ধস: ডায়মন্ড হারবারে। দিন দশেকে মেরামতির কাজ শেষ হবে বলে কর্তৃপক্ষের আশ্বাস। —নিজস্ব চিত্র
রাস্তায় ধস নেমে গাড়ি চলাচল বন্ধ। এই পরিস্থিতিতে মাথায় হাত পড়েছে ব্যবসায়ী, কৃষক, পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত বহু মানুষের। নিত্যযাত্রীরাও সমস্যার কথা ভেবে দুশ্চিন্তায়।
কাকদ্বীপ মহকুমায় রয়েছে বকখালি পর্যটন কেন্দ্র, হেনরিজ আইল্যান্ড, মৌসুনি পর্যটন কেন্দ্র। সাগরে কপিল মুনির মন্দির। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার রায়দিঘিও। প্রায় সারা বছর ধরে বকখালি পিকনিক স্পটে কলকাতা-সহ বিভিন্ন জেলার পর্যটকেরা গাড়ি নিয়ে বেড়াতে আসেন। তাঁরা কলকাতা থেকে সরাসরি জাতীয় সড়ক ধরে নামখানা হয়ে বকখালিতে পৌঁছন। এ বার কিছুটা হলেও সমস্যায় পড়বেন তাঁরা। কারণ, জাতীয় সড়কে ধস নামায় ঘুরপথে, অর্থাৎ আমতলার শিরাকোল হয়ে জাতীয় সড়কের হটুগঞ্জ মোড় হয়ে পৌঁছতে হবে বকখালি, সাগরের কপিল মুনির মন্দিরে। ওই রাস্তা ভাল নয়, সংকীর্ণও।
এখন চলছে ইলিশের মরসুম। সাগর, নামখানা, পাথরপ্রতিমা ও কাকদ্বীপ এলাকা থেকে গভীর সমুদ্রে যাওয়া মৎস্যজীবীরা মাছ ধরে ফিরে এসে ওই এলাকার বিভিন্ন ঘাটে ঢোকেন। সেখান থেকে গাড়িতে করে মাছ চলে আসে ডায়মন্ড হারবারের পাইকারি বাজার নগেন্দ্রবাজারে। বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারি মৎস্য ব্যবসায়ীরা মাছ নিয়ে যান এখান থেকে। জাতীয় সড়কে ধস নামায় সঙ্কটে পড়বেন তাঁরাও। কলকাতা থেকে আসা পাইকারি মাছ বিক্রেতাদের এ বার নগেন্দ্রবাজারে আসতে হলে আমতলার শিরাকোল হয়ে হটুগঞ্জ দিয়ে আবার ডায়মন্ড হারবার রোড ধরে প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরপথে পৌঁছতে হবে নগেন্দ্রবাজারে। এ ছাড়া, কাকদ্বীপ, নামখানা এলাকার বাসিন্দাদের পাইকারি সমস্ত রকম সরঞ্জাম কিনতে কলকাতা যেতে হলে হটুগঞ্জ মোড় হয়ে শিরাকোল থেকেই জাতীয় সড়ক ধরে পৌঁছতে হবে। এতে সময় লাগবে বেশি। খরচও বাড়বে।
ডায়মন্ড হারবার আসতে হলে অনেক ঘুরপথে পৌঁছতে হবে। পূর্ব মেদিনীপুরের অনেক যুবক-যুবতী মথরাপুর, রায়দিঘি, কাকদ্বীপ, নামখানা, পাথরপ্রতিমা এলাকায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তাঁরা কুমড়োহাটি জেটিঘাট থেকে হুগলি নদী পার হয়ে ডায়মন্ড হারবার জেটিঘাটের ওঠেন। ওই জেটিঘাটের পাশেই মোড় থেকে বাসে করে কাকদ্বীপ, নামখানা, সাগর, পাথরপ্রতিমা ও রায়দিঘি এলাকায় পৌঁছতেন অনেকে। এ বার তাঁরাও পড়বেন সঙ্কটে। তাঁদের ডায়মন্ড হারবারের জেটিঘাট মোড়ের পাশে মহকুমাশাসকের অফিসের পিছনের সরু রাস্তা ধরে পৌঁছতে হবে পিকনিক গ্রাউন্ড মোড়ের কাছে। সেখান থেকে বাস ধরতে হবে।
একই অবস্থা হবে ডায়মন্ড হারবার মহকুমা থেকে কাকদ্বীপ মহকুমা এলাকায় যাতায়াতের। কাকদ্বীপ মহকুমা বা রায়দিঘি, কুলপি, মন্দিরবাজার, মথুরাপুর এলাকা থেকে যে সব রোগীরা ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতাল আসেন, তাঁদের সমস্যা হবে আরও তীব্র। গ্রামের মধ্যে গলি রাস্তা ধরে পৌঁছতে হবে তাঁদের। সে সব রাস্তার অবস্থাও তেমন ভাল নয়।
নিয়ন্ত্রণ: গার্ডরেল বসিয়ে আটকানো হয়েছে যানবাহন। —নিজস্ব চিত্র
ডায়মন্ড হারবারের পর্যটন ব্যবসায়ী মানস মজুমদার বলেন, ‘‘এখান দিয়ে বড় গাড়ি যদি পারাপার করতে না পারে, তা হলে ব্যবসায়ীদের বিপদ। পর্যটন এলাকায় ছোট দোকানদারেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’’ কাকদ্বীপের পাইকারি আলু ব্যবসায়ী সন্দীপ জানার কথায়, ‘‘আমরা কলকাতা থেকে ট্রাকে করে আলু আনি। এখান থেকে তা বিভিন্ন ব্লকে ছড়িয়ে যায়। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে আমরাও সমস্যায় পড়ব।’’ প্রশাসনের কাছে ব্যবসায়ীদের অনুরোধ, দ্রুত যেন মেরামতি করা হয়।
পূর্ত দফতর যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মেরামতির কাজ শুরু করেছে। আপাতত যে অংশে ধস নেমেছে, তার পাশে নদীতে একটি বার্জ এনে রাখা হয়েছে। যাতে নদীর ঢেউ এসে আঘাত না করে।