উদ্বোধন: নতুন প্রেক্ষাগৃহ। শনিবার ছবিটি তুলেছেন সুজিত দুয়ারি
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরে অবশেষে স্বপ্নপূরণ।
গোবরডাঙাবাসীর দাবি মেনে তৈরি হল আধুনিক প্রেক্ষাগৃহ। শনিবার উদ্বোধন করেন প্রাক্তন পুরপ্রধান অতুলচন্দ্র দাস। প্রেক্ষাগৃহের নাম দেওয়া হয়েছে ‘প্রমথনাথ বসু স্মৃতি গোরবডাঙা পৌর টাউন হল।’
গোবরডাঙায় নাট্যচর্চার নামডাক আছে। এখানকার নাট্যচর্চার ইতিহাস প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো। পেশাদার অপেশাদার অনেক নাট্যদল রয়েছে এখানে। রাজ্য তো বটেই গোটা দেশেই এখানকার নাট্যদলের নাটকের পরিচিতি ও খ্যাতি রয়েছে।
নাট্যপ্রেমী মানুষের দীর্ঘদিনের চাহিদা ছিল, গোবরডাঙায় নাট্যচর্চার স্থায়ী মঞ্চ হোক। ওই দাবিতে এলাকার নাট্যকর্মী, সংস্কৃতিকর্মী, সাধারণ মানুষ দীর্ঘ আন্দোলনও করেছিলেন। শহরবাসীর দাবি মেনে ২০১৪ সালের অক্টোবর মাস থেকে গোবরডাঙা পুরসভা প্রেক্ষাগৃহ তৈরির কাজ শুরু করেছিল। এত দিনে কাজ শেষ না হওয়ায় হতাশা বাড়ছিল শহরের মানুষের।
পুরপ্রধান সুভাষ দত্ত জানিয়েছেন, প্রেক্ষাগৃহটি গোবরডাঙার নাট্যকর্মী, সাংস্কৃতিক কর্মী-সহ সাধারণ মানুষের অনেক দিনের দাবি ছিল। সেই দাবি পূরণ করতে পেরে ভাল লাগছে। কাজ শেষ হতে দেরি হওয়ার কারণ সম্পর্কে সুভাষ বলেন, ‘‘প্রেক্ষাগৃহ তৈরি করতে প্রায় ৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। টাকার অভাবে কাজ শেষ করতে দেরি হল।’’
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রেক্ষাগৃহে থাকছে ৫০০ আসন। পরবর্তীতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হবে। পুরসভার নিজস্ব তহবিল ছাড়াও সাংসদ, বিধায়ক ও সাধারণ মানুষের দানের টাকায় প্রেক্ষাগৃহটি তৈরি হয়েছে।
নাট্য পরিচালক আশিস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই প্রেক্ষাগৃহ আমাদের দীর্ঘ দিনের চাহিদা ছিল। এটি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা জলঘোলা হয়। অবশেষে প্রেক্ষাগৃহ তৈরি হওয়ায় গোবরডাঙাবাসী হিসাবে আমরা গর্ব অনুভব করছি। পুরপ্রধানকে ধন্যবাদ।’’ নাট্য পরিচালক প্রদীপ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা আধুনিক নাট্যমঞ্চ পেলাম। আমরা খুব খুশি।’’ নাট্যপ্রেমীরা মনে করছেন, গোবরডাঙার মানুষের নাটক দেখার দীর্ঘদিনের অভ্যাস হারিয়ে যেতে বসেছিল। প্রেক্ষাগৃহ চালু হওয়ায় নাটকের ভাল দর্শক তৈরি হতে সুবিধা হবে।
প্রেক্ষাগৃহ তৈরি নিয়ে কম টালবাহানা হয়নি। ২০১০ সালে এপ্রিল মাসে বাম পরিচালিত পুরবোর্ডের তরফে উদ্বোধন হলে ফের সেই অভ্যাস ফিরে আসবে।তৈরির উদ্যোগ করা হয়েছিল। তৎকালীন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য প্রেক্ষাগৃহের শিলান্যাস করেছিলেন। কাজও শুরু হয়। ওই বছরের পুরভোটে বামেরা হেরে যায়। তারপরে কাজ থমকে যায়।
২০১১ সালে রাজ্যে রাজনৈতিক পালা বদল ঘটে। ২০১২ সালে মার্চে তৃণমূলের তৎকালীন রাজ্যসভার সাংসদ মুকুল রায়কে দিয়ে ফের পুরসভার তরফে প্রেক্ষাগৃহের শিলান্যাস করানো হয়। তারপরেও কাজ এগোয়নি। ক্ষোভ জমতে শুরু করেছিল শহরবাসীর মধ্যে। শেষবার ২০১৪ সালের অক্টোবর মাস থেকে কাজ শুরু হয়। ওই কাজই সম্প্রতি শেষ হয়েছে। প্রাক্তন পুরপ্রধান সিপিএমের বাপি ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমরা প্রেক্ষাগৃহের কাজ শুরু করেছিলাম। কাজ ২০১২ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। অনেকদিন আগেই গোবরডাঙার মানুষের প্রেক্ষাগৃহ পাওয়ার কথা ছিল।’’
পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০০ সালের বন্যায় পুরনো জরাজীর্ণ গোবরডাঙা টাউন হলটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার আগে টাউন হলেই নাট্য চর্চা ও নাট্য উৎসব হত। পুরনো টাউন হলের জায়গাতেই নতুন প্রেক্ষাগৃহ তৈরি হয়েছে।