যাত্রী নিয়ে চলেছেন সোনা। নিজস্ব চিত্র
কলেজ পাস করে ভেবেছিলেন, চাকরি করবেন। কিন্তু ভাবলেই তো হল না, চাকরি পেতে গেলেও তো কোচিং দরকার। সে সব শুরু হয়েছিল। কিন্তু টাকার অভাবে মাঝপথে কোচিং ছেড়ে দিতে বাধ্য হন সোনা। কিন্তু কপাল না চাপড়ে ভেবে নেন, লড়াইটা অন্য ভাবে চালাতে হবে। সেই মতো আদিবাসী পরিবারের তরুণী এখন টোটো চালান। মহিলাদের স্বনির্ভর হওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা বোঝেন। সে কারণেই রোজগারের এই পথ বেছে নিয়েছেন বলে জানালেন। তবে হ্যাঁ, চাকরির স্বপ্ন এখনও দেখেন। তবে যতক্ষণ সেটা না হচ্ছে, মুষড়ে পড়ার মেয়ে নন বছর ছাব্বিশের সোনা। বললেন, ‘‘লোকে কী বলবে ভেবে থেমে থাকলে চলবে না। মহিলারা চেষ্টা করলে সবই পারেন।’’ বনগাঁর বোঁচাখালি সর্দারপাড়ায় বাড়ি সোনার। বছর ছ’য়েক আগে দীনবন্ধু কলেজ থেকে কলা বিভাগে স্নাতক হয়েছেন। বাবা-মা ও তিন বোন তাঁরা। সোনা ছোট। বড়বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তাঁর দুই ছেলেমেয়ে আবার সোনাদের পরিবারেই থাকে। সামান্য জমিজমা আছে। বাবা জান সর্দারের বয়স হয়েছে, অসুস্থ।
প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত কৃষ্ণনগরের একটি বোর্ডিং স্কুলে থেকে পড়াশোনা করেছেন সোনা। তারপরে পড়েছেন বনগাঁর কলমবাগান এলাকায় একটি গির্জার স্কুলে। পাকা একতলা বাড়ি সোনাদের। সংসার চালাতে তাঁর মামা আর্থিক সাহায্য করেন। সোনাকে পরিবারের হাল ধরতে হয়েছে অনেকটাই। সোনার মামা টোটো কিনেছিলেন। মামা এখন অন্য কাজ করেন। তাঁরই টোটো চালাচ্ছেন সোনা। সোনার টোটোতে মহিলারাই বেশি ওঠেন। তাঁরা মহিলা চালক দেখে ভরসা পান বলেই সোনার ধারণা। প্রথম দিকে পুরুষ যাত্রীরা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতেন। এখন অনেকেই ওঠেন। এখনও কোনও টোটো ইউনিয়নের সদস্য হননি বলে জানালেন সোনা। তবে কেউ তাঁকে রাস্তায় গাড়ি চালাতে বাধা দেয় না। বরং অনেকেই উৎসাহ দেন বলে তরুণীর অভিজ্ঞতা।
সোনা বাইক চালাতে পারেন। সুযোগ পেলে চার চাকা গাড়ি চালানো শেখার ইচ্ছে আছে। এ তল্লাটে আদিবাসী সমাজের কোনও মহিলাকে আগে কোনও দিন টোটো চালাতে দেখেননি বাসিন্দারা। স্থানীয় বাসিন্দা তথা গাঁড়াপোতা উচ্চবিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতির সভাপতি নন্দদুলাল বসু বলেন, ‘‘নিজের পায়ে দাঁড়াতে সোনা টোটো চালাচ্ছেন। এই এলাকায় এটা সত্যিই দৃষ্টান্ত। সোনা যদি নিজে টোটো কিনতে চান, আমরা সব রকমের সাহায্য করব।’’ আর সোনা চান, তাঁকে দেখে আদিবাসী সমাজের মেয়েরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে এগিয়ে আসুক।