এজলাস বয়টকের ডাক দিয়েছেন কাকদ্বীপ আদালতের আইনজীবীরা। আইনি পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করলেন এক বিচারপ্রার্থী। তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন কাকদ্বীপ মহকুমা আদালতের পাঁচজন ল’ক্লার্কও।
প্রশান্ত করণ নামে ওই বিচারপ্রার্থী চাষবাস করেন। বাড়ি নামখানার চন্দনপিড়িতে। জায়গা-জমি নিয়ে শরিকদের সঙ্গে মামলা চলছে কয়েক বছর ধরে। প্রশান্তবাবুর কথায়, ‘‘২০ ডিসেম্বর মামলার দিন পড়েছিল। এসে দেখলাম বয়কট নিয়ে বারের বৈঠক চলছে। এ ভাবে হেনস্থা হতে হচ্ছে বলে মামলা করেছি।’’ বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিশীতা মাত্রে এবং বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর বেঞ্চে আবেদন করেছেন প্রশান্তবাবু-সহ ৬ জন।
যে পাঁচজন ল’ক্লার্ক মামলায় সামিল হয়েছেন, তাঁদেরই একজন নারায়ণ দাস বলেন, ‘‘আমরা ক’টাকা আর আয় করি? বয়কটের জেরে যদি সামান্য রোজগারের পথও বন্ধ হয়ে যায়, সংসার চালাব কী ভাবে? তাই এই মামলায় আমরাও যোগ দিয়েছি।’’
আবেদনকারীদের আইনজীবী সুমন সাহা বলেন, ‘‘যে কোনও আদালতেই আইনজীবীদের বয়কট অনৈতিক। এতে মক্কেলরা হেনস্থা হন।’’ শুনানির জন্য মামলাটি গৃহীত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সুমনবাবু। আরও জানিয়েছেন, আবেদনে বলা হয়েছে, যাতে আর কোথাও আইনজীবীরা কর্মবিরতি, এজলাস বয়কটের মতো পদক্ষেপ না করতে পারেন, সে জন্য উচ্চ আদালত এবং রাজ্য সরকার মিলে একটা সুরাহা করুক।
কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি গিরীশচন্দ্র গুপ্ত গত মাসে কাকদ্বীপ আদালত পরিদর্শনে এসে আইনজীবীদের ক্যান্টিন নীচের তলায় চালু করতে বলেন। কিন্তু কাকদ্বীপ আদালতের বিচারকদের আপত্তিতে তা আপাতত বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই গত বুধবার থেকে কাকদ্বীপের সমস্ত বিচারকের এজলাস বয়কট করছেন কাকদ্বীপ বারের বেশিরভাগ আইনজীবী। কাকদ্বীপ আদালত বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দেবপ্রকাশ জানা বলেন, ‘‘আইনি পথে যখন ল’ক্লার্কদের একটি অংশ গিয়েছে, আদালতের নোটিস পেলে আমরাও আইনি পথেই বয়কটের কারণ মহামান্য হাইকোর্টের কাছে তুলে ধরব।’’
এ ধরনের মামলা কার্যত নজিরবিহীন বলে জানিয়েছে রাজ্য বার অ্যাসোসিয়েশন। বারের সম্পাদক সুরঞ্জন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘মক্কেলের হেনস্থা হওয়ার অধিকার যেমন নেই, তেমনি আইনজীবীদের আন্দোলনের অধিকার রয়েছে। তবে দুইয়ের মধ্যে সমন্বয় করে চলতে হবে, যাতে বিচারব্যবস্থা সুষ্ঠু ভাবে চলে।’’