দুয়ারে সরকারের শিবিরে ভিড়। মঙ্গলবার পূর্ব বারাসত স্কুলের মাঠে। নিজস্ব চিত্র।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জুড়ে ফের বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। চলতি মাসের গোড়ার দিকে জেলায় অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ছিল ছ’শোর কাছাকাছি। কিন্তু গত কয়েকদিনে সংক্রমণ বাড়ায় এখন জেলায় অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা প্রায় আটশো ছুঁই ছুঁই। পরিস্থিতি রুখতে ইতিমধ্যেই বহু এলাকায় কন্টেনমেন্ট জ়োন ঘোষণা করা হয়েছে। কড়া বিধিও জারি করেছে প্রশাসন।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে এক সময়ে বেশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল এই জেলা। মে মাস নাগাদ জেলায় দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। সে সময়ে বেশ কয়েক দিন ধরে অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ছিল আট হাজারেরও বেশি। তবে ধীরে ধীরে জেলায় করোনার প্রকোপ অনেকটাই কমে।
জুলাইয়ের শেষ দিকে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা নেমে আসে পঞ্চাশের নীচে। ১ অগস্ট জেলায় অ্যাক্টিভ করোনা রোগী ছিলেন ৬৬২ জন। ৯ অগস্ট সেই সংখ্যাটা কমে দাঁড়ায় ৬২১-এ।
তবে তারপর থেকেই ক্রমশ বদলাতে শুরু করেছে ছবিটা। ১৫ অগস্ট স্বাধীনতা দিবসের দিন জেলায় অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ৭০০ পেরিয়ে যায়। সেখান থেকে বাড়তে বাড়তে ২২ অগস্ট জেলায় অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৮৮, যা গত দু’মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। জেলার একাধিক ব্লকে চলতি মাসের গোড়ায় অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা শূন্য হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু গত তিন সপ্তাহে রোগী বেড়েছে।
গোসাবা ব্লকে অগস্টের শুরুতে একজনও করোনা রোগী ছিলেন না। কিন্তু মঙ্গলবার সেখানে অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৭। সোমবারই গোসাবার বিভিন্ন এলাকায় কন্টেনমেন্ট জ়োন ঘোষণা করা হয়েছে। কাকদ্বীপ ও ডায়মন্ড হারবার মহকুমার বেশ কিছু এলাকাকেও কন্টেনমেন্ট জ়োন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সংক্রমণ রুখতে এই সব এলাকায় কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
গোসাবা ব্লক প্রশাসনের তরফে বেশ কয়েকটি বাজার তিনদিনের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গোসাবার প্রবেশপথ, গদখালি খেয়াঘাটে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু হয়েছে। গদখালি খেয়াঘাট, বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পুলিশি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। চলছে মাইকে প্রচার।
খেয়া পারাপারে যাত্রীসংখ্যা নির্ধারণ করে দিয়েছে ব্লক প্রশাসন। ভুটভুটিতে ৩০ জন ও ভেসেলে ৫০ জনের বেশি যাত্রী তোলা যাবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাত্রীদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তৃতীয় ঢেউ নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন মানুষ। দক্ষিণ ২৪ পরগনা স্বাস্থ্য জেলার অতিরিক্ত স্বাস্থ্য আধিকারিক ইন্দ্রনীল মিত্র অবশ্য বলেন, “তৃতীয় ঢেউ এসে পড়েছে, এটা এখনই বলা যাবে না। তবে এটা তৃতীয় ঢেউয়ের ইঙ্গিত। আমরা সেই মতো প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছি।”
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, পরিস্থিতি মোকাবিলায় করোনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। যে সব এলাকায় সংক্রমণ বেশি, সেখানে স্বাস্থ্যকর্মীরা বাসিন্দাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছেন।
সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রুখতে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি জেলা জুড়ে টিকাকরণের পরিমাণও বাড়ানো হচ্ছে। দ্রুত আরও বেশি মানুষের টিকাকরণ শুরু হবে বলে জানান জেলা স্বাস্থ্য দফতরের
এক কর্তা।