উদ্ধার: মিনাখাঁয় মিলেছে এই সব অস্ত্র, গুলি। পাশের ছবিতে, ভাঙড়ে উদ্ধার হওয়া এই অস্ত্র ঘিরেই বিতর্ক। নিজস্ব চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে গত কয়েক দিন ধরেই দুই ২৪ পরগনায় পুলিশি অভিযান জোরদার হয়েছে। কিছু অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে। কিছু ধরপাকড়ও চলছে। তবে সবই যে হিমশৈলের চূড়া মাত্র, তা নিয়ে কটাক্ষ অব্যাহত বিরোধীদের। সাধারণ মানুষেরও প্রশ্ন, এত দিন ধরে এত অস্ত্র জমা হল, পুলিশ কি টেরই পেল না? নাকি সরকারের সর্বোচ্চ স্তরের নির্দেশ না পেলে নড়ে বসত না তারা!
এরই মধ্যে বাসন্তীর বিধায়ক শ্যামল মণ্ডলকে হাতজোড় করে ভিডিয়ো বার্তায় বলতে শোনা গিয়েছে (সে ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার), যাঁদের হাতে বেআইনি অস্ত্র আছে, তাঁরা নিজেরাই তা পুলিশের কাছে গিয়ে জমা দিন। এর মধ্যে উস্তির গ্রামে বল ভেবে বোমা নিয়ে খেলতে গিয়ে অল্পবিস্তর জখম হয়েছে এক চার বছরের শিশু। বিরোধীদের বক্তব্য, অস্ত্র কার কাছে কী আছে, সবই জানত পুলিশ। কিন্তু শাসক দলের সবুজ সঙ্কেত না পেলে তা উদ্ধার করার সাহস নেই পুলিশের। দুই জেলার পুলিশ কর্তাদের অবশ্য বক্তব্য, অস্ত্র উদ্ধার সারা বছরই হয়। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে সেই কাজে গতি এসেছে মাত্র।
তবে ভাঙড়ের গ্রামে যে অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ, তা নিয়েও কটাক্ষের পরিসর তৈরি হয়েছে। ভাঙাচোরা একটি পাইপগান উদ্ধার করে পুলিশ কী প্রমাণ করতে চাইছে, সে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। ওই অস্ত্র দিয়ে আদৌ গুলি বেরোয় তো, প্রশ্ন তুলে চলছে হাসি-মস্করা।
শনিবার রাতে আগ্নেয়াস্ত্র-সহ কাশীপুর পূর্ব কাঁঠালিয়ার খালপাড় এলাকা থেকে ধরা পড়ে শেখ শাহজাহান মোল্লা ওরফে বাচ্চা। তার কাছ থেকেই জরাজীর্ণ পাইপগান ও এক রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। নানা অপরাধমূলক কাজকর্মের অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। হেরোইনের কারবার চালাত বলেও অভিযোগ। রাতে জীবনতলা থানার চুনাঘাটা এলাকা থেকে আগ্নেয়াস্ত্র-সহ এক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতের নাম আবু হোসেন শেখ। তার কাছ থেকে একটি পাইপগান ও দু’টি গুলি উদ্ধার হয়েছে। তার বিরুদ্ধে চুরি-ডাকাতি-সহ একাধিক অভিযোগ আছে। ভাঙড় থানার নাওরা আরাকপুর এলাকা থেকে আগ্নেয়াস্ত্র-সহ ইউসুফ গাজি নামে এক দুষ্কৃতীকে ধরেছে পুলিশ। উদ্ধার হয়েছে একটি পাইপগান ও এক রাউন্ড গুলি। ভাঙড়ের এক পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘নানা খবরের ভিত্তিতে অভিযান চলছে। পুলিশ সব রকম ভাবে অস্ত্র উদ্ধারের চেষ্টা করছে।’’
শনিবার রাতে ডাকাতি করতে আসা আগ্নেয়াস্ত্র-সহ দুই দুষ্কৃতীকে মিনাখাঁ থানার রাসখোলার মাঠে বাজার এলাকা থেকে ধরা হয়েছে। ধৃতদের নাম আব্বাস গাজি ও জিয়ারুল গাজি। তাদের কাছ থেকে ৩টি ওয়ানশটার, ১টি রিভলভার এবং ৯ রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়েছে। দু’টি বাইক আটক করা হয়েছে।
শুক্রবার রাতেই হাসনাবাদের হাবাসপুর গ্রামের পালপাড়া থেকে এক রাউন্ড গুলি এবং একটি বন্দুক-সহ আল আমিন মণ্ডলকে পুলিশ গ্রেফতার করে। বসিরহাট থানার গুলাইচণ্ডী গ্রাম থেকে ধরা পড়েছে ফিরোজ গাজি। ধৃতের কাছ থেকে একটি ওয়ানশটার এবং এক রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়েছে।
এক রাউন্ড গুলি ও বন্দুক-সহ গ্রেফতার হয়েছে আলামিন মণ্ডল নামে এক দুষ্কৃতীও। হাসনাবাদ থানার পুলিশ হবাসপুর পালপাড়া মোড় থেকে শনিবার রাতে তাকে ধরে।
গুলি-ভর্তি পিস্তল-সহ গোবরডাঙার নকপুল এলাকা থেকে গ্রেফতার হয়েছে মিঠুন হাজরা নামে গোবরডাঙার বেড়গুমের বাসিন্দা এক দু্ষ্কৃতী। একটি গুলি-ভর্তি পিস্তল পাওয়া গিয়েছে। ধৃতের বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিক অসামাজিক কাজকর্মের অভিযোগ ছিল।
শনিবার রাতে অশোকনগরের হরিপুর মাঠের কাছ থেকে আরও এক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়। তার নাম জিয়াউল মণ্ডল।
শনিবার রাতে সুন্দরবন পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র-সহ দুই দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করেছে। তাদের ধরা হয় হারউড পয়েন্ট কোস্টাল থানার নতুন রাস্তা এলাকা থেকে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নাম শ্রীনিবাস দাস ও জীবন দাস। বাড়ি কাকদ্বীপে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে দেশি বন্দুক ও দু’রাউন্ড গুলি।
শনিবার রাতেই কাকদ্বীপ থানার বামানগর এলাকায় এক ব্যক্তিকে সন্দেহজক ভাবে ঘোরাঘুরি করতে দেখে কাকদ্বীপ থানায় খবর দেওয়া হয়। পুলিশ প্রদীপ দলুই নামে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি দেশি পিস্তল ও দু’রাউন্ড কার্তুজ।
শনিবার রাতে অস্ত্র-সহ এক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করেছে কুলতলি থানার পুলিশ। ধৃতের নাম আজিজুল লস্কর। বাড়ি কুলতলির শিকারিপাড়া এলাকার দক্ষিণ দুর্গাপুরে। তার কাছ থেকে গুলি-ভর্তি একটি পাইপগান উদ্ধার হয়েছে। অন্য একটি মামলায় পুলিশ কিছুদিন ধরেই তাকে খুঁজছিল।
বকুলতলা থানা এলাকা থেকেও এদিন অস্ত্র-সহ এক জন ধরা পড়েছে। ধৃতের নাম আলমগির মোল্লা। বাড়ি বকুলতলা থানার পূর্ব যৌথিয়ায়। তার কাছ থেকে একটি দেশি বন্দুক ও এক রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়েছে। জয়নগর থানার পুলিশও এ দিন একটি পাইপগান উদ্ধার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, হেফাজতে থাকা জিয়াউর রহমান মোল্লা নামে এক দুষ্কৃতীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে অস্ত্রের সন্ধান মেলে। অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশের লাগাতার অভিযানে সাফল্য কতটা, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা।