পঞ্চায়েত স্তরে তৃণমূলের জনপ্রতিনিধি, বিধায়কের বিরুদ্ধেও মানুষের ক্ষোভ বেড়েছে ।
১৯৯৮ সালে তৃণমূল গঠনের পর থেকেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার নানা প্রান্তে শক্তিবৃদ্ধি করতে থাকে তারা। পঞ্চায়েত ভোটে কুলপি ব্লকের ১৪ পঞ্চায়েতে মধ্যে ৬টি দখল করে তৃণমূল। ২০০১ সালে বিধানসভা ভোটেও তৃণমূল প্রার্থী যোগরঞ্জন হালদার জয়ী হন। ২০০৮ সালে ৯টি পঞ্চায়েত এবং কুলপি পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষমতা আসে ঘাসফুল শিবিরের হাতে। ২০০৬ সালে বামেদের কাছে পরাস্ত হয়েছিলেন যোগরঞ্জন।
২০১১ সালে তৃণমূল আরও শক্তিশালী হয় এই এলাকায়। ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত ভোটে ১৪টির মধ্যে ১৩টি দখল করে তৃণমূল। একটি বিজেপির দখল করলেও পরে দলবদলের ফলে সেটিও তৃণমূলের হাতে আসে। পঞ্চায়েত সমিতিতে ৪১টি আসনের মধ্যে ৪টি মাত্র পেয়েছিল বিজেপি। ২০১১ সাল থেকে পর পর তিন বার এই কেন্দ্রে বিধানসভা ভোটে জয়ী হন যোগরঞ্জন।
তবে শক্ত গড়েও ফাটলের লক্ষণ স্পষ্ট। গত কয়েক বছরে পঞ্চায়েত স্তরে তৃণমূলের জনপ্রতিনিধি, বিধায়কের বিরুদ্ধেও মানুষের ক্ষোভ বেড়েছে বলে দলের অন্দরেই গুঞ্জন শোনা যায়। মাথা চাড়া দিয়েছে গোষ্ঠীকোন্দল। আর এই সুযোগ ক্রমশ শক্তি বাড়াচ্ছে বিজেপি, সিপিএম এবং আইএসএফ। কুলপি ব্লকে ১৪টি পঞ্চায়েতে ১৯৯টি আসন ছিল। এখন বেড়ে ২৫২। পঞ্চায়েত সমিতিতে ৪১ জন সদস্য ছিলেন। একটি বেড়েছে। জেলা পরিষদে ৩টি আসনই আছে। স্থানীয় সূত্রের খবর বিধায়কের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণের অভিযোগ ঘিরে কর্মীদের একাংশ বীতশ্রদ্ধ। পুরনো বহু বিধায়কের পাশ থেকে সরে গিয়েছেন। পঞ্চায়েত সমিতি, গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যেরাও অনেকে নিষ্ক্রিয়। স্বজনপোষণ, আমপানে ক্ষতিপূরণ দুর্নীতি, আবাস যোজনা দুর্নীতি, বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতা-সহ নানা সরকারি প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে এই ব্লকে। অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে। জনপ্রতিনিধিরা মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন বলেও অভিযোগ।
২০১৮ সালে পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র তোলা এবং জমা দেওয়া নিয়ে নানা ভাবে দলের ভিতরেই সংঘর্ষে জড়িয়েছিল তৃণমূল। বিরোধীরও সন্ত্রাসের বহু অভিযোগ তুলেছেন নানা সময়ে। বিধায়কের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণের অভিযোগও উঠেছে। এক সময়ে দলের সামনের সারিতে থাকা নিরঞ্জন মাঝি, প্রদ্যোৎ মণ্ডল, জেলা পরিষদের সদস্য পূর্ণিমা হাজারিদের সঙ্গে বিধায়কের দূরত্ব তৈরি হয়েছে বলে দলেরই একাংশের মত। এই পরিস্থিতিতে প্রায় ৩৫ শতাংশ সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই ব্লকে বিরোধীরা ঘর গোছানোর চেষ্টা শুরু করেছে। বড় সভা-সমিতি চোখে না পড়লেও বাম ও আইএসএফের ঘরোয়া বৈঠক চলছে। শাসক দলের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলিই নতুন করে আলোচনায় তুলে আনছেন তাঁরা। অনুন্নয়নের অভিযোগ নিয়েও আলোচনা চলছে।
সিপিএমের এরিয়া কমিটির সম্পাদক সমীর হালদার বলেন, ‘‘গত পঞ্চায়েতে ভোটে সন্ত্রাস হয়েছে। প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র তোলা বা জমা দিতে পারেননি। সেই ক্ষোভ মানুষের মধ্যে রয়েছে। বিধায়কের পরিবারের ভাই-দাদা সহ অনেকে দলের বিভিন্ন পদে রয়েছেন। দলটাই নানা দুর্নীতিতে জড়িত। ফলে ওদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন মানুষ।’’ তাঁর দাবি, পঞ্চায়েত স্তরে তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের অনেকে তলায় তলায় বামেদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।আইএসএফের গতিবিধি চোখে পড়ছে এখানে। নিয়মিত সভা-সমিতি করছে তারা।
দলের নেতা নুর সালাম গাজি বলেন, ‘‘মানুষ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। তৃণমূল আকন্ঠ দুর্নীতিতে ডুবে রয়েছে। আমরা ভোটারদের সে সব বোঝাচ্ছি। ভাল সাড়া মিলছে।’’ তবে তুলনায় অগোছাল দেখাচ্ছে বিজেপিকে। সব ক্ষেত্রে বুথভিত্তিক কমিটি তৈরি করতে পারেনি তারা। নেতৃত্বের অভাব আছে বলে মানেন স্থানীয় পদ্ম শিবিরের অনেকে।
যদিও বিজেপির সুন্দরবন সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক বিকাশ মণ্ডলের দাবি, ‘‘নিয়মিত সভা-সমিতি করছি। প্রতিটি বুথে কমিটি তৈরি হয়েছে। আগের নির্বাচনগুলিতে ভাল ফল করেছিলাম। তৃণমূলে যে সকলেই দুর্নীতিগ্রস্ত, গত দু’বছরে মানুষ জেনে গিয়েছেন। ফলে পঞ্চায়েত ভোটে আমরা বাড়তি সুবিধা পাব।’’
বিরোধীদের সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে যোগরঞ্জন বলেন, ‘‘আমাদের কোনও গোষ্ঠীকোন্দল নেই। মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। দুর্নীতিও হয়নি। মানুষকে পাশে নিয়ে আমরা রাজনীতি
করি।’’ পঞ্চায়েতে তাক লাগানো
ফল করবে তৃণমূল, দাবি
যোগরঞ্জনের।