বিশ্বরূপ ও মৌসুমী। পারিবারিক অ্যালবাম থেকে পাওয়া ছবি।
ঘরের মধ্যে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না জড়ানো অবস্থায় এক গৃহবধূর ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করল পুলিশ। বারাসত পুরসভার চার নম্বর ওয়ার্ডের পান্না ঝিল এলাকার ঘটনা। মঙ্গলবার ভোরে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ফোনে খবর পেয়ে বারাসত থানার পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বারাসত জেলা হাসপাতালে পাঠায়।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃত গৃহবধূর নাম মৌসুমী দাস (১৯)। ঘটনার পরে বধূর মা মঞ্জুদেবী বারাসত থানায় মেয়ের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ননদের নামে অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর দাবি, মেয়ের মৃত্যুর পিছনে তাঁরাই দায়ী। পুলিশ এ দিনই আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে শ্বশুর বঙ্কিম চক্রবর্তী, শাশুড়ি বিন্দু চক্রবর্তী ও ননদ বাণী চক্রবর্তীকে গ্রেফতার করেছে। তরুণীর স্বামী বিশ্বরূপ পলাতক. তাঁর খোঁজে তল্লাশি চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বারাসতের পান্না ঝিল এলাকার বাসিন্দা বিশ্বরূপের সঙ্গে ন’ মাস আগে বিয়ে হয় মৌসুমীর। পরিবার সূত্রের খবর, বিয়েতে বিশ্বরূপের পরিবার কোনও পণ নেয়নি। তাঁরা জানিয়েছিলেন, তাঁদের কেবল মেয়েকে চাই।
অভিযোগ, বিয়ের কিছু দিন পর থেকে মৌসুমীদেবীর শ্বশুরবাড়ির লোকজনেরা তাঁর কাছে টাকা দাবি করতে থাকে। মৌসুমীদেবীকে বলা হয় বাপের বাড়ি থেকে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে আসতে।
মৌসুমীদেবীর বাবা সমীর দাস পেশায় দিনমজুর। এ দিন তিনি জানান. তাঁদের পক্ষে ওই টাকা দেওয়া সম্ভব হয়নি। মৌসুমীদেবী শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের কাছে তাঁরা জানতে চান, বিয়ের সময় পণের দাবি ছিল না। তা হলে এখন কেন টাকা চাওয়া হচ্ছে। তাকে জানানো হয়, তখন টাকার প্রয়োজন ছিল না, তবে এখন প্রয়োজন। অভিযোগ, এর পর থেকে শ্বশুরবাড়িতে মৌসুমীদেবীর উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বেড়ে যায়। মঞ্জুদেবী বলেন, ‘মাসখানেক আগে মেয়ে আমাকে বলেছিল, ওই টাকা যে ভাবে হোক জোগাড় করতে। টাকা না দিলে ওরা মেয়েকে মেরে ফেলবে। মেয়েকে বুঝিয়েছিলাম ‘‘কষ্ট করে থাক, সব ঠিক হয়ে যাবে।’’
মঙ্গলবার ভোর ৬টা নাগাদ মঞ্জুদেবীরা জানতে পারেন, মেয়ে মারা গিয়েছে। হাসপাতালের মর্গে এসে তাঁরা মেয়েকে দেখেন। মঞ্জুদেবীর অভিযোগ, ‘‘মেয়ের মৃত্যুর পিছনে শ্বশুর বাড়ির লোকজন দায়ী। ওদের কঠোর শাস্তি চাই।’’ তাঁর আক্ষেপ, সে দিন মেয়ের কথা শুনে মেয়েকে নিজের কাছে রাখতেন তাহলে হয়তো এমন দিন দেখতে হত না।