অতি লোভে ভাতা নষ্ট! শুধু ভাতাই নয়, সামাজিক সম্মানেরও দফারফা হতে বসেছে প্রবীণ শিক্ষকের।
উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরের একটি স্কুলের ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রথম বার পারিবারিক আয় গোপন করে মেয়ের জন্য কন্যাশ্রী ভাতার ব্যবস্থা করেছিলেন। দ্বিতীয়বার আবার মেয়ের বয়স ভাঁড়িয়ে ভাতার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করেন তিনি।
বিশেষ সূত্রে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের কানে উঠেছে সে কথা। জেলাশাসকের দফতর থেকে ইতিমধ্যেই তদন্তের ভার দেওয়া হয়েছে শিক্ষা দফতরকে। জেলা স্কুল পরিদর্শক মলি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তদন্ত চলছে। মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে রিপোর্ট দেওয়া হবে।’’ রিপোর্ট পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন পর্ষদ সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়।
যাঁর এমন আচরণে চোখ কপালে উঠেছে সকলের, সেই শিক্ষকের প্রতিক্রিয়া মেলেনি। মঙ্গলবার স্কুলেও আসেননি তিনি। ফোন করা হলেও ধরেননি। এ বিষয়ে স্কুল পরিচালন সমিতির কেউ মুখ খুলতে চাননি।
ওই শিক্ষকের মেয়ে তাঁরই স্কুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। পরে এলাকার অন্য একটি স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে কলেজে পড়ছে। অন্য স্কুলটিতে পড়াকালীন ২০১৫-তে ওই কিশোরীর নামে কন্যাশ্রীর ভাতার আবেদন করা হয়। দু’দফায় ৫০০ টাকা করে এবং ১৮ বছর হওয়ার পরে এ বছরের গোড়ায় ২৫ হাজার টাকার অনুদান মঞ্জুর হয় মেয়েটির নামে।
কিন্তু পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্যাশ্রী প্রকল্পের নিয়ম হল, যে সব পরিবারের বার্ষিক আয় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার কম, কেবলমাত্র সেই সব পরিবারের মেয়েরাই ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবে। বর্ষীয়ান শিক্ষক হিসাবে মেয়ের বাবার আয় অবশ্য মাসে প্রায় ৭০ হাজার টাকা!
তা হলে কী ভাবে কন্যাশ্রীর জন্য আবেদন করল তার মেয়ে? তথ্য ঘেঁটে জানা গিয়েছে, এ ক্ষেত্রে মেয়ের মাকে অভিভাবক হিসাবে দেখানো হয়েছে, যাঁর পারিবারিক আয় বলা হয়েছে, বছরে ১ লক্ষ টাকার কম!
কন্যাশ্রী প্রকল্পের আরও নিয়ম হল, ওই ভাতার জন্য একবারই আবেদন করা যাবে। অভিযোগ, সেই নিয়মেরও ধার ধারেননি শিক্ষক। নিজের স্কুল থেকে এ বছর ফের মেয়ের নামে কন্যাশ্রীর টাকার আবেদন করেন তিনি। কিন্তু এত দিনে মেয়ের বয়স আঠারো পেরিয়েছে। অভিযোগ, মেয়ের জন্মের ভুয়ো শংসাপত্র জমা দিয়ে তাকে নিজের স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী হিসাবে দেখিয়ে টাকার আবেদন করেন ওই শিক্ষক। মেয়েটির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে দেওয়া আধার কার্ড থেকে সঠিক বয়স জানাজানি হয়।