ফারুকউদ্দিন ও তাঁর পরিবার।
এ যেন এক দম বন্ধ করা রুদ্ধশ্বাস গল্প! জীবনতলা থেকে কাজে তামিলনাড়ুতে যাওয়া এক পরিযায়ী শ্রমিক ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের কারখানা কর্তৃপক্ষ আটকে রাখে বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত জীবনতলা থানার উদ্যোগে সেখানকার কাঙ্গায়াম থানার পুলিশের চেষ্টায় বুধবার ওই পরিবারের সদস্যদের উদ্ধার করা হয়। পুলিশ কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা চালু করেছে।
এলাকায় কোনও কাজ পেয়ে মাসখানেক আগে এক ঠিকাদারের সঙ্গে কাঙ্গায়াম পাড়ি দিয়েছিলেন জীবনতলা থানার ঢুঁড়ি এলাকার মাষিয়ারাহাটের বাসিন্দা ফারুকউদ্দিন লস্কর, তাঁর স্ত্রী মুর্শিদা লস্কর, তাঁদের দুই মেয়ে ফারজানা লস্কর ও ফারবিনা লস্কর। সঙ্গে ছিলেন ফারুকের ভাই আমির হোসেন লস্কর। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানে ফারুক ও তার ভাই নারকেল ছোবড়া থেকে দড়ি তৈরির একটি কারখানায় কাজে যোগ দেন।
ফারুকের অভিযোগ, দৈনিক ৮০০ টাকা মজুরিতে কাজে দিলেও তাঁদের দেওয়া হচ্ছিল ৩৫০ টাকা। তাঁদের প্রচণ্ড পরিশ্রম করানো হত। প্রতিবাদ করলে চলত অত্যাচার। তাঁরা কাজ ছেড়ে দেওয়ার কথা বললে ফারুক এবং তাঁর পরিবারের লোকেদের একটি ঘরে আটকে রাখা হয়। ঢুঁড়ি থেকে কারখানা যাওয়ার জন্য মাথা পিছু প্রচুর টাকা ভাড়া দিতে বলা হয় তাঁদের। দিন সাতেক আগে কাজের সময় যন্ত্রে ফারুকের আঙুল কেটে বাদ যায়। স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। দিন দু’য়েক পরে ছাড়া পাওয়ার পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা খরচ বাবদ ৩০ হাজার টাকা দাবি করে।
অভিযোগ, অক্ষমতার কথা জানালে ফারুককে বলা হয়, যতদিন না ওই টাকা শোধ হবে, ততদিন বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করতে হবে তাঁদের। তাঁরা প্রতিবাদ জানালে নানা ভাবে অত্যাচার শুরু হয়। কারখানা কর্তৃপক্ষ একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়ে সেখানে চিকিৎসার টাকা জমা করতে বলে। ফারুক ফোনে পরিজনদের টাকা পাঠানোর কথা বলেন। এই ঘটনার পরে তাঁর জামাইবাবু রজব আলি লস্কর জীবনতলা থানায় বিষয়টি জানান। তদন্তে নামে বারুইপুর পুলিশ।
জীবনতলা থানার পুলিশ ফোন করলে ফারুক জানান, নিরাপত্তারক্ষী দিয়ে তাঁদের আটকে রাখা হয়েছে। সঠিক ঠিকানাও তিনি পুলিশকে জানাতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ফারুকের চিকিৎসার বিলের সূত্র ধরে সেখানকার ঠিকানা জানতে পারে পুলিশ। তার পরেই বারুইপুরের পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন ত্রিপুর জেলার পুলিশ সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু কাঙ্গায়াম থানা ফারুকের কথা বলতে গিয়ে ভাষা সমস্যায় পড়ে। শেষ পর্যন্ত কনফারেন্স কলে দোভাষির কাজ করেন জীবনতলা থানার ওসি সমরেশ ঘোষ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে পুলিশ ফারুকদের খুঁজে পায়নি। অভিযোগ, পুলিশ আসছে জানতে পেরে ফারুকদের পাশের একটি ঘরে সরিয়ে দেওয়া হয়। তাঁদের খুঁজে না পেয়ে পুলিশ ফিরে যাচ্ছে দেখে ফারুক কোনও রকমে জীবনতলা থানার ওসিকে ফোন করে তাঁদের ঠিকানা বদলের কথা জানান। চিৎকার জোড়েন ফারুক ও তাঁর পরিবারের সদস্যেরা। শেষ পর্যন্ত এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে একটি ঘর থেকে ফারুকউদ্দিন ও তাঁর পরিবারকে উদ্ধার করে কাঙ্গায়াম থানার পুলিশ। বুধবার বিকেলে তাঁদের বাসে তুলে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে জীবনতলার থানার পুলিশ।