আবহাওয়া খারাপ। এখনই সমুদ্রে যেতে পারছেন না মৎস্যজীবীরা। —নিজস্ব চিত্র
একেক বার বড় ধরনের বিপর্যয় হয়। আর নতুন করে সামনে আসে প্রশাসনের ঢিলেঢালা দিকগুলি। সামনে আসে মৎস্যজীবীদের নানা দিকে সচেতনতার অভাবের কথাও।
পরিচয়পত্র কাছে রাখা বাধ্যতামূলক মৎস্যজীবীদের। এ ছাড়া, লাইফ জ্যাকেট, বয়া, লগবুক প্রভৃতিও থাকার কথা ট্রলারে। কতজন মৎস্যজীবী সমুদ্রে যাচ্ছেন, কবে ফিরবেন, ট্রলারে কত জ্বালানি, বরফ নেওয়া হয়েছে— সে সব বিশদে লেখার কথা লগবুকে। কিন্তু সব দিকেই নানা ধরনের ঢিলেঢালা মনোভাব চোখে পড়ে।
পরিচয়পত্রের কথাই ধরা যাক। কেন্দ্রীয় সরকারের মৎস্য দফতরের অধীনে কোনও এজেন্সির মাধ্যমে মৎস্যজীবীদের পরিচয়পত্র দেওয়া হয়। ভোটার কার্ড, আধার কার্ড-সহ নথিপত্র দিলে বায়োমেট্রিক পরিচয়পত্র তৈরি হয়। কিন্তু কয়েক বছর ধরে আবেদন করেও পরিচয়পত্র দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ মৎস্যজীবীদের। সুন্দরবন এলাকায় থেকে প্রায় আড়াই হাজার ট্রলার ফি মরসুমে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যায়। ট্রলার পিছু গড়ে ১৬ জন করে মাঝি, মৎস্যজীবী থাকেন। সব মিলিয়ে সংখ্যাটা প্রায় ৪০ হাজার।
বিস্বজিৎ দাস, বাসুদেব দাস, অনুপ বড়াল, উত্তম দাসদের মতো অনেক মৎস্যজীবী ক্ষোভের সঙ্গে জানালেন, পরিতচয়পত্র না থাকায় তাঁদের সমস্যার কথা। জানা গেল, পরিতয়পত্র না থাকলে উপকূল রক্ষী বাহিনীর কাছে বকাঝকা শুনতে হয়। কোনও ভাবে বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে পড়লে ভোগান্তির শেষ থাকে না। সেখানে মারধরও খেতে হয় অনেককে। পরিচয়পত্র না থাকায় নানা সরকারি সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হন মৎস্যজীবীরা। ইউনিয়নের কর্তারা সব জেনেও উদ্যোগ করেন না বলে অভিযোগ মৎস্যজীবীদের।
সুন্দরবন সামুদ্রিক মৎস্যজীবী শ্রমিক ইউনিয়নে সম্পাদক সতীনাথ পাত্রের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারের এজেন্সির মাধ্যমে তৈরি পরিচয়পত্র এলে তা পৌঁছে যায় মৎস্যজীবীদের কাছে।
কিন্তু গত তিন বছর ধরে কোনও পরিচয়পত্র দেওয়া হচ্ছে না। পাশাপাশি তাঁর দাবি, দুর্ঘটনা ঘটলে ক্ষতিপূরণ পেতে অসুবিধা হয় না।
পরিচয়পত্র যে সকলকে দেওয়া যায়নি, তা মেনে নিয়েছেন ডায়মন্ড হারবারের সহ মৎস্য অধিকর্তা (সামুদ্রিক) জয়ন্ত প্রধান। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের এজেন্সির মাধ্যমে পরিচয়পত্র দেওয়া হত। কিছু সমস্যার জন্য তা বন্ধ রয়েছে। পরিচয়পত্র দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’’
উপকূল রক্ষী বাহিনী, মৎস্য দফতর, আবহাওয়া দফতর সকলেই বার বার লাইফ জ্যাকেট, বয়া-সহ নানা প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম রাখার উপরে জোর দেন ট্রলারে। কিন্তু খামিত আছে দেখভালে। ফলে সব মৎস্যজীবী লাইফ জ্যাকেট পরতেই স্বচ্ছন্দ নন বলে জানা গেল। মৎস্যজীবীদের কারও কারও আবার অভিযোগ, কোনও কোনও ট্রলার মালিক জ্যাকেট নেন না। কেউ নিলেও হয় তো তা বস্তাবন্দি করে ফেলে রাখা হয়। জয়ন্ত বলেন, ‘‘এই বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। সকলকে জানিয়ে দিয়েছি, লাইফ জ্যাকেট ও বয়া কাছে রাখতেই হবে।’’ বিভিন্ন ঘাটে গিয়ে বিষয়টি তিনি পরিদর্শন করছেন বলেও জানিয়েছেন।