পুলিশি-তদন্তে স্বচ্ছতার স্বার্থে সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি নির্দেশ দিয়েছে, কোনও থানায় এফআইআর দায়ের হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সেটা সরকারি ওয়েবসাইটে দিতে হবে। নভেম্বর থেকেই সেটা কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু কাকদ্বীপ মহকুমার থানাগুলিতে সেই নির্দেশ কতখানি কার্যকর করা যাবে সেই নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।
কাকদ্বীপ মহকুমার থানাগুলিতে ইন্টারনেট পরিষেবা দুর্বল। কোথাও কোথাও জরুরি ফাইল আপলোড করতে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। থানাগুলিতে বেশিরভাগ সময়ে বিদ্যুৎ থাকে না। কাকদ্বীপ মহকুমার থানাগুলিতে সিমকার্ডযুক্ত ‘ডঙ্গেল’ দিয়ে ইন্টারনেট করতে হয়। গোবর্ধনপুর উপকূল থানার এক অফিসার বলেন, ‘‘থানা থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য পাঠানো করা সমস্যার ব্যাপার। কারণ দিনের বেশিরভাগ সময়েই ইন্টারনেট সংযোগ থাকে না।’’ বকখালির মতো পর্যটনকেন্দ্র যার আওতায় সেই ফ্রেজারগঞ্জ থানায় প্রতি দিন প্রায় ১২ ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকে না। ফলে সে সময়ে ইন্টারনেটের নেটওয়ার্ক মেলে না বললেই চলে। প্রায় একই সমস্যা সাগর উপকূল থানা এলাকায়। সংযোগ না থাকায় অনেক সময়ে আলিপুর থেকে কাকদ্বীপে উজিয়ে এসে জরুরি বার্তা ডাউনলোড করতে হয়।
সম্প্রতি বিধানসভার স্ট্যান্ডিং কমিটি (স্বরাষ্ট্র) জেলার থানাগুলির পরিকাঠামো খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করেছে। ওই কমিটির কর্তা তথা ফলতার বিধায়ক তমোনাশ ঘোষ বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনেই থানাগুলির পরিকাঠামো দেখা হবে। থানাগুলির কী কী প্রয়োজন, সেটি জানতে চাওয়া হবে। সেই অনুযায়ী বিধানসভায় রিপোর্ট পাঠানো হবে।’’ জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর কয়েক ধরে কাকদ্বীপ মহকুমার থানাগুলিতে দৈনিক জেনারেল ডায়েরি (জিডি) এবং এফআইআরের সংখ্যা বেড়েছে। বর্তমানে এই মহকুমায় থানা পিছু প্রতি সপ্তাহ প্রায় ২০০টি জিডি এবং ২০-২৫টির মতো এফআইআর হয়। মহকুমার বেশিরভাগ থানায় মাত্র একটি করে কম্পিউটার রয়েছে। সেখান থেকেই নিখোঁজ ব্যক্তিদের পোর্টালে তথ্য আপলোড এবং ই-মেল করার কাজ হয়। কিন্তু জেলা পুলিশের সঙ্গে তথ্য আদান প্রদানের কাজে এখনও অনলাইন পদ্ধতি সে ভাবে ব্যবহৃত হয় না। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন ব্যবস্থায় এফআইআরের কপি ছাড়াও থানার দৈনিক কাজ নির্দিষ্ট সার্ভারে আপলোড করার কথা। কিন্তু এখনও অনেক পুলিশ কনস্টেবল, অফিসারদের কম্পিউটারের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নেই। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ কার্যকর করতে গেলে বেশি সংখ্যায় কম্পিউটার, উন্নত ইন্টারনেট সংযোগের সঙ্গেই সব পুলিশ কর্মীর কম্পিটউটার প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।
তবে একই সঙ্গে ওই পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘পরিকাঠামোর ঘাটতি কিছুটা রয়েছে এটা ঠিক। তবে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ রাজ্য সরকার পালন করার সিদ্ধান্ত নেবে পুলিশ সে ভাবেই মানবে।’’