার অর্ধেকের বেশি মহিলা প্রার্থী। অর্ধেকের বেশি প্রার্থীর বয়স ৪৫ বছরের কম।

Advertisement

বনগাঁয় লোকসভা উপনির্বাচনের আগে প্রচারে এসে সিপিএমের জেলা সম্পাদক দর্শক আসনের দিকে তাকিয়ে বলেই ফেলেছিলেন, “এত বয়স্ক মানুষ কেন? আমাদের দলে তরুণ মুখ সব কোথায় গেল?” রাজ্য রাজনীতিতে পায়ের তলা থেকে ক্রমশ মাটি সরতে থাকায় বাম নেতৃত্ব এখন বুঝতে শুরু করেছেন, দলে নতুন মুখ না আনলে টিঁকে থাকাই মুশকিল।

সেই উপলব্ধির ভরসাতেই নয় নয় করে রাজ্যের ন’টি জেলার প্রবীণ সম্পাদকদের সরিয়ে নতুন মুখ আনা হয়েছে ইতিমধ্যেই। রাজ্য সম্পাদক পদেও বিমান বসুর বদলে সম্প্রতি সূর্যকান্ত মিশ্রকে আনা হয়েছে। অভিজ্ঞতা ও বয়সে তিনি কোনও অর্থে নবীন না হলেও রাজ্য সম্পাদকের মতো পদে বদল এনে দলের সব স্তরেই একটি পরিবর্তনের বার্তা দেওয়া গেল বলে মনে করেন সিপিএমের অনেকে। এ ক্ষেত্রে নেতৃত্বে বদল আনার ক্ষেত্রে যোগ্য লোক পাওয়া যে সমস্যা নয়, বরং চাই সদিচ্ছা সে কথাই প্রমাণ হল বলে মনে করেন দলের বহু প্রবীণ নেতাও। অর্ধেকের বেশি আসনে নতুন মুখ পাওয়া বামেদের এই ভাঙা বাজারে খুব সহজ ছিল না, এ কথা যেমন সত্যি, তেমনই লড়াই কঠিন জেনেও অনেকে দলের টিকিট পেতে আগ্রহী, সে কথাও ঠিক।

Advertisement

শুক্রবার বারাসতে সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ে পুরভোট নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে অবশ্য বামেদের পূর্ণাঙ্গ প্রার্থিতালিকা প্রকাশ করা হয়নি। তবে গৌতম দেবের অসুস্থতার ফলে সদ্য নিযুক্ত কার্যনির্বাহী সম্পাদক নেপালদেব ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, দলে নবীন মুখ এবং মহিলা প্রার্থীর সংখ্যা বেশি রাখাই এ বার তাঁদের পুরভোটে তাঁদের মূল রণকৌশল।

সিপিএমের জেলা নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী রঞ্জিৎ কুণ্ডু জানান, ভোটের দিনক্ষণ নিয়ে তাড়াহুড়ো করায় তাঁরা পূর্ণাঙ্গ প্রার্থিতালিকা এখনও তৈরি করে উঠতে পারেননি। তবে ৯৫ শতাংশ কাজই শেষ। কয়েক দিনের মধ্যেই তালিকা প্রকাশ করা হবে। তবে বাম শরিকদের মধ্যে আসন ভাগাভাগির হিসেব জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। রঞ্জিৎবাবু জানান, ২৩টি পুরসভার ৫৮৭টি আসনের মধ্যে সিপিএম লড়ছে ৪৭৭টি আসনে। সিপিআই লড়ছে ৬১টি আসনে। আরএসপিকে দেওয়া হয়েছে ১৩টি আসন। ফরওয়ার্ড ব্লকের জন্য ছাড়া হয়েছে ৩৪টি আসন। দমদম পৌর উন্নয়ন সমিতি লড়বে ২টি আসনে।

উল্লেখযোগ্য ভাবে, এ দিন আরএসপি-র কোনও প্রতিনিধি সাংবাদিক সম্মেলনে আসেননি। যার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, আরএসপি-র সম্মেলন চলছে। সে জন্যই তাঁদের কেউ আসতে পারেননি। কিন্তু ক’দিন আগেই আরএসপি-র বর্ষীয়ান নেতা ক্ষিতি গোস্বামী ফ্রন্টের অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন তোলেন। বামফ্রন্টকে ‘জগদ্দল পাথর’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। যার প্রেক্ষিতে আরএসপি-র প্রতিনিধিদের অনুপস্থিতি অন্য কোনও ইঙ্গিত বহন করছে না তো?

রঞ্জিৎবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, “ফ্রন্ট শরিকদের মধ্যে কোনও মতানৈক্য নেই। সকলে এক সঙ্গে মিলেই পুরভোটে লড়াই করা হবে।”

নানা ঘটনায় দলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রবীণ নেতা সরল দেবের। শেষমেশ বেশ কিছু দিন আগে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়।

যদিও সেই সরল দেবই এ দিন বামফ্রন্টের সম্মেলনে ফরওয়ার্ড ব্লকের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। রঞ্জিৎবাবু জানিয়েছেন, ফরওয়ার্ড ব্লক যাঁকে এ বার ভোটের দায়িত্ব দিয়েছে, তাঁকেই পাঠানো হয়েছে ওই দলের তরফে।

পুরভোটে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া বামফ্রন্টের এ বার আরও কিছু রণকৌশল নেওয়া হয়েছে। এক দিকে সারদা কেলেঙ্ককারি, খাগড়াগড় পর্ব বা রাজ্যের একের পর এক নারীনিগ্রহের মতো ঘটনায় বিরোধীদের অভিযোগের তোপ সামলেও তৃণমূল একের পর এক ভোটে ভাল ফল করে চলেছে। বনগাঁ লোকসভায় সদ্য শেষ হওয়া উপনির্বাচনের ফলেও তারই ছাপ। এ দিকে, রাজ্যে বিজেপি ক্রমশ প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়াতে গেলে ঘরোয়া কোন্দলকে যে আর কোনও মতেই প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না, তা বিলক্ষণ টের পাচ্ছেন বাম নেতারা।

যে কারণে, অশোকনগরের মতো এলাকায় বিবদমান দুই গোষ্ঠীর নেতা-নেত্রীদেরই প্রার্থী করা হয়েছে। হালিশহরে অনাস্থা ভোটে সে সব বাম কাউন্সিলর তৃণমূলের দিকেই ঝুঁকে ছিলেন, তাঁদেরও সকলকে এ বার প্রার্থী করা হচ্ছে বলে বামফ্রন্ট সূত্রে জানানো হয়েছে। সরাসরি দলীয় রাজনীতিতে যুক্ত নন, এমন অনেককে এ বার টিকিট দেওয়া হচ্ছে বলেও জানানো হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement