প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
প্রয়াগরাজের কাছে কৌশাম্বীতে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অভিযোগ তুলেছিলেন, ১৯৫৪ সালে জওহরলাল নেহরুর কুম্ভমেলায় গিয়েছিলেন। তার ফলে অব্যবস্থার জেরে পদপিষ্ট হয়ে হাজারখানেক মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। সেই খবর পাঁচ-ছয় দশক ধরে চেপে রাখা হয়েছিল, যাতে নেহরুর ভাবমূর্তিতে দাগ না পড়ে।
আজ খোদ মোদীর সরকার এবং উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ সরকারের বিরুদ্ধে কুম্ভমেলায় পদপিষ্ট হয়ে মৃতদের আসল সংখ্যা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ তুললেন বিরোধীরা। শনিবার থেকে শুরু হতে চলা বাজেট অধিবেশনের আগে আজ সর্বদলীয় বৈঠকে বিরোধীরা কুম্ভের দুর্ঘটনা নিয়ে সংসদে আলোচনার দাবি জানিয়েছেন। ফলে যোগী সরকারের সঙ্গে মোদী সরকারও তিরের মুখে। বিরোধীদের অভিযোগ, ভিভিআইপি-দের বাড়তি সুবিধা দিতে গিয়ে সাধারণ মানুষকে আটকানোর ফলেই হুড়োহুড়িতে এই ঘটনা ঘটেছে। এখন শাসকের ভাবমূর্তি রক্ষায় মৃত্যুর সংখ্যা লুকোনো হচ্ছে।
আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি, দিল্লির ভোটগ্রহণের দিনে, মাঘ মাসের অষ্টমী তিথিতে কুম্ভে স্নান করার কথা মোদীর। কিন্তু গত কালের দুর্ঘটনার পরে প্রধানমন্ত্রী এখন আর কুম্ভে যান কি না, তা রাজনৈতিক শিবির দেখতে চাইছে। কারণ, মোদীর সফর ঘিরে নতুন করে কুম্ভে ভিভিআইপি-র জন্য ব্যবস্থাপনার দিকে প্রশাসনের নজর সরে যাবে। যোগী সরকার আজ কুম্ভের যাবতীয় ভিভিআইপি পাস বাতিল করেছে। বিজেপি সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর প্রয়াগরাজ সফর বাতিল হয়নি।
প্রায় ১৫ ঘণ্টা ধরে মুখে কুলুপ আঁটার পরে গত সন্ধ্যায় যোগী প্রশাসন জানায়, পদপিষ্ট হয়ে মৃতের সংখ্যা ৩০। আজ কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টির নেতারা সর্বদলীয় বৈঠকে এ নিয়ে অভিযোগ তোলেন। এসপি নেতা রামগোপাল যাদব বলেন, ‘‘মৃতের প্রকৃত সংখ্যা বলা হচ্ছে না। তাঁদের নাম-ঠিকানা প্রকাশ করা হচ্ছে না। পরিবারের লোকেরা বিভ্রান্ত।’’ রামগোপালের অভিযোগ, বেদ-পুরাণে ‘মহাকুম্ভ’ বলে কিছু নেই। ‘অমৃত স্নান’ শব্দটিও প্রথম শোনা যাচ্ছে। অথচ ‘মহাকুম্ভ’, ‘অমৃতস্নান’ বলে প্রচার হচ্ছে। তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘ভিড়ের মোকাবিলা কী ভাবে করতে হয়, তা গঙ্গাসাগর মেলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার করে দেখিয়েছে।’’ কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরা বলেন, ‘‘যাঁরা কুম্ভে কোটি কোটি পুণ্যার্থীর হিসাব দিচ্ছিলেন, তাঁরা হতাহতদের সংখ্যা ঠিকঠাক বলতে পারছেন না! প্রজার জীবনের থেকে রাজার ভাবমূর্তি বেশি গুরুত্বপূর্ণ? এমন রাজাকে ধিক্কার, যিনি রাজধর্ম পালনে বার বার গাফিলতি করেন।’’