প্রতিবাদ-মিছিল: সিপিএমের মিছিলে পা মেলান কংগ্রেস নেতা-কর্মীরাও। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
বামেদের মিছিলে বনগাঁয় হাঁটলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। কয়েক হাজার বাম নেতা-কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে হাঁটেন কংগ্রেসের কর্মীরাও। লাল পতাকায় শহর ছেয়ে গিয়েছিল। তরুণ প্রজন্মকেও দেখা গিয়েছে বামেদের পতাকা হাতে। ছিলেন বহু ‘বসে যাওয়া’ বাম কর্মী।
শহরের বুকে বামেদের মিছিলে এমন জনসমাগম শেষ কবে হয়েছিল মনে করতে পারছেন না অনেকেই। পুরসভা ভোটের আগে এই মিছিল কর্মী-সমর্থকদের মনবল বাড়াতে সাহায্য করবে বলে মনে করছেন বাম নেতৃত্বের একাংশ। বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক পঙ্কজ ঘোষ বলেন, ‘‘সাম্প্রতিক কালে বনগাঁ শহরে এত বড় মিছিল আমি দেখিনি।’’
সোমবার বিকেল বনগাঁ শহরে এসে বিমান প্রথমে সভা করেন টাউন হল ময়দানে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সিপিআইয়ের রাজ্য নেতা স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়, ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা হরিপদ বিশ্বাস-সহ বাম নেতৃত্ব। বনগাঁয় ডিটেশন ক্যাম্প তৈরির পরিকল্পনার প্রতিবাদ, এনআরসি ও নাগরিকত্ব আইন বাতিলের দাবিতে এ দিন সভা ডাকা হয়েছিল। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘তৃণমূল একদিকে এনআরসি ও নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। মুখ্যমন্ত্রী আজ কলকাতায় মিছিল করেছেন। অথচ ডিটেশন ক্যাম্প তৈরির জন্য তাঁরাই জমি দেবেন বলছেন।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এ দিকে বিরোধিতা করছে, অন্য দিকে জমির ব্যবস্থা করছে। এই দ্বিচারিতার বিরুদ্ধেই আমাদের প্রতিবাদ।’’
কোন জাদুতে বসে যাওয়া বাম কর্মী-সমর্থক হাঁটলেন এ দিনের মিছিলে? তরুণ প্রজন্মের ভিড় কী ভাবে টানলেন বামেরা?
বাম নেতৃত্বের কারও কারও মতে, বেশ কিছু দিন ধরে মিছিল নিয়ে গ্রামে গ্রামে প্রচার চলেছে। এনআরসি, নাগরিকত্ব আইন নিয়েও মানুষ বিজেপির উপরে তিতিবিরক্ত। তৃণমূলের অবস্থানেও তাঁরা খুশি নন। বামেদের প্রতি এ কারণেই অনেকের ভরসা ফিরছে বলে বাম নেতৃত্বের অনেকের দাবি। বিজেপির প্রতিও একই কারণে আস্থা হারাচ্ছে তরুণ প্রজন্ম, মনে করেন ওই বাম নেতারা। তা ছাড়া, এর আগে এমন মিছিল বনগাঁয় কখনও করেননি বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান। সে জন্যও বাড়তি উৎসাহ ছিল বলে মনে করছেন নেতারা।
এ দিন দলীয় কার্যালয়ে বসে বিমান সাংবাদিক সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি নাগরিকত্ব আইন প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এই আইন ভারতের সংবিধানের পরিপন্থী। গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মান্য করা হয়নি। রাজ্য সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকলেও তা করে নেওয়ার কৌশলে এই আইন পাস করানো হয়েছে। এই আইন ভারতের জনগণের ইচ্ছা-ভাবনাচিন্তার পক্ষে নয়। সংবিধানের পক্ষেও নয়।’’ রাষ্ট্রসঙ্ঘ এই আইনের উপরে নজর রাখছে এবং তারা এই আইনকে ভাল বলে মনে করছেন বলেও মন্তব্য করেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান।
ডিটেনশন ক্যাম্পের জন্য বনগাঁয় জমি দেখা হয়েছিল বলে দাবি করে বিমান বলেন, ‘‘কেন্দ্র নাকি বলেছে, বাংলাদেশ সীমান্তের এত কাছে বলে তা করা যাবে না। রাজ্য সরকার জমি দেখার কাজ করছে।’’ যদি জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘বনগাঁয় ডিটেনশন ক্যাম্প হবে বলে তাঁদের কাছে কোনও খবর নেই।’’
নাগরিকত্ব আইন বাতিলের দাবিতে আন্দোলনের নামে হিংসা, অগ্নিসংযোগের ঘটনার প্রসঙ্গে বিমান বলেন, ‘‘এই আন্দোলন বিপথগামী করা উচিত নয়। মানুষের ঐক্য গড়ে তোলা উচিত। শান্তিপূর্ণ ভাবে মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় আইনের প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়া উচিত।’’
এ দিন সভামঞ্চে হাজির ছিলেন বনগাঁ শহর কংগ্রেসের সভাপতি মহিবুল সিদ্দিকি। তিনি বলেন, ‘‘ আমাদের সকলকে এক সঙ্গে এনআরসি ও নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আগে খাদ্যবস্ত্র বাসস্থানের ব্যবস্থা, তারপরে এনআরসি।’’
সভা শেষে টাউনহল এলাকা থেকে মহা মিছিল শুরু হয়। মতিগঞ্জ বাটারমোড় হয়ে মিছিল শেষ হয় মহকুমাশাসকের দফতরের কাছে। মহকুমাশাসকের দফতরে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।