অবহেলা: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় (বাঁ দিকে) ও দীনবন্ধু মিত্রের বসত বাড়ি। ফাইল চিত্র Sourced by the ABP
বছর কয়েক আগে হেরিটেজ ঘোষণা করা হয়েছিল নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্র ও সাহিত্যিক বিভূতিভষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি। কিন্তু অভিযোগ, এখনও অযত্নে পড়ে রয়েছে বাড়ি দু’টি।
সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙা শহরের একাধিক স্থাপত্য ‘হেরিটেজ’ ঘোষণা করেছে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন। শহরবাসীর আশা, এ বার স্থাপত্যগুলি সংস্কার ও সংরক্ষণ হবে। এলাকায় পর্যটন শিল্পে গতি আসবে। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি যে আলাদা, তার প্রমাণ গোপালনগরে নীলদর্পণ নাটকের স্রষ্টা দীনবন্ধুমিত্র এবং কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বসতবাড়ি দু’টি।
গোপালনগরের চৌবেড়িয়ায় দীনবন্ধু মিত্রের বাড়ি। সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা গেল, ধ্বংসস্তূপের চেহারা নিয়েছে বাড়ি। ইটের পাঁজর বেরিয়ে রয়েছে। দেওয়াল বেয়ে ঝুলছে বট-অশ্বত্থের সারি। দরজা-জানলা তো কবেই উধাও হয়েছে, মাথার উপরে ছাদটুকু নেই। অথচ, এক সময়েকবি ঈশ্বর গুপ্ত, সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতো মানুষের পা পড়েছিল এখানে।
বাম আমলে ২০১০ সালে বাড়িটিকে হেরিটেজ ঘোষণা হয়েছিল। ওই বছর ২৬ এপ্রিল বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল রাজ্য হেরিটেজ কমিশন। তবে অভিযোগ, ঘোষণা করা ছাড়া আর কোনও কাজ হয়নি। এলাকার মানুষ চান, বাড়িটি সংস্কার করে একটি সংগ্রহশালা তৈরি করুক রাজ্য সরকার। দীনবন্ধু মিত্রের বংশধর সুশীল মিত্র বলেন, “বাড়িটি হেরিটেজ ঘোষণা ছাড়া আর কোনও কাজ হয়নি। কয়েক বছর আগে সরকারের পক্ষ থেকে এসে বাড়িটি মাপজোক করা হয়েছে। আমরা চাই সরকার বাড়িটি সংস্কার করে দীনবন্ধু মিত্রের সংগ্রহশালা তৈরি করুক।”
স্থানীয় বিধায়ক বিজেপির স্বপন মজুমদার বলেন, “বাম আমলে রাজ্যে শিল্প, কলকারখানা, স্থাপত্য ধ্বংস হয়েছে। তৃণমূলের আমলে শিলান্যাস এবং মাপজোক হয়েছে। কোনও কাজ হয়নি। দীনবন্ধু মিত্রের বাড়িটি সংস্কার কী ভাবে করা যায় তা নিয়ে পরিকল্পনা করছি।”
গোপালনগরের শ্রীপল্লি বারাকপুরে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িটিও সংরক্ষণের অভাবে আজ জরাজীর্ণ। এই বাড়িটিও ২০১০ সালে হেরিটেজ ঘোষণা করা হয়েছিল। পুরনো জরাজীর্ণ বাড়িটি কয়েক বছর আগে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সংস্কার করা হয়। বাড়িটির আদল একই রেখে নীল-সাদা রং করা হয়েছিল। কিন্তু উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেই বাড়িটির দেওয়ালেই এখন শ্যাওলা জমেছে। ছাদে জমেছে শুকনো পাতার স্তূপ। দেওয়ালে ইটের টুকরো দিয়ে লেখা অশ্রাব্য কথাবার্তা, আঁকা অশ্লীল চিহ্ন। প্রতিটি কোণায় জমে অবহেলার ছাপ।
বাইরে থেকে বহু মানুষ এই বাড়ি দেখতে এলেও এখানে সাহিত্যিকের কোনও স্মৃতি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়নি। এলাকার মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবি, সরকার বাড়িটি অধিগ্রহণ করুক এবং এখানে বিভূতিভূষণের একটি সংগ্রহশালা তৈরি করা হোক। যাতে দূরদূরান্ত থেকে সাহিত্য অনুরাগীরা এসে সাহিত্যিক সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারেন। গোপালনগর বিভূতিভূষণ মেমোরিয়াল পাবলিক লাইব্রেরির সম্পাদক দীপক চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বিভূতিভূষণ এখানকার মানুষ ছিলেন বলে আমরা গর্বিত। কিন্তু তাঁর স্মৃতি সংরক্ষণের আরও সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন। লাইব্রেরিতে সাহিত্যিকের জুতো, চশমার বাক্স, ব্যবহৃত হুঁকো, সোয়েটার, পাঞ্জাবি এবং কিছু চিঠিপত্র আছে। আমরা চাই বিভূতিবাবুর বাড়িটি তাঁর সংগ্রহশালা হিসেবে গড়ে উঠুক।”
দীনবন্ধু ও বিভূতিভূষণের বাড়ি নিয়ে বনগাঁর প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক পঙ্কজ ঘোষ বলেন, “তৃণমূল স্থাপত্যের উন্নতি করতে চায় না। তারা মানুষকে ভিখারি বানাতে চাই। ফলে বাড়ি দু’টি অনাদরে পড়ে থাকাটাই স্বাভাবিক ঘটনা।”
তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “দীনবন্ধু ও বিভূতিভূষণের বাড়িদু’টি যাতে সংস্কার করে সংগ্রহশালা তৈরি করা যায়, সে বিষয়ে আগেই পদক্ষেপ করা হয়েছিল। পরিবারের লোকজনের সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। বিষয়টি আবারও পর্যটন দফতর এবং হেরিটেজ কমিশনকে জানাব।”